শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের আমান ফিড বেশ কয়েক বছর ধরেই ঋণ জটিলতায় রয়েছে। এক কোম্পানির টাকা আরেক কোম্পানিতে ব্যবহার করতে গিয়ে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আমান ফিডের নামে ঋণ নিয়ে আমান সিমেন্টের মতো বড় প্রকল্প করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। যে কোম্পানি মুনাফা করতে না পারায় ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে কোম্পানি বড় মুনাফা থেকে এখন লোকসানের দ্বারপ্রান্তে।

এছাড়া ভালো মুনাফা দেখিয়ে উচ্চ প্রিমিয়ামে শেয়ার ইস্যু করে আমান ফিড। সেই কোম্পানি এখন উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারে ঋণে জর্জরিত হয়ে নিয়মিত তলানির দিকে যাচ্ছে। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দূর্ণীতি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় কোম্পানির সঠিক তথ্য বের করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি বিনিয়োগকারীদের।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা ৩ টাকা ৭৫ পয়সা থাকলেও এখন মুনাফা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২২ পয়সা এসে ঠেকেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি কতটুকু মুনাফা করতে পারে এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এক সময় আমান ফিড দেশব্যাপি ভালো ব্যবসা করে আসছিল। আমান ফিড লিমিটেড ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

এর তিন বছর পর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ হিসাব বছর থেকেই ধারাবাহিকভাবে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা কমতে দেখা গেছে। এমনকি সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে প্রত্যেকটি প্রান্তিকেও আগের হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে। কোম্পানির নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।

কিন্তু তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটিকে উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা তাদের ব্যক্তিগত কোম্পানির স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে বেকাঁয়দায় ফেলে দিয়েছে। যে কোম্পানিটির এখন পরিশোধিত মূলধনের থেকে কয়েকগুণ ঋণ বেশি। যে কারনে কোম্পানিটির সম্পত্তি নিলামে পর্যন্ত তোলার ঘোষণা দেয় ঋণ সরবরাহকারী ব্যাংক। কিন্তু আমান ফিডের যে পরিমাণ মুনাফা হয়, তাতে এই ঋণ নেওয়ার এবং থাকার কথা না।

আমান ফিডের আর্থিক কেলেঙ্কারীর বিষয়টি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেরও (বিএসইসি) দৃষ্টিগোচরে আসে। যে কারনে তারা কোম্পানিটির বিষয়াদি অনুসন্ধানে তদন্তে নামে। এছাড়া নিরীক্ষকের নিরীক্ষায়ও আমান ফিডের নানা আর্থিক কেলেঙ্কারীর বিষয় উঠে এসেছে।

আমান ফিড থেকে চলে যাওয়া সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিটির যে পরিমাণ বিক্রি ও মুনাফা হয়, তার অর্ধেকও যদি আর্থিক হিসাবে দেখানো যেতো, তাহলে বিনিয়োগকারীরা ভেসে যেত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে অন্য কোম্পানির জন্য ব্যবহার করা। যা সমন্বয় করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমান ফিডকে।

ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পারার কারনে সম্পত্তি নিলামে উঠার উপক্রম হওয়া আমান ফিড থেকেই আবার পরিচালকদের ব্যক্তিগত অন্য কোম্পানিতে ৪১ কোটি ১২ লাখ টাকা দেয়। আমান ফিডের গত ৩০ জুন মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ২১৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার ও স্বল্পমেয়াদি ২৬৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।

উল্লেখ্য, আমান ফিডের আর্থিক অবস্থা, উৎপাদন ও বিপনন কার্যক্রম ও প্রতিবেদন নানা অনিয়ম অসংগতিতে ভরা। আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজি ও করপোরেট গভর্নেন্স পরিপালনে অসঙ্গতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি তদন্ত করেছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

আইপিও মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার না করার পাশাপাশি কমিশনের কাছে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে আমান ফিডের প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক বাদে) ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানাও গুনতে হয়েছে। এছাড়া এবি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় আমান ফিডের সম্পদ নিলামেও উঠেছিল।