dse-cseশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে সপ্তাহজুড়ে অস্থির ছিল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার। গেল সপ্তাহে প্রতিদিনই দরপতন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে। আর অব্যাহত দরপতনে সব ধরনের মূল্য সূচকের পাশাপাশি কমেছে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেন হওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের দর।

আর সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। ডিএসই সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দরপতন যেন শেয়াবাজারের পিছু ছাড়ছে না। অব্যাহত দরপতনের কারণে শেয়ারবাজারের মূলধন কমেছে ১৫ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৮ হাজার ৫২১ কোটি এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ৬ হাজার ৮০১ কোটি টাকা বাজার মূলধন কমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগের (এক্সপোজার) সমন্বয় সময়সীমা নিয়ে এক ধরনের গুজবে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে স্টেক হোল্ডারা এক্সপোজার লিমিট সময় সীমা বাড়ানোর দাবি করে আসছিল।

তবে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক্সপোজার লিমিট সময় সীমা না বাড়িয়ে কিছু নীতি পরিবর্তন করে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এতে শেয়ার সেল করা লাগবে না। ফলে সেল প্রেসার থাকবে না বলেও জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ঘোষণার পরদিনও স্পষ্ট কোনো সার্কুলার জারি না করায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও বাজারে পতন অব্যাহত ছিল। এক্সপোজারের বিষয়টি স্পষ্ট হলে বাজারের সঠিক গতিধারা বুঝা যাবে। আর এ কারণেই দরপতন অব্যাহত আছে বলে মনে করছেন তারা। যার ফলে বাজার মূলধন ধারাবাহিকভাবে কমছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন মোট কমেছে ১৫ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রথম কার্যদিবস রোববার (২৪ এপ্রিল) লেনদেন শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৮ হাজার ৫০৬ কোটি ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার ৮১০ টাকায় এবং শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৫ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ১৬৪ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৫২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

অপর দিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম কার্যদিবস রোববার (২৪ এপ্রিল) বাজার মূলধন ছিল ২ লাখ ৪১ হাজার ১০১ কোটি টাকা। যা সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ৬ হাজার ৮০১ কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ২৯৯ কোটি টাকায়।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৫৭ কোটি ৩৪ লাখ ৮১ হাজার ৪৯৪ টাকা। যা এর আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৭৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ৯ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে চার দিনে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৩৩ কোটি ২ লাখ ৬ হাজার ৭১১ টাকা।

একই সঙ্গে গত সপ্তাহে ডিএসইতে কমেছে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ। প্রতিদিন গড়ে টার্নওভার দাঁড়িয়েছে হয়েছে ৩৫১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহে ছিল ৩৮৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে গড়ে টার্নওভার কমেছে ৩৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ০৯ শাতংশ কম।

গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪৪ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ডিএস৩০ সূচক কমেছে ৫৩ দশমিক ৮১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস কমেছে ৩২ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ১০ শতাংশ।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৫৬টির, কমেছে ২৫৩টির এবং অপরিবর্তিত আছে ১৬টির আর লেনদেন হয়নি পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার।

সপ্তাহে সিএসইতে গড়ে মোট লেনদেন হয়েছে ২৭৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪১টির, কমেছে ২২০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ১৫টির। টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ১১০ কোটি ৫১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের চলমান মন্দা অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা স্টেক হোল্ডাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নিকট আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু এক্সপোজার লিমিট বিষয়ে নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে বললেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো স্পস্ট কোনো সার্কুলার জারি করেনি। এতে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজার মূলধনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেছন তিনি।

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। বাজারের মূল্য সূচক প্রায় ৪ হাজারে চলে এসেছে। এর মূল কারণ অনিয়ম আর নানা অপকৌশলে বাজার থেকে অর্থ বেড়িয়ে যাচ্ছে। রেগুলেটরের ব্যর্থতায় বোনাস শেয়ার ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মধ্যমে শেয়ারবাজারের থেকে শত শত কোটি টাকা বাহিরে চলে যাচ্ছে।

অন্যদিকে এক্সপোজার নিয়েও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন কেম্পানির অস্বাভাবিক দর উঠানামার কারণে বাজারে প্যানিক সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে রেগুলেটরদের কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা দেখছি না। ফলে বাজারে ধারাবাহিক দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।