শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেছেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বিএমবিএ। এছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএমবিএ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ভবিষ্যতেও বিএমবিএ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী করতে ৮টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেবে বিএমবিএ। শনিবার রাজধানীর বিজয়নগরে হোটেল ৭১ এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে ছায়েদুর রহমান বলেন, সতেচন বিনিয়োগ অর্থনৈতিক উন্নতির প্রধান শর্ত। সচেতন ও সঠিক বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সেই প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগ শিক্ষা প্রসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। সরকারের নীতি নির্ধারণী পক্ষসমূহের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা ও সমন্বয় সাধন করা এবং প্রয়োজনীয় আইনী পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের সুপারিশ করা হবে।

পুঁজিবাজারের সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে সমন্বয় সাপেক্ষে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সমুন্নত রাখা হবে। ভাল উদ্যোক্তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হবে। কেননা ভাল উদ্যোক্তা ব্যতিত পুঁজিবাজার তথা অর্থনৈতিক উন্নতি অসম্ভব।

পুঁজিবাজারের আকার বৃদ্ধিতে গুনগত মান সমৃদ্ধ বৃহৎ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে সমন্বয়ের চেষ্টা করা হবে। পুঁজিবাজারের সার্বিক মূল্যায়নের জন্য সকল অংশীজনের সমন্বয়ে প্রতি ৬ মাসে একটি বৃহৎ সেমিনার করার উদ্যোগ নেয়া হবে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত/প্রচলিত অথচ আমাদের পুঁজিবাজারে অনুপস্থিত সেই সকল বিষয়ে অংশীজনদের সাথে আলোচনা ও সমন্বয় করা এবং প্রয়োজনীয় আইনের জন্য সুপারিশ করা হবে। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সমন্বয়ে বছরে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার করা হবে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের মূল চালিকা শক্তি হলো- হিসাব বিবরণী এবং এর সময় উপযোগী মান উন্নয়নের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। সে আলোকে হিসাব-বিদদের সংগঠন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং ফাইনান্সিয়াল রির্পোটিং কাউন্সিলের (এফআরসি)সাথে আলোচনা করা হবে। তাছাড়া এ বিষয়ে আগামী মার্চে একটি সেমিনার করার পরিকল্পনা আছে।

বিএমবিএ সভাপতি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমাদের পুঁজিবাজার পরিস্থিতি অনুকুল ছিল না। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত থেকে বিশ্লেষনে বুঝা যায় বাজারে অর্থের যোগান কম ছিল। সাম্প্রতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুঁজিবাজার উন্নয়নের উদ্যোগ নেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক এক যুগান্তকারী নীতি সহায়তার সার্কুলার দিয়েছে, যা ইতিমধ্যে বিনিযোগকারীদের মধ্যে আগ্রহ ও সাহস যোগাচ্ছে। এ সহায়তা কোন প্রকার দান বা ভর্তুকি নয়। এটি নিয়ে অপপ্রচার করার কোন যৌক্তিকতা নেই। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন না করে কিছু ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যা বা উপস্থাপনা করা হচ্ছে। এতে বিনিযোগকারী তথা অংশীজনের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, যা বাজারের গভীরতা বাড়াতে সাহায্য করবে। বহুজাতিক ও বেসরকারি খাতের স্বনামধন্য কোম্পানিসমূহকে বাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে উৎসাহিত করার জন্য ও নীতি সহায়তা দরকার। বর্তমানে ব্যাংক থেকে সহজে অর্থের যোগান হয়ে যায় বলে পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার কঠিন প্রয়োগে কিছু ব্যবসায়ীরা পুঁজিবাজারে প্রবেশ করতে চায় না।

অথচ স্বল্প মেয়াদি আমানত নিয়ে ব্যাংকসমূহ দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ সরবরাহ করছে, যা তারল্যে অসামাঞ্জস্যতা তৈরি করে। আমরা মনে করি, বৃহৎ স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানসমুহকে পুঁজিবাজারে আনতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা (বিশেষ কর রেয়াত, ভ্যাট রেয়াত) করা প্রয়োজন।

আইসিবি প্রসঙ্গে ছায়েদুর রহমান বলেন, আমরা আশা করি, পুঁজিবাজারে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ভূমিকাকে দৃশ্যমান ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর আস্থা ও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং পুঁজিবাজার অভিষ্ঠলক্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাব এবং আইপিও’র মান নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা হয়। কিন্তু সুনির্দিষ্ট পরিমাপ বা সুনির্দিষ্ট সুপারিশ উপস্থাপিত হয় না। বর্তমানে একটি কোম্পানি প্রায় ৪০০ তথ্য ও শর্ত পরিপালন করে আইপিওতে আসে। সে ক্ষেত্রে আরও সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য বা শর্ত যোগ করার প্রয়োজন হলে, সে বিষয়ে সুপারিশ তৈরি করে কমিশনে পাঠানো যেতে পারে। এ সময় বিএমবিএ’র সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ মতিন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান, নির্বাহী সদস্য মাহবুব এইচ মজুমদার, নুর আহমেদ, মোহাম্মদ হামদুল ইসলামসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।