শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ফের টানা দরপতনের মধ্যে পড়ে গেছে দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে টানা পাঁচ কার্যদিবস নতুন করে দরপতনে আস্থা সংকটে ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার চাঙ্গা হবে এমন প্রত্যাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু সেই প্রত্যাশা বাদ দিয়ে এখন পুঁজি নিয়ে শঙ্কিত তারা।

সম্প্রতি ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর প্রায় প্রতিদিনই শত কোটি টাকা করে মূলধন হারাচ্ছে পুঁজিবাজার। এর ফলে বাজারের প্রতি দিন দিন বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা চলে আসছে। এছাড়া টানা দরপতন ঘটলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ডিএসই নিরব ভুমিকা পালন করছেন। এর ফলে নতুন করে আস্থা সংকটে ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিনেই লেনদেন অংশ নেয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমছে। সেই সঙ্গে কমছে মূল্যসূচক। পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমে এসেছে। দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে উঠে যাওয়া লেনদেন এক হাজার কোটি টাকার নিচে চলে এসেছে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুঁজিবাজারে চাহিদার দিক থেকে সংকট হলো এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। সরবরাহের দিক থেকে সংকট হলো, ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। সবকিছু মিলিয়ে বর্তমানে দুর্বল অস্তিত্বে টিকে আছে পুঁজিবাজার।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতির ভালো সময়ে পুঁজিবাজারে দুর্দিন ছিল। আর এখন তো অর্থনীতিতে সময় ভালো যাচ্ছে না। বড় বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষাকৃত নিস্কিয়। ডলার সংকটেরও খানিকটা প্রভাব রয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, আগামী মাস থেকে কোম্পানির লভ্যাংশের ঘোষণা আসবে। সেখানে ভালো কিছু এলে হয়তো বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা বাড়বে।

এদিকে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচকের ৫৩ পয়েন্ট পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসইতে সূচকের সাথে টাকার অংকে লেনদেন কমেছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইর দর পতনে আড়াইশ এর বেশি কোম্পানির শেয়ারদর। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমলেও বেড়েছে লেনদেন। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রোববার ডিএসইতে ৯২৪ কোটি ৭৩ লাখ ৪২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আজ ডিএসইতে আগের দিন থেকে ১৪৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা কম লেনদেন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ১ হাজার ৭৪ কোটি ৭৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৫৩.০১ পয়েন্ট বা ০.৮৩ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৮৩.২৩ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচকস ১৩.৩৮ পয়েন্ট ০.৯৬ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৬৮.৮২ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২৭.৭৭ পয়েন্ট ১.২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২৯.২৮ পয়েন্টে। রোববার ডিএসইতে মোট ৩৯২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১০৭টির, কমেছে ২৫৬টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির।

অপর পুঁজিবাজার সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ১১৯.৯২ পয়েন্ট বা ১.০৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮৩০.৫৩ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২০৪.৮৬ পয়েন্ট বা ১.১২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৮৫.৮২ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ১১.৯৩ পয়েন্ট বা ১.০১ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৬১.৫৪ পয়েন্টে এবং সিএসই৩০ সূচক ৭৩.৯৪ পয়েন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ কমে ১৩ হাজার ৪০১.০২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

আজ সিএসইতে ২৬৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭০টির, কমেছে ১৬৯টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির। দিন শেষে সিএসইতে ২৯ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৫ কোটি ৫১ লাখ ৫ হাজার টাকার শেয়ার।