শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সিকিউরিটিজের বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধির পরও থামছে না পুঁজিবাজারে টানা দরপতন। ফলে দিন যতই যাচ্ছে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট ততই বেড়েছে। ফলে পুঁজিবাজারের প্রতি অনাহী হয়ে বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। আর টানা দরপতনে অভিবাভকহীন শুন্য পুঁজিবাজার। কারণ পুঁজিবাজারে টানা পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ৫৮ পয়েন্ট সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এনিয়ে টানা ৮ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক উধাও ৩৬৮ পয়েন্ট। ফলে টানা দরপতনে ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল ৭ হাজার ৩৬৭ পয়েন্ট। তিন বছর ৭ মাস ১২ দিন পর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে। এই সময়ের মধ্যে সূচক কমে গেছে ২ হাজার ৫৫ পয়েন্ট।

সম্প্রতি পুঁজিবাজার গতিশীল করতে আইসিবির ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) হচ্ছে। সিকিউরিটিজ কেনার সীমা ১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে এর কোন প্রভাব নেই পুঁজিবাজারে। ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কোন পথে হাটছে দেশের পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত কী। এ খাতটি কী ন্যুয়ে পড়লো। এর থেকে উত্তরনের উপায় কী।

এছাড়া বিএসইসির কোনো উদ্যোগই বাজারে পতন ঠেকাতে কার্যকর হচ্ছে না। কিছুদিন পরপর অনিয়ন্ত্রিত উত্থান পতন বাজার নিয়ন্ত্রণে বিএসইসির ব্যর্থতাকে বারবার সামনে নিয়ে এসেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার পাশাপাশি সংস্থাটি কারসাজি রোধেও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, ঘন ঘন নীতির পরিবর্তনে পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে বিনিয়োগকারীদের। গুজব আর ফোর্স সেলও চরমভাবে ক্ষতি করছে পুঁজিবাজারকে। পুঁজিবাজারের এমন ধস ৯৬ ও ২০১০ সালেও দেখিনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার আশ^াসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা পথের ফকির হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তারা । এভাবে চলতে থাকলে এ বাজারে কেউ বিনিয়োগ করতে আসবে না।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে যেখানে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে কী ভাবে নারী বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার মুখী করতে চায়। আমাদের মত পুরুষ বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ঠিক থাকতে পারছি না। সেখানে নারী বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকির মধ্যে কী ভাবে বিনিয়োগ করবে। আর নারী বিনিয়োগকারীরা কখনো ঝুঁকির মধ্যে বিনিয়োগ করে না বলে তারা জানান।

বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেও লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি লোকসানের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও কারসাজি চক্র শেয়ার বিক্রি করে বাজার অস্থিতিশীল করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, পুঁজিবাজারের বারবার উত্থান পতনের ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন। এতে তাঁদের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে গেছে। নিয়ন্ত্রণ দুর্বলতার কারণে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দামের অস্বাভাবিক উত্থান পতন ঘটেছে। কিন্তু বিএসইসির দিক থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বাজার আর স্বাভাবিক আচরণ করছে না।

মার্চেন্ট ব্যাংকের ঐ শীর্ষ কর্মকর্তা আরো বলেন, পুঁজিবাজারে কারসাজির ঘটনা ঘটিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাওয়ার কোনো নজির নিকট অতীতে নেই। কিছু কারসাজির ঘটনায় কারসাজিকারীরা নামমাত্র জরিমানা দিয়ে দায়মুক্তি পেয়েছেন, যা কারসাজিকে আরও বেশি উৎসাহিত করেছে। ফলে সব মিলিয়ে বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরেছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৫৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩১২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৫৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯০৭ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৮৯ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪২ টির, দর কমেছে ৩১৯ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮ টির। ডিএসইতে ৫০৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৮৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৯১ কোটি ৬২ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৪০৩ পয়েন্টে। সিএসইতে ২২১ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৭৭ টির এবং ২৩ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৬৯ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।