মনির হোসেন, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পুঁজিবাজার যখনই স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসতে শুরু করে তখনই দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারের দৌরাত্ব বেড়ে যাওয়ায় পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা স্থায়ী হচ্ছে না। যেসব কোম্পানির মৌলভিত্তি দুর্বল, শেয়ার সংখ্যা কম, আয় কম এবং ডিভিডেন্ডের রেকর্ড ভালো নয়, সেসব শেয়ার দর ক্রমেই বাড়তে থাকায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এতে করে বাজারের স্বাভাবিক গতি বার বার নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি প্রায় ১ মাস ধরে বাজার আজ ভাল তো কাল খারাপ। নামামাত্রা সূচকের উত্থান হলেও পরের দিন সূচকের বড় দরপতন হচ্ছে। এভাবে দিনের পর দিন চলছে পুঁজিবাজারের লেনদেন।

এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে বিমা ও প্রকৌশল খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির ফলে বড় দরপতন থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এদিন সূচকের দরপতন ঘটলেও দুর্বল মৌল ভিত্তি অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ভাল মৌল ভিত্তি শেয়ারের দাম কমেছে। কোন কোন দুর্বল মৌল ভিত্তি শেয়ারের দাম ১ মাসের ব্যবধানে ৩ থেকে ৪ গুন বেড়েছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ডিএসই কোন কার্যকর ভুমিকা চেখে পড়ছে না।

এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ১০ পয়েন্ট। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ১৬ পয়েন্ট। তবে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ফলে দুই কার্যদিবস দরপতনের মধ্যে লেনদেন শেষ হলো। ডিএসইর তথ্যমতে, আজ বাজারে ৩৭১টি প্রতিষ্ঠানের মোট ২৪ কোটি ৪২ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৬টি শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।

এতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৪ কোটি ৫৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৯৩২ কোটি ৭১ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এদিন দাম বেড়েছে ৬৩টি কোম্পানির শেয়ারের, বিপরীতে কমেছে ১১৬টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯২টির।

এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৫১ দশমিক ১০ পয়েন্টে। ডিএসই-৩০ সূচক ২ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯৭ দশমিক ৭৬ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসইএস সূচক ২ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৮৭ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে।

অপরদিকে সিএসইতে এদিন লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস সোমবার ১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১৩টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৫৮টি, কমেছে ৭১টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৮৪টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৬ দশমিক ২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৬৮ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে।

সিএসই-৫০ সূচক ১ দশমিক ৯০ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ৩ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩১৮ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৪১০ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্টে এবং ১১ হাজার ২১৯ দশমিক ৮২ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসআই সূচক ১ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৮৩ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে দুর্বল মৌল ভিত্তি শেয়ার নিয়ে হরিলুট চলছে। কোনো বিনিয়োগকারী যখন এককভাবে জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কেনেন তখন তিনি তার ইচ্ছায় কিনেন। কিন্ত যখন সার্বিক বাজারে ‘জেড ক্যাটাগরি’ ও দুর্বল মৌল ভিত্তি শেয়ারের উত্থান হয় তখন স্বাভাবিকভাবে বলা যায় এখানে কারসাজি হচ্ছে। বা গুজব ছড়ানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, খারাপ কোম্পানির শেয়ার জেনে বুঝে কিনে লোকসান হলে দায় কে নেবে? তবে পরামর্শ হচ্ছে, লাভ হলেই কিনতে হবে এ ধারণা থেকে বিনিয়োগকারীদের বের হয়ে আসা উচিত।