শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আল আমিন ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন, ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন, নতুন করে গড়ে উঠা সিও ফোরামের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে এসব সংগঠনের মূখ্য ভূমিকা ছিল। তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি-কে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন ফ্লোর তোলার পর তারা সক্রিয় ভূমিকায় থাকবেন। কিন্তু তাদের সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবে প্রাপ্তির কোনো মিল নেই।

অধ্যাপক আল আমিনের ভিডিও বার্তার বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো: অধিকাংশ শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেল। এই জায়গায় আমরা যে বাস্তব চিত্রটা দেখতে পাচ্ছি এটা আসলে কারো প্রতিশ্রুতির সাথে প্রাপ্তির কোনো মিল আমরা পাচ্ছি না। কারণ এখানে ফ্লোর তোলার আগে যখন অংশীজনদের সাথে বসা হয়েছিল বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন, ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন, নতুন করে আবার আরেকটা সংগঠন নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করেছে সিও সংগঠন ফোরাম নামে।

আমরা যেই ফর্মেই বলি না কেনো, যতো ধরনেরই যা কিছু থাকুক প্রত্যেকে কিন্তু বলেছে যে ফ্লোর প্রাইসের কারণে নাকি তারা বাই-সেল করতে পারছে না। ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারবাজারকে আর্টিফিশিয়ালি আটকে রাখা হচ্ছিলো। এই কথাগুলো যদি যৌক্তিক হয়, তাহলে এই যে রোববারের পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনেক শেয়ারের দেখা গেছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কারেকশন হয়ে গেছে। বিশেষ করে যেগুলো মার্জিন পায় এমন কিছু শেয়ারেরও ৫০ শতাংশ কারেকশন হয়ে গেছে।

তাহলে যদি কারো মার্জিন ঋণ নেওয়া থাকে উনিতো ফান্ডামেন্টালি ভালো শেয়ার দেখেই এখানে বিনিয়োগ করেছিলেন। তাহলে ভালো শেয়ার দেখে যদি বিনিয়োগ করে থাকেন, এটা কি তার অপরাধ হয়ে গেলো?

সেখানে দেখা গেছে যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কারেকশন হওয়ার পরেও বায়ার আসেনি। তাহলে যদি প্রত্যেকটা শেয়ারের পেছনে যেখানে শুধু মেকার আছে, এগুলাতেই যদি বায়ার আসে তাহলে তো ফ্লোর প্রাইস তোলা না তোলাতে কিছু যায় আসে না। কারণ ফ্লোর প্রাইস তোলার পরে কি ধারণা ছিলো? যে যেসব শেয়ার মানুষ ফ্লোর থাকার কারণে আজেবাজে শেয়ারে মানুষ গিয়েছিলো সেই শেয়ারগুলো থেকে মানুষ আল্টিমেটলি ভালো শেয়ারের দিকে একটা যৌক্তিক দামে ফিরে আসবে।

তাহলে যদি ৫০ শতাংশ কারেকশন করার পরেও কোনো শেয়ারকে আপনার যৌক্তিক মনে না হয়, তাহলে এই বাজারে এই শেয়ারগুলোর দাম কারা বাড়িয়ে নিয়ে গেছিলো আগে? কারণ অনেক কারেকশন হওয়ার পরেই তো ফ্লোরটা দেওয়া হয়েছিলো। সেই ফ্লোর দেওয়ার পরেও ৫০ শতাংশ দাম পতনের পরেও যদি এটা যৌক্তিক মনে না হয়, তাহলে এটার পেছনে কারা এই প্রাইচিংটাকে করে নিয়ে গিয়েছিলো।

সাধারণ বিনিয়োগকারী যারা এখানে বিনিয়োগ করেছিলো, তাদের দায়ভারকে কে নিবে। এখন আপনারা যদি বলে দেন যে বিনিয়োগকারী ভুল করেছে, বিনিয়োগকারীরা তো ভুল করলে ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ কিংবা ৩০ শতাংশ কারেকশন হতে পারে, এটা তো ৫০ শতাংশ কারেশন হওয়ার পরেও বায়াররা যেসব শেয়ারে আসছে না, তা তো বিনিয়োগকারীর ভুল না। এটা একটা সিস্টেমের ভুল।

এজন্যে যেসব লোকজন এতোদিন বড় বড় কথা বলেছে, যে ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে বাজারে ভলিউম বাড়বে, তারা তো ফ্লোর প্রাইস তোলার আগে যেইসব বাজে কোম্পানির দাম বাড়তো তখন ১০ টাকা শেয়ারের দাম হয়েছিলো ১৩০ টাকা সেই শেয়ারইতো এখন ১৩০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা হয়ে গেছে।

তাহলে কি যেসব বাজে শেয়ার এতোদিন মানুষের টাকা বিনিয়োগ ছিল বিশেষ করে যেসব বেকার গ্রুপ তাদের যদি আইটেম বাড়ে তাহলে ফ্লোর তোলা তো খুব একটা সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাজে আসেনি। কারণ সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাজে যদি না আসে, তাহলে ফ্লোর তোলার পেছনে যারা এই কাজটা করেছে তারা পরিকল্পিতভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেক ক্ষতি করেছে এবং বিষয়টাকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নজরদারির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কারণ তারা তখন কমিটমেন্ট করেছিলো যে আমরা এটা কারেকশন হলেই বায়ার আমরা ক্রিয়েট করবো।

আমরা সিওরা বসে মিটিং করেছি আমরা ডিলার কোর্ড থেকে সেল করবো না। তাহলে ডিলার কোর্ড থেকে সেল না হলে তারা বাই করলে আপনাদের যদি এই স্টাডি না থাকে কি পরিমাণ সেল প্রেসার আসতে পারে এবং ভালো ভালো শেয়ারে কি পরিমাণ প্রেসার আসতে পারে। সেটাতে যদি আপনারা স্টাডি না করে ফ্লোর তোলে থাকেন, তাহলে এই দেড় বছর সময় কেনো নিলেন? এই দেড় বছর যাদের মার্জিন সুদের সুদ দিয়েছে, তাদের অবস্থা এমনিতেই খারাপ, তার উপর ৫০ শতাংশ কারেকশন হয়ে গেছে। অনেকে ফোর্স সেলে পড়ে একুটি এখন ভ্যানিশ হয়ে গেছে। তাহলে এই যে অবস্থাটা তৈরি করলেন এই অবস্থা তৈরি করার পরে যদি ফ্লোর তোলার ব্যাকআপ না থাকে, তাহলে এটা কেনো করা হলো?

আমি মনে করি যারা এই ধরণের ইনফ্লুয়েন্স করেছে বিএসইসিকে ফ্লোর তোলার ব্যপারে এবং ইনফ্লুয়েন্স করার সাথে সাথে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি কিন্তু আল্টিমেটলি যারা এটা করেছে তাদের কোনো সমস্যা নেই। কারণ তারা কিন্তু তাদের নিজেদের পোর্টফোলিও খালি করেই তারা এই কাজগুলো করছে। সেজন্য আমি মনে করি প্রথমদিন রোববার প্রথম ২১৫ পয়েন্ট চলে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যেই তখন যে কাজটা করা হয়েছে আর্টিফিশিয়ালি তখন আপনার কিছু বড় পেইডআপে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে দিনশেষে ৯৬ পয়েন্ট মাইনাসে বাজারকে শেষ করা হয়।

এটা ভেরি গুড মনে উচিত ছিলো যেহেতু নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করেই করা হয়েছে। তার পরের দুই দিনে কিন্তু বাজারকে তারা পজেটিভ রেখেছে তখন মানুষ কিন্তু যারা সাইড লাইনে ছিলো তারা মনে করেছে, বাজার তাহলে আর ফ্লোর প্রাইস তেমন একটা কমবে না। চারদিক থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাও বলেছে কোনো সমস্যা হবে না, বড় বড় বিনিয়োগকারীদের যে ফোরাম সেগুলাও বলছে সমস্যা হবে না।

তখন তারা কি করলো সাইড লাইনে যারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হিসেবে অনেকদিন শেয়ারবাজারে আগ্রহী ছিলো না, তারা গিয়ে তখন শেয়ার কিনলো। তারা কেনার পরে দেখলো যে আরো ২০ শতাংশ কমে গেছে। এটা যদি হয় বাস্তবতা তাহলে বাজার যদি কিছু গ্রুপের হাতে এবং কিছু আইটেমের হাতে জিম্মি থাকে, তাহলে তো ভালোই ছিলো যে লেনদেন আসলে ফ্লোরের কারণে যেটা কম বেশি হতো তাহলে তো আসলে ফ্লোর তোলা আর না তোলার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

তবে হ্যাঁ একটা পার্থক্য রয়েছে, সেটা হলো সাধারণ বিনিয়োগকারী যাদের মার্জিন ঋণ নেওয়া ছিলো তারা বাজার থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। তারা ভ্যানিশ হয়ে গেছে আর উপকার কাদের হয়েছে তারা এখনো বসে আছে। আরো নামবে তারপর তারা কিনবে। সেজন্য আমি নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে কঠোর হস্তে এই বিষয়গুলো নজরে আনতে বলবো যারা নতুন নতুন সংগঠন করছে সেসব সংগঠন করে সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা নিজেরা অনেক সম্পদশালী হয়েছে আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আল্টিমেটলি সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরকে জিম্মি করে তারা এই দাবি দাওয়াগুলো আদায় করে।

যারা সাথে এইসব কথা বার্তা বলে বাজারের সামগ্রিক ক্ষতি করাটা আমি মনে করি কোনো ভাবেই উচিত না। তাই আমি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অনুরোধ করবো দ্রুততা ভিত্তিতে এই গত পাঁচ দিনে যেসব জায়গা থেকে সেল হয়েছে যারা। ভালো ভালো শেয়ার কিনে সেল দিয়েছে। ধরেন কেউ অযৌক্তিক দামে যদি অন্য শেয়ার কিনে থাকে যে শেয়ারটা ফান্ডামেন্টাললি সাপোর্ট করে না, সেটা কিন্তু যেহেতু মার্জিন পায় না, নন মার্জিন শেয়ার সেই শেয়ার যদি আপনার কারেকশন হয় তাহলে সেটা এক সময় না এক সময় উঠে যাবে।

কিন্তু যারা ভালো ফান্ডামেন্টাল শেয়ার কিনেছে, সেগুলোর যেগুলো ধরেন ৫০ শতাংশের মধ্যেও পাঁচ দিনে চলে গেছে সেই জাগায় যদি আপনি বাই সাপোর্ট না দেন তাহলে অবশ্যই যারা এই কাজগুলি এখানে ঘটিয়েছে তাদেরকে সার্ভিলেন্সের পক্ষ থেকে ডেকে এনে কেনো তারা এই রকমভাবে শেয়ারকে এখানে নিয়ে গেছে এখন ৫০ শতাংশ কারেকশনের পরেও তাদের মনে হচ্ছে এখানে কোনো সমস্যা না এখন যদি আবার রোববার থেকে দেখা যায় যে আর্টিফিশিয়ালি কিছু কিছু বড় পেইডআপকে বাড়ালো তো সেখানে ইনডেক্স প্লাস মাইনাস দিয়ে কি আসছে যাচ্ছে? যদি ইন্ডিভিজুয়াল স্টক ৫ দিন কমে যাওয়ার পরেও ভায়ার আসছে না, তাহলে ৫০ শতাংশ কমে যাওয়ার পরেও ভায়ার আসছে না, তাহলে তো ইন্ডিভিজুয়ালি বাজার আপ হলেও তাতে কোনো লাভ নাই।

সেজন্য আমি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বলবো যেইসব ব্যাক্তি এগুলার সাথে জড়িত তাদের সাথে বসে তারা যারা ফান্ড বাজার থেকে বের করে নিয়ে গেছে তাদেরকে বাধ্য করতে হবে বাজারে বিনিয়োগে আসার জন্য। কারণ অন্য কেউতো তার দায় নিবে না। ধরেন যে মেকার একটা শেয়ারকে ১০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে গেছে, সে যদি এটাকে সাপোর্ট না করে, অন্য কেউ তো এখানে সাপোর্ট করতে আসবে না।

সেজন্য আমি সামগ্রিক বাজারের স্বার্থে মনে করি, যাদের কথায় ফ্লোর প্রাইস তোলা হয়েছে, তাদেরকে জবাবদিহীতার আওতায় আনা হোক। অন্যথায় এই যে বড় একটা ক্ষতি হয়েছে, রক্তক্ষরণ হয়েছে মানুষের, কিন্তু আলি্টমেটলি পুঁজি হারা হয়ে গেছে তারা। কিন্তু কোনো অংশেই এসব ব্যক্তিবর্গ যারা ফ্লোর তোলার জন্য এতোদিন কথা বলেছে, তারা দায় এড়াতে পারে না। সেজন্য আমি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বলবো বিষয়টা সাধারণ বিনিয়োগকারীর পক্ষে দেখার জন্য। যারা কমিটমেন্ট করেছিলো দ্রুত সময়ের ভিত্তিতে কিভাবে বায়ার আনা যায়, সে ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।