শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট মহামারিতে পুঁজিবাজারেও তারল্য সংকট তৈরী হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার ফলে বাজারের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। প্রস্তাবিত বাজেট ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার ফলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

কারন বর্তমান বৈশ্বিক মহামারির কারণে লেনদেনে খড়া দেখা দিয়েছে। ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করার পরও সূচকের পতন হচ্ছে। বাজারে আস্থা ও তারল্য সংকট বিরাজ করছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে একদিকে লেনদেন বাড়বে, অন্যদিকে বাজারে আস্থার সঙ্কট কাটবে এবং দেশের অর্থনীতির উন্নতি হবে বলে তারা মনে করেন।

পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ছয়টি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। পদক্ষেপগুলো হচ্ছে: পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়ানো, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পর্যালোচনা, আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানো, পুঁজিবাজারে আস্থা বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বাড়াতে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া। এছাড়া বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করার জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে উৎসে কর সমন্বয় করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট বিকাশের জন্য আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর আলোকে বন্ড লেনদেন মূল্যের উপর উৎসে কর কর্তনের পরিবর্তে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক লেনদেনে নির্ধারিত কমিশনের উপর উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব করছি। এছাড়া বন্ডের সুদ ও বাট্টার উপর উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল করে সুদ ও বাট্টা পরিশোধকালে উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব করছি। এতে পুঁজিবাজারে বন্ডের লেনদেন বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন।

দেশের শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের সিইও মাহবুব হোসেন মজুমদার বলেন, মন্দা পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও উজ্জীবিত করতে সরকার নেওয়া ৬টি স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে একদিকে লেনদেন বাড়বে অন্যদিকে দ্রুত বাজার শক্তিশালী ও গতিশীল হবে। অর্থমন্ত্রী ঘোষিত পদক্ষেপগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন চান তিনি। এছাড়া বন্ড মার্কেট চালু হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সমূহের ব্যাংক লোনের উপর প্রবনতা কমবে। তারা বন্ড মার্কেট থেকে অর্থ উত্তোলনে আগ্রহী হবে। এতে করে প্রাণ ফিরে পাবে পুঁজিবাজার।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএমবিএ) এর সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসে সৃষ্ট মহামারির মধ্যে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ায় পুঁজিবাজার গতিশীল হবে। এতে বিনিয়োগকারীসহ সবাই উপকৃত হবে। পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়ানো ও মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা হলে তারল্য সংকট দূর হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘এবারের বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব হয়েছে। দেশের পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদি সম্প্রসারণ ও গতিশীল করতে পুঁজিবাজারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারের জন্য যেসব পদক্ষেপ দিয়েছেন, তা বাজার স্থিতিশীল করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।’ এ জন্য তিনি সরকার ও অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘমেয়াদী মূলধন সংগ্রহের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো দেশের পুঁজিবাজার। আগামীতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশীদার হিসেবে দেশের পুঁজিবাজারকে সরকার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে নেবে। সরকারের ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যেসব প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এতে বাজারে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি ও জাতীয় অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।

বেসরকারি খাত আরো শক্তিশালী ও বিকশিত হয়ে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি আকৃষ্ট করবে। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ফলে পুঁজিবাজার দ্রুত গতিশীল হবে এবং পুঁজিবাজারর চিত্র দ্রুত পাল্টে যাবে। বিনিয়োগকারীরা বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে তিনি মনে করেন।

বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে যুগান্তকারী ও বাজার বান্ধব বাজেট। এ বাজেট বাস্তবায়ন হলে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের আর্তনাদ প্রত্যাশায় রুপান্তরিত হবে। সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ