শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: টানা দুই বছর লভ্যাংশ ঘোষণায় ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠাতে পারবে স্টক এক্সচেঞ্জ, যেটি আগে এক বছর ছিল। এ ছাড়া অন্তর্র্বতী লভ্যাংশ দিয়েই কোনো কোম্পানি ‘জেড ক্যাটাগরি’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির শ্রেণি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এখন বিএসইসি একটি নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনাটি হচ্ছে, পরবর্তী লভ্যাংশের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারবে না।

জানা যায়, তালিকভুক্ত কোম্পানির শ্রেণি পরবর্তনের আগে একটি আদেশ ছিল। ওই আদেশ বাতিল করে নতুন একটি আদেশ জারি করেছে বিএসইসি গত বৃহস্পতিবার। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনায় পরবর্তী লভ্যাংশ ঘোষণার পর ‘জেড’ গ্রুপে নেওয়ার কথা বলা হলেও হুট করে রোববার থেকেই ২২ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন এ প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা।

কিসের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেড গ্রুপে যাবে, সে বিষয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। ওই নির্দেশনার শেষ পয়েন্টে বলা হয়, ইস্যুয়ার কোম্পানির পরবর্তী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা অথবা বার্ষিক/অন্তর্বতী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণার দিন থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনায় এমন বলা হলেও আজ রোববার থেকে ২২ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে লেনদেন হয়েছে।

জেড গ্রুপ নিয়ে দেওয়া নির্দেশনা এবং হুট করে বাস্তবায়ন করার বিষয়টিকে ‘ভুতুড়ে’ বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টদের একটি অংশ। তারা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনায় বলা হয়েছে এক রকম, আর বাস্তবায়ন হয়েছে অন্যভাবে।

বিএসইসির নির্দেশনায় যেভাবে বলা হয়েছে, তাতে কোম্পানিগুলোর পরবর্তী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা আসার পর জেড গ্রুপে স্থানান্তর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। কিন্তু লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আসার আগেই হুট করে ২২ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা আরও বলছেন, কার স্বার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তা খতিয়ে দেখা উচিত। এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে সার্বিক বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বয়হীতার চিত্রও ফুটে উঠছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনায় বলা হয়েছে এক রকম, আর বাস্তবায়ন হয়েছে অন্যভাবে। বিএসইসির নির্দেশনায় যেভাবে বলা হয়েছে, তাতে কোম্পানিগুলোর পরবর্তী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা আসার পর জেড গ্রুপে স্থানান্তর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। কিন্তু লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আসার আগেই হুট করে ২২ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হলো।

অন্যদিকে বিএসইসি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সার্বিক বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে জেড গ্রুপ নিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর ২২ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করেছে স্টক এক্সচেঞ্জ। সুতরাং স্টক এক্সচেঞ্জ থেকেই এ বিষয়ে প্রকৃত ব্যাখা দিতে পারবে।
বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ফলে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সৃস্টি হয়।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, বিএসইসির বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ফলে পুঁজিবাজারে অস্থিরতার সৃস্টি হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ ঘোষণা করবে তাদের মালিক পক্ষের শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না এমন সিদ্ধান্ত নিলে বাজারের জন্য ভালো হতো। তাহলে কোনো কোম্পানির মালিক পক্ষ শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যেতে পারত না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু ব্রোকার হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা বলেন, জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর ব্যাপারে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ফলে পুঁজিবাজারে অস্থির পরিস্থিতির সৃস্টি হয়েছে। তারা বলেন, জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগসাজশে পুঁজিবাজারে কোম্পানির মালিক পক্ষ নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা করে তাদের অংশটুকু উচ্চ দামে বিক্রি করে দেয়। ফলে নামসর্বস্ব কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

ডিএসই’র এক সদস্য বলেন, ফ্লোর প্রাইস দিয়ে দীর্ঘদিন বাজার এক প্রকার বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর বাজারে যখন গতি ফিরছিল, তখন জেড গ্রুপ নিয়ে নির্দেশনা আবার নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এমনকি জেড গ্রুপ নিয়ে একই দিনে বিএসইসি দুটি নির্দেশনা জারি করেছে। এতে বোঝা যায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

এ বিষয় যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কমিশন সময়ে সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। তারই আলোকে জেড গ্রুপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিকে নিয়মনীতি পরিপালন না করার (নন-কমপ্লায়েন্স) জন্য জেড শ্রেণিভুক্ত করতে পারবে না কোনো স্টক এক্সচেঞ্জ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোনো কোম্পানির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিতে হবে।

বিএসইসি বলছে, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি পরপর দুই বছর লভ্যাংশ না দিলে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করলে সেই কোম্পানিকে দুর্বলমানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হবে। তবে ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রে অন্তর্র্বতীকালীন লভ্যাংশকে শ্রেণি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে।

এ ছাড়া কোনো কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম ছয় মাস বা তার বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকলে সেটিও জেড শ্রেণিভুক্ত হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কারখানা আধুনিকায়নের ঘোষণা দিয়ে কোনো কোম্পানি উৎপাদন বন্ধ রাখলে তাদের ক্ষেত্রে এ শর্ত কার্যকর হবে না। আবার তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের বেশি হলে সেটিও জেড শ্রেণিভুক্ত হবে।

বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া পুঁজিবাজারের জেড শ্রেণিভুক্ত কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর করতে পারবেন না। পুঁজিবাজারের বাইরেও এসব উদ্যোক্তা-পরিচালকের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ও হস্তান্তরে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

বিএসইসি বলেছ, কোনো কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান তার পরিশোধিত মূলধনকে ছাড়িয়ে গেলে ওই কোম্পানি জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর হবে। তবে যদি কোনো কোম্পানি পুঞ্জীভূত লোকসান সত্ত্বেও নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ (এজিএম) করে এবং সর্বশেষ বছরে নিট মুনাফা ও লভ্যাংশ ঘোষণা করে, তাহলে ওই কোম্পানির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।

এ ছাড়া কোনো কোম্পানি সিকিউরিটিজ আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘনের কারণে স্টক এক্সচেঞ্জ যদি মনে করে যে ওই কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা প্রয়োজন তাহলে বিএসইসির অনুমোদনক্রমে তা করতে পারবে। স্টক এক্সচেঞ্জের ‘জেড ক্যাটাগরি’ মানে হচ্ছে, যেখানে শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তিতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে। এই শেয়ারগুলো নন-মার্জিন এবং এই ক্যাটাগরির কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।