শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে টানা দরপতনে বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজার আজ ভাল তো কাল খারাপ। এ অবস্থার মধ্যে দিনের পর দিন চলছে। টানা দরপতন অব্যাহত থাকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আস্থা হারাতে শুরু করছেন বিনিয়োগকারীরা।

তাছাড়া কিছুতেই পুঁজিবাজারের পতন থামছে না। লেনদেনের শুরুতে সূচকের সামান্য ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকলেও দিনশেষে তা স্থির থাকছে না। বেশিরভাগ দিনই হচ্ছে পতন। দিন যত যাচ্ছে, চলমান পতন তত বড় হচ্ছে। আর পতন যত বড় হচ্ছে, পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উৎকণ্ঠা বাড়ছে। সম্প্রতি বড় পতন তাদের আরও ভাবিয়ে তুলছে।

ফলে বাজার স্থিতিশীল হবে, এই ভেবে এতদিন যারা অপেক্ষা করছিলেন তারাও উৎকণ্ঠায় ভুগছেন। তবে বাজার পতনের মূলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট কাজ করছে বলে মনে করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ৮ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ২৩ পয়েন্ট।

এদিকে টানা পতন থেকে বেরিয়ে মূল্যসূচকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছিল। ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে যাওয়া লেনদেন বেড়ে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে উঠে ছিল। এতে পতন কাটিয়ে পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরছে, এমনটাই প্রত্যাশা করছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি।

এদিকে এ পরিস্থিতিতে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা, বাড়ছে ক্ষোভ। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে সিঁদুরে মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাদের অবস্থা করুণ হবে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেন। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাজার-সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক মন্তব্যের ওপরও আস্থা রাখতে পারছেন না তারা। কারণ পুঁজিবাজারে এর প্রতিফলন নেই।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলেন, পুঁজিবাজারে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যাতে বাজারের এমন পরিস্থিতি হতে পারে। মূলত এ বাজার থেকে একটি চক্র লুটপাট করার চেষ্টা করছে। বিনিয়োগকারীরা চান মার্কেট ভালো থাকুক।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে আবুল কাশেম বলেন, বর্তমানে বাজারে নীরব দরপতন চলছে, যা আমাদের কাম্য নয়। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের অবস্থা আরও করুণ হবে। কয়েকদিনের পতনে ইতোমধ্যে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছি।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আজ প্রথম দুই ঘণ্টা সূচক বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে লেনদেন হলেও শেষ আড়াই ঘণ্টা সূচক পতন হয়েছে। শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি চাপ বেশি থাকায় শেষ আড়াই ঘণ্টা বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। এ কারণে দরপতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। তবে এ দরপতনকে দরপতন বলতে নারাজ বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, মূল্য সংশোধন। উত্থান পতন এটি পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক আচরণ। এতে বিনিয়োগকারীদের বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

ডিএসই সূত্র মতে, আজ মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১০টি কোম্পানির মধ্যে ১২৭টির শেয়ারের দাম কমেছে। তার বিপরীতে বেড়েছে ৩৩টি কোম্পানির শেয়ার। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬০ কোম্পানির শেয়ার। তাতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৮ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৯০ পয়েন্টে। ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস শরীয়াহ সূচক ১ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৭১ পয়েন্টে। আর ডিএস-৩০ সূচক ৫ দশমিক ৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩৮ পয়েন্টে।

এদিন ৩১০ প্রতিষ্ঠানের সাত কোটি ৪৬ লাখ ৯১ হাজার ৬২৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। যা টাকার অঙ্কে ৩৯১ কোটি ৫৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৩৮ কোটি ৬৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৪৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৫৪০ কোটি ০৯ লাখ টাকার।

এদিন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৩.২৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬০৫.৭৪ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসসিএক্স ১৪.০৩ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ১.৪১ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১৪.৮৩ পয়েন্ট এবং সিএসআই ১.০৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ১২২.৪৮ পয়েন্টে, এক হাজার ৩০৮.১৭ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৯০.৯২ পয়েন্টে এবং একহাজার ১৭৪.০২ পয়েন্টে।

সিএসইতে আজ ১৬০টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২০টির, কমেছে ৬৪টির আর দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৬টি। সিএসইতে আজ ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।