far-east-knittingশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: এক বছরের ব্যবধানে ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। তবে কোম্পানির নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে। মূলত বিলম্বিত করের (ডেফার্ড ট্যাক্স) কারণেই কোম্পানির নিট মুনাফা কমেছে। ২০১৫-১৬ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।

অবশ্য চলতি প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির বিক্রির পাশাপাশি মুনাফাও বেড়েছে। এ বছর তৈরি পোশাক শিল্পে শীর্ষ করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নিট পোশাক প্রস্তুতকারী কোম্পানিটি।

সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িংয়ের তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ৩১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা বেশি। রফতানি বৃদ্ধির পাশাপাশি কোম্পানির উত্পাদন ব্যয়ও (কস্ট অব গুডস সোল্ড) কিছুটা কমেছে।

২০১৪-১৫ হিসাব বছরে ফার ইস্ট নিটিংয়ের উত্পাদন ব্যয় ছিল মোট বিক্রির ৭৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, যা সর্বশেষ হিসাব বছরে ৭৫ শতাংশে নেমে এসেছে। রফতানি বৃদ্ধি ও উত্পাদন ব্যয় কমে আসায় সর্বশেষ হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির মোট (গ্রস) মুনাফা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।

২০১৫-১৬ সমাপ্ত বছরে ফার ইস্ট নিটিংয়ের কর-পূূর্ব মুনাফা দাঁড়ায় ৪৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ৪০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সর্বশেষ হিসাব বছরে আয় বাড়লেও বিলম্বিত কর বাবদ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে কোম্পানির নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমে যায়। ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে কোম্পানিটি আয়কর বাবদ ব্যয় করে ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা সর্বশেষ হিসাব বছরে দ্বিগুণ হয়ে যায়।

২০১৫-১৬ সমাপ্ত বছরে ফার ইস্ট নিটিং কর বাবদ ব্যয় করেছে ১৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিলম্বিত করের পরিমাণ ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। মূলত বিলম্বিত করের কারণেই ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে কোম্পানির নিট মুনাফা দাঁড়ায় ২৯ কোটি ৪০ লাখ টাকায়, যা আগের বছর ছিল ৩১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

বিলম্বিত কর বা ডেফার্ড ট্যাক্স হচ্ছে কোম্পানির স্থায়ী সম্পদের বিপরীতে ধার্য কর, যা এ বছরই পরিশোধ করতে হবে না। তবে কোম্পানির আয় থেকে বিলম্বিত কর বাবদ ধার্য করা অর্থ কেটে আলাদা হিসাবে রাখতে হয়। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, অবচয় ও অ্যামরটাইজেশন (ক্রম শোধ) হিসাব করে কোম্পানির স্থায়ী সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮১ কোটি ২২ লাখ টাকা।

এর মধ্যে ট্যাক্স বেজের পরিমাণ ১৩৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য (ট্যাক্সেবল টেম্পোরারি ডিফারেন্স) হচ্ছে ৪৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এ পার্থক্যের ওপর ২০ শতাংশ হারে কর ধার্য করলে ২০১৬ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির বিলম্বিত করের দায় দাঁড়ায় ৯ কোটি ৩০ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব এমএস জামান  বলেন, নতুন নিয়মের কারণে ২০১৫-১৬ হিসাব বছর থেকে ডেফার্ড ট্যাক্স চার্জ করা হচ্ছে, যার প্রভাব পড়েছে নিট মুনাফায়। তবে কোম্পানির বিক্রিতে ধারাবাহিকতা রয়েছে, যা প্রথম প্রান্তিকেও প্রতিফলিত হয়েছে। সাধারণত অন্যান্য প্রান্তিকের তুলনায় প্রথম প্রান্তিকে আমাদের রফতানি তুলনামূলক কম থাকে।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রসারণের আওতায় যে প্রকল্প নেয়া হয়েছিল, তা এরই মধ্যে বাণিজ্যিক উত্পাদনে এসেছে। সব মিলিয়ে আশা করছি, আমাদের রফতানিতে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।

এদিকে বিলম্বিত কর দায়ের পরও চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফার ইস্ট নিটিংয়ের নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানির রফতানি বেড়েছে ১৩ শতাংশের বেশি। ২০১৫-১৬ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফার ইস্ট নিটিংয়ের পোশাক রফতানি হয় ৫৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকার, যা চলতি প্রথম প্রান্তিকে ৬৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

এ সময় কোম্পানির মোট মুনাফা বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। চলতি প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৬০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বিলম্বিত কর ধার্য করেছে। এর পরও কোম্পানির নিট মুনাফা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। সব মিলিয়ে চলতি প্রথম প্রান্তিকে ফার ইস্ট নিটিংয়ের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।