শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার চাঙা করতে নতুন বছরের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের সুখবর দিয়েছে সরকার। দীর্ঘ ১০ মাসেরও বেশি সময় পর অবশেষে পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন সীমা) তুলে নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।কারণ

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ইতিবাচক ধারায় ফিরছে পুঁজিবাজার। নির্বাচনের পর লেনদেন হওয়া আট কার্যদিবসের মধ্যে ছয় কার্যদিবসই পুঁজিবাজারের সূচক বেড়েছে। এই সময়ে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে প্রায় ১০০ পয়েন্ট। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে। যেখানে ডিএসইর লেনদেন ৩০০ কোটির ঘরে আটকে ছিল, সেখানে লেনদেন ৮০০ কোটিতে ছুঁয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বেড়েছে।

তবে এখন বিনিয়োগকারীদের মাঝে প্রশ্ন বাজার কী চাঙা থাকবে নাকি ফ্লোর প্রাইসের নাকি পতন ঘটবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নিলে একটি পক্ষের দাবি ছিল মার্কেট স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে। বস্তুত মার্কেট পরিচালিত এবং ব্যালান্স হয় ডিমান্ড আর সাপ্লাই এর উপর নিভর করে। দীর্ঘ সময় ধরে মার্কেটে ডিমান্ড সাইড অনেক দুর্বল। লিকুইডিটি হচ্ছে মার্কেটের ব্লাড।

মার্কেট থেকে অনেক বেশি মাত্রায় লিকুইডিটি বের হয়েছিল, যার কারণে ভালো কিংবা দুর্বল নির্বিশেষে সব কোম্পানি ক্রাশ করলো। ফ্লোর উঠিয়ে নিলে এই পক্ষের হয়তো দাবি স্টকগুলো দাম আরো কমলে ডিমান্ড সৃষ্টি হবে, কিন্তু অনেক স্টক ইন্ট্রিন্সিক ভ্যালু থেকে কম মূল্যে থাকা সত্ত্বেও ডিমান্ড সৃষ্টি হয়নি।

এখন প্রশ্ন হতে পারে-আগামী সপ্তাহ মার্কেটের জন্য কতটা চ্যলেঞ্জিং প্রথমত, আমি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং মনে করছি। তবে প্যানিক হওয়ার কিছু নেই, মার্কেট নিজ থেকে ব্যালান্স হতে শুরু করবে। ক্রেতাদের জন্য ভালো সময় হতে পারে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আন্তরিক ও সক্রিয় হলে মার্কেট ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগবে না। বহুমাত্রিক সঙ্কটের কারণে গত কয়েক বছর ধরে মার্কেট এখন তলানিতে এসে পৌঁছেছে।

দ্বিতীয়ত, খাতভিত্তিক মার্কেট কেমন আচরণ করতে পারে? খাতভিত্তিক বলতে গেলে ব্যাঙ্ক খাত কিছুটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে, এখাতে বড় মূলধনী বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া ফিনান্স, ফুয়েল ও পাওয়ার, টেক্সটাইল এসব খাতের কিছু কিছু স্টকে সেল প্রেসার আসবে। আর ওভারঅল মার্কেট নেতিবাচক থাকলে কম বেশি সব স্টকে এর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আবার বলবো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হলে মার্কেট ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগবে না। মার্কেট স্বল্প সময় কিছুটা পতন হলেও আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

তবে ৩৫ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকবে। আগামী সপ্তাহ থেকে ৩৫টি ছাড়া বাকিগুলোর ওপর ফ্লোর প্রাইস থাকবে না। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের পর ঝিমিয়ে থাকা পুঁজিবাজার চাঙা করতে নতুন সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, এটি তারই অংশ। এ সিদ্ধান্তের ফলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে।

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কমিশন ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তালিকাভুক্ত ৩৫ প্রতিষ্ঠানে অব্যাহত থাকবে ফ্লোর প্রাইস। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার কারণে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার কার্যকর হবে।

আর ফ্লোর প্রাইসের আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, কমিশন আশা করছে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কারণে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং গতি ফিরে আসবে।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা একটি ভালো উদ্যোগ। এতে দেশে এবং দেশের বাইরে বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হবে পুঁজিবাজার।

বৈশ্বিক সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন রোধে প্রথমবার ২০২০ সালের ১৯ মার্চ ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়, যা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয় ২০২১ সালের ১৭ জুলাই। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় সব শেয়ারের দরে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে সংস্থাটি।

পরবর্তীতে ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ১৬৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিদিন একটি-দুটি শেয়ার কেনাবেচার বিপরীতে ১ শতাংশ হারে দর কমতে থাকায় গত বছরের ১ মার্চ তৃতীয় দফায় ফের ১৬৭টি কোম্পানির শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস ফিরিয়ে আনে বিএসইসি।

ফ্লোর প্রাইস নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকলেও পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তা বহাল রেখেছিল কমিশন। কিন্তু শেয়ার লেনদেন ব্যাপক কমে গেলে সমালোচনায় পড়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এমন বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ৩২১টি কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কারণে বাজারে যদি অব্যাহত পতন হয়, তবে ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকা কোম্পানিগুলো রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান যেকোনো প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলভিত্তি অনেক শক্তিশালী বলে তারা মনে করছেন।