estern-lub--561x400আমিনুল ইসলাম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন লুবরিক্যান্টসের শেয়ার নিয়ে এসব কি হচ্ছে। এ কোম্পানির শেয়ারের দর টানা বাড়ছেই। এর পেছনে কোন কারন না থাকলে দর বাড়া অব্যাহত রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ইস্টার্ন লুবরিক্যান্টসের শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করেছেন।

স্বল্পমুলধনী কোম্পানি হওয়ার একটি চক্র টানা এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে মেতে উঠছেন। পুঁজিবাজারে টানা দরপতন হলেও ইস্টার্ন লুবরিক্যান্টসের শেয়ার টানা দরবৃদ্ধি ছিল। হঠাৎ করে কোন কারন ছাড়া এ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়া অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। জানা গেছে, একটি চক্র ডিভিডেন্ড কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে শেয়ার দর বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এছাড়া দুর্বল মৌল ভিত্তি শেয়ার নিয়ে হরহামেশা কারসাজি চলছে। এ বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক মাস আগে এ কোম্পানির শেয়ারের দর ছিল ৫৫০ টাকা আর বর্তমানে ৮৩৬ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। আর আজও এ কোম্পানির শেয়ার হল্টেড ৮৩৬ টাকা্য ।এতে কোম্পানির শেয়ারটি হল্টেড হয়ে মূল্য স্পর্শ করছে সার্কিট ব্রেকারে। প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার কোম্পানিটির শেয়ার হল্টেড হয়েছিল।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বেলা ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত কোম্পানিটির স্ক্রিনে সর্বশেষ ১ হাজার ৮৪ টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব দেখাচ্ছিল। কিন্তু বিক্রেতার ঘরে কোনো শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব ছিল না। হল্টেডের আগে সর্বশেষ লেনদেনটি হয় ৮৩৬ টাকা ২ পয়সা দরে। গতকাল এই শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ৭৭৭ টাকা ৯ পয়সা।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুন ২০১৫ সমাপ্ত হিসাব বছরে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যার পুরোটাই নগদ। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৩৯ পয়সা। শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ৭৩ টাকা ৪১ পয়সা।

বিগত কয়েক দিনে কোম্পানির শেয়ার দর সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। তবুও এখন পর্যন্ত দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে দর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে কোনো নোটিশ প্রদান করা হয়নি। ধারাবাহিক দর বৃদ্ধির প্রবণতায় গতকাল কোম্পানিটির শেয়ার দর বিগত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে আসে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

ডিএসই সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিগত দুই বছরে শেয়ারটির দর ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে  ৮৩৬ টাকায় উঠে এসেছে। একইভাবে এক বছরেও শেয়ার দর একই রয়েছে। সর্বশেষ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর ৭৭৭.৯০ টাকা থেকে ৮৩৬  টাকার মধ্যে ওঠানামা করে।

EASTRNLUB ২২ বছরের চিত্র যাবে..

চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে (জুলাই-ডিসেম্বর ’১৫) কোম্পানিটির কর পরিশোধের পর মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১০.৭৯ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে কর পরিশোধের পর মুনাফা হয়েছিল ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছিল ১ টাকা ৫৬ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে।

অন্যদিকে কোম্পানিটি সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে (২০১৫ সালে) কর পরিশোধের পর ৩৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা মুনাফা করেছে। যা এর আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা কম। এদিকে ২০১০ সাল থেকে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের ৩০ শতাংশ হারে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে এ কোম্পানিটি।

উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫ কোটি টাকার বিপরীতে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ কোটি টাকা। বর্তমানে কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

এ’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট ৯ লাখ ৯৪ হাজার শেয়ারের মধ্যে সরকারি উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে ৫১ শতাংশ শেয়ার। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা দরপতন বাজারে ইস্টার্ন লুবরিক্যান্টসের দর বাড়ার কারন কি। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রত সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। যে সকল বিনিয়োগকারীরা গুজবে কান দিয়ে বিনিয়োগ করছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত শিকার হবেন। তাই সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত গুজব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, বাজারে এক প্রকার জুয়া খেলা (গ্যাম্বলিং) চলছে। তবে যে সব কোম্পানির দাম বাড়ার কথা, সে সব কোম্পানির দাম না বেড়ে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির দাম বেড়েই চলছে। কয়েক দিন ধরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, যে সব কোম্পানি সার্কিট ব্রেকারে পৌঁছেছে, তাদের দাম এত বেশি বাড়ার কোনো কারণ নেই। তবে এসব কোম্পানি নিয়ে বাজারে বিভিন্ন গুজব রয়েছে বলে জানান তিনি। আর কিছু কিছু বিনিয়োগকারী গুজব শুনে ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।