মনির হোসেন ও মুশফিকুর রহমান, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডের শেয়ারদর কোন কারণ ছাড়াই আকাশে উড়ছে। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির শেয়ার দর ঈদের পর (পবিত্র ঈদুল আযহা) থেকেই পাগলা হাওয়ায় উড়ছে। অথচ কোম্পানিটি গত চার বছর কোন বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দিচ্ছে না। কোম্পানিটি সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের জন্য ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ি, কোম্পানিটির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়ার কথা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোম্পানিটি এখনো ‘বি’ ক্যাটাগরিতেই লেনদেন হচ্ছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি যদি পর পর দুই বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে না পারে, তাহলে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে শ্রেণিভুক্ত হবে। বিএসইসির নিয়ম অনুযায়ি, কোম্পানিটি পর পর দুই বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। অথচ চার বছর লভ্যাংশ না দিয়ে কি ভাবে বি ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে এটা এখন সবার মুখে মুখে। যে কারণে কোম্পানিটি ‘ জেড’ ক্যাটাগরিতে যাওয়ার পথে রয়েছে।

এছাড়া কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ব্যাপারে কোম্পানির কর্তারা জড়িত রয়েছে অভিযোগ করে মতিঝিলের একাধিক সিকিউরিটিজ হাউজের বিনিয়োগকারী বলেন, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের শেয়ার দর সামনে আরো বাড়বে। কেন বাড়বে, সেটা বলতে পারছেন না কেউ। তাদের ওইসব কথা শুনে অনেকেই অতি উচ্চদরে শেয়ারটি কিনছে।

ফাঁদ দিয়ে শেয়ারবাজার থেকে দুষ্টচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে নিরীহ বিনিয়োগকারীদের অর্থ জানিয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, অর্থ হাতিয়ে নেবার দুষ্টচক্রের হাত খুব লম্বা। রেগুলেটর থেকে বিনিয়োগকারী পর্যন্ত তাদের লোকজন সাজানো। যেকোনো শেয়ার নিয়ে তারা খেলতে পারেন। খুব সহজেই নিরীহদের বোকা বানিয়ে চক্রটি কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকে। চক্রটি এতো ধূর্ত যে, কোনো আইনে তাদের ধরা সম্ভব হয় না। কোনো কারণে ধরা পড়লেও সামান্য সাজায় মাফ পেয়ে যায়। এসব কারণে পুঁজিবাজারে পতন লেগেই থাকে।

ঈদের পর টানা বাড়ছে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের শেয়ার। কারণবিহীন লাফিয়ে লাফিয়ে শেয়ারটির দর গত ২১ জুন ছিল ৮ টাকা ৩০ পয়সা। অথচ মাত্র ১ মাসের কম সময়ে সোমবার শেয়ারটির সর্বশেষ লেনদেন হয় ১০ টাকা ৭০ পয়সা। দিনভর শেয়ারটি ১১ টাকায় উঠানামা করে। মাত্র ১ মাসের কম সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির ৩০ শতাংশ শেয়ার দও বেড়েছে। শেয়ার দরের এ ধরনের বৃদ্ধি নিয়ে কোম্পানির শেয়ার ধারন করা বিনিয়োগকারীদের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যা এই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সুখবর নয়। অপরদিকে এ কোম্পানির শেয়ার দর কেন এতো বাড়ছে, তার প্রকৃত কারণ জানে না ধারন করা বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে যেখানে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে মাসের পর মাস অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, সেখানে কারসাজিকারিরা দুর্বল ও পচা শেয়ার নিয়ে হঠাৎ উঠেপড়ে লেগেছে। এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে, বিএসইসির কাছে দুর্বল ও পচা শেয়ার নিয়ে কারসাজির সুষ্ঠু তদন্তও দাবি করেছেন তাঁরা।

এবিষয়ে জানতে চাইলে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের(ডিএসইর) ভারপ্রাপ্ত এমডি সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, যে সকল কোম্পানি ঠিকভাবে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দেয়নি, সেই কোম্পানিগুলোর ক্যাটাগরি পরিবর্তনের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে কাজ চলছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে ডিএসই।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের শেয়ারপ্রতি সমন্বিত লোকসান হয়েছে ৫ টাকা ৪৬ পয়সা। এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২ টাকা ২৯ পয়সা। আর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৮২ পয়সা। এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে এ লোকসান ছিল ১ টাকা ৪৪ পয়সা। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৩৭ পয়সায়।

৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২১ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত লোকসান হয়েছে ৮ টাকা ৩ পয়সা। আগের হিসাব বছরে এ লোকসান ছিল ৩ টাকা ৮ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট দায় দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৯১ পয়সা। আগের হিসাব বছর শেষে শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছিল ৪ টাকা ১২ পয়সা।

এর আগে ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের জন্য ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। এর আগের হিসাব বছরের জন্য একই হারে স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। ২০১৬ হিসাব বছরের জন্য ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারাহোল্ডাররা।

সর্বশেষ রেটিং অনুসারে, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ঋণমান দীর্ঘমেয়াদে ‘এ মাইনাস’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘এসটি-থ্রি’। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২১ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ প্রত্যয়ন করেছে ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিংস লিমিটেড (এনসিআর)। ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১৭২ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

পুঞ্জীভূত লোকসান ২৩৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৭ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪২। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৩৩ শতাংশ। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৫.৮২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৪১.১৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।