মোহাম্মদ মামুন: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি আলহাজ্ব টেক্সটাইলের শেয়ার নিয়ে হঠাৎ এসব কি হচ্ছে। এক মাসের জন্য কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ এমন ঘোষণায় কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ২২ শতাংশের মতো।

গত ১৯ তারিখে কোম্পানিটি শেয়ারের দর ৭৬ টাকায় লেনদেন করতে দেখা গেলেও এক সপ্তাহে ব্যবধানে শেয়ারটির দর ৬০ টাকার মধ্যে লেনদেন চলছে। মাত্র ৭ কার্যদিবসে শেয়ারটি দর হারায় ১৬ টাকার মত। এক মাসের জন্য কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ এমন আত্মঘাতী সিন্ধান্তে বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

আলহাজ্ব টেক্সটাইল এর মত সুনামধন্য কোম্পানি এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে জল্পনা কল্পনা শেষ নেই। অনেকেই কোম্পানির এমন সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ডিএসইকে অনুরোধ জানিয়েছেন। বিগত ২০১৮ সালের সমাপ্ত অর্থ বছরের জন্য কোম্পানিটি ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। তেমনি ধারাবাহিক কোম্পিানিটি লভ্যাংশ দিয়ে আসছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পণ্যের চাহিদার ঘাটতির কারনে বিক্রয় কমে গেছে। এমতাবস্থায় নতুন পণ্য উৎপাদন করে, তা গুদামজাতকরনের জন্য জায়গা নেই। কারন বিক্রয় ঘাটতির কারনে এরইমধ্যে পণ্যে গুদাম ভর্তি হয়ে রয়েছে।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, একটি মগ থেকে আর একটি গ্লাসে পানি যখন ডালা হয়। গ্লাস পরিপূর্ণ হলে পানি ডালা আমরা বন্ধ করে। সে রকম ভাবে আলহাজ্ব টেক্সটাইলের গুদামঘরে পন্য সামগ্রিই রাখা মত জায়গা নেই সে জন্য তারা উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে তবে স্বাভাবিক ব্যাপার।

বাংলাদেশে আলহাজ্ব টেক্সটাইলের মত আরও অনেক গুলো কোম্পানি রয়েছে সেখানে নিশ্চয় তাদেরও ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা চলছে শুধু কি একা আলহাজ্ব টেক্সটাইলের বেলায় মন্দা ভাব নেমে এসেছে এ প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের।

তারা এও বলেছেন তাদের মুলধন এর ঘাটতি রয়েছে যেখানে গত বছর ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের দ্বৈত বেঞ্চ আলহাজ টেক্সটাইল লিমিটেডকে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

অগ্রনী ব্যাংক যেখানে আলহাজ্ব টেক্সটাইল কে পাওয়া বাবদ ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পরিশোধ করে এবং এই টাকা আবার আলহাজ্ব টেক্সটাইল ব্যাংকে এফডিআর হিসেবে রেখে দিয়েছে এই টাকার মালিকতো সাধারণ শেয়ারহোল্ডারগন ও রয়েছেন। তাহলে তাদের মুলধনের ঘাটতি কোথায়?

সুত্রে মতে, টেক্সটাইল খাতে রপ্তানি প্রণোদনা ২০১৯-২০ প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে চারটি খাত (ওভেন, নিট, সোয়েটার ও টেক্সটাইল) ৪ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাচ্ছে সেগুলোর বাইরে থাকা অন্য সব খাতকে ১ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে আরও দুই হাজার ৮২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা নিশ্চয় বস্ত্র খাতের জন্য সুসংবাদ।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২ সিসি এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ক্ষমতা বলে এ সংক্রান্ত নোটিফিকেশন সংশোধন করতে যাচ্ছে। যেখানে সকল পরিচালকদের কে সম্মিলিতভাবে ভাবে ৩০ শতাংশ একক ভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দেশনা মানছে না আলহাজ্ব টেক্সটাইল।

ডিএসই সুত্রে জানা গেছে, আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পরিচালকবৃন্দের হাতে মাত্র ১২.৭৮ শতাংশ শেয়ার, সরকারের হাতে ০.০৩ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হাতে রয়েছে ৮.৯৪ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৭৮.৪৪ শেয়ার রয়েছে।

কোম্পানির তথ্য মতে, গত ২৫ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত কোম্পানিটির এক মাসের জন্য উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, ১ মাসের মধ্যে যদি চলতি মূলধন সংকট কেটে যায়, তাহলে কারখানা চালু করা সম্ভব হবে।

একটি কোম্পানির শেয়ার দর কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিক যখন বাড়ে তখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কারন দর্শানো নোটিশ প্রদান করলে কমার বেলায় তদন্ত করে দেখা উচিত বলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মনে করেন।

আলহাজ্ব টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ কোন অসত্য উদ্দেশ্য কারসাজি করে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তা না হলে কোম্পানি গুলোর এমন আত্মঘাতী সিন্ধান্তের কারণে ভবিষ্যতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর বড় ধরনের ক্ষতি সম্মুখীন হতে হবে।