শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের কিছু বিনিয়োগকারীর কাছে অনেকটাই রূপকথার ‘আলাদিনের চেরাগ’ হিসেবে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড। মাত্র পাঁচ কার্যদিবসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। দীর্ঘদিন ক্রেতা সংকটে দিনের পর দিন ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে থাকা ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা পাঁচ কার্যদিবস লেনদেনের শীর্ষ স্থানটি ধরে রেখেছে। আজ সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে লেনদেনের শুরুতে কোম্পানিটি শেয়ার বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ে। লেনদেনের ২ ঘন্টায় মাথায় বিক্রেতা চলে আসায় এক পর্যায়ে সেল প্রেসার বাড়তে থাকে।

বাজার বিশ্লেশণে দেখা যায়, ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার আজ ৩৮.৭০ পয়সা সকালে বিক্রেতা শুন্য হয়ে পড়ে। দিনের মধ্যে ৩২.৮০ পয়সা সর্বনিম্ন চলে আসলে দিনশেষে ৩৪ টাকা ১০ পয়সা লেনদেন হয়। প্রশ্ন হলো ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার এ কী লঙ্কাকান্ড ঘটছে। গত পাঁচ কার্যদিবস ধরে শেয়ার নিয়ে কারসাজি ঘটলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিরব ছিল। এখন এ শেয়ারের দাম আবার ফ্লোর প্রাইসে চলে আসলে এর দায়ভার কে নিবে।

এ ভাবে পুঁজিবাজার চলতে থাকলে সাধারন বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে বিমূখ হয়ে পড়বে। যেখানে খালি চেখে দেখা যায় গত পাঁচ কার্যদিবসে কারসাজি করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। সেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কী ভাবে চোখে দেখছে না।

এ কারসাজির নেপথ্যে শীর্ষ তিনটি ব্রোকারেজ হাউজ ও শীর্ষ তিন ব্যাক্তি জড়িত বলে বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। একটি সিন্ডিকেট চক্র বাজারে নানা গুজব ছড়িয়ে ফু-ওয়াং ফুডের ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে শ’ শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধির এই হাওয়ায় কোথায় যাবে, নেই তার কোনো ধারণা। শেয়ারটির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ইতোমধ্যে সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। তবে শেয়ারটির দর কেন বাড়ছে ব্যাখা নেই, কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে।

ফাঁদ দিয়ে পুঁজিবাজার থেকে দুষ্টচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে নিরীহ বিনিয়োগকারীদের অর্থ এ বিষয় বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, অর্থ হাতিয়ে নেবার দুষ্টচক্রের হাত খুব লম্বা। রেগুলেটর থেকে বিনিয়োগকারী পর্যন্ত তাদের লোকজন সাজানো। যেকোনো শেয়ার নিয়ে তারা খেলতে পারেন। খুব সহজেই নিরীহদের বোকা বানিয়ে চক্রটি কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকে। চক্রটি এতো ধূর্ত যে, কোনো আইনে তাদের ধরা সম্ভব হয় না। কোনো কারণে ধরা পড়লেও সামান্য সাজায় মাফ পেয়ে যায়। এসব কারণে পুঁজিবাজারে পতন লেগেই থাকে।।

ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর বৃদ্ধির প্রসঙ্গে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন বলেন, শেয়ার দর বাড়ার মতো কোনো মূল্য সংবেদনশীন তথ্য নেই। আমরা ডিএসইকে ইতিমধ্যে জানিয়েছি। তবে কেন শেয়ারের দাম বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানা নেই। শেয়ার দর বৃদ্ধিতে আমরা ও আমাদের কোন কর্মকর্তা জড়িত নেই দাবি করে তিনি বলেন, গত ৭ কার্যদিবস প্রায় ৫০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে। কেন বেড়েছে সেটা আমার জানা নেই। যারা এতো দরে শেয়ারটি কিনছে, তারাই কেবল বলতে পারবে।

এদিক শেয়ার দর অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে ফু-ওয়াং ফুডকে গত বৃহস্পতিবার ডিএসই নোটিস পাঠিয়েছি। এর জবাবে রোববার কোম্পানিটি জানিয়েছে, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। ওই জবাবের পরও ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর নিয়ে কাজ করছি। দর বাড়ার কারন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অতি দরের ব্যপারে প্রয়োজনে ফু-ওয়াং ফুডকে ফের নোটিশ পাঠাবো। প্রয়োজনে জরুরি ব্যবস্থা নিবো।

কোম্পানিটি শেয়ার দর বৃদ্ধির বিযয়টি খতিয়ে দেখছি জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা। শেয়ারটির দর বাড়ানো ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া গেলে, কেবল সেই ক্ষেত্রে কোম্পানির বা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।