শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের ইন্ট্রা+ডে ট্রেডিং বা টি+২ সুবিধা দিতে সক্ষম, সেখানে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখনও টি+২ চক্রে আটকে আছে। বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজারে টি+২ সেটেলমেন্ট চক্র চালু থাকার কারণে শেয়ার কেনার পর তৃতীয় কার্যদিবসে সেই শেয়ার বিক্রি করা যায়। যার ফলে শেয়ারবাজারের লেনদেন হয় প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম।

পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগের সুবিধার্থে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে সময় কমানোর জন্য বারবার উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। প্রায় এক বছর ধরে এই উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা চললেও তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

গত রোববার (১৮ জুন) অনুষ্ঠিত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অভ্যন্তরীণ আলোচনা সভায় এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা সভায় বিষটয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়েছে বলে অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন জানিয়েছেন। এর আগে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজারে লেনদেন বাড়াতে টি+১ (জেড ক্যাটাগরি ব্যতীত) সেটেলমেন্ট চালু করতে চেয়েছিল।

গত মার্চ’২২ এর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। গত ৫ জুন ২০২২-এ বিএসইসি টি+১ সেটেলমেন্ট চক্র বাস্তবায়নের বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) কে চিঠি দেয়।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘দেশের শেয়ারবাজারে টি+১ সেটেলমেন্ট বাস্তবায়নে অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা একটি বড় বাধা, এখনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিজেই পুরোপুরি অনলাইন হয়নি। আরেকটি সমস্যা হল একটি চেক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্যাশ হতে তিন দিন সময় লাগে।

ফলে যদি টি+১ চালু করা হয় তাহলে শেয়ারগুলি একদিন আগেই বিক্রি যোগ্য হবে। যা ব্রোকারেজ হাউসগুলি তাদের অর্থ পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে৷ এই ইস্যুতে অনেক ব্রোকারেজ হাউস এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। এখন বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে কেউ শেয়ার কিনে পরের দিন স্পট মার্কেটে বিক্রি করতে পারে। এক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু মূল বাজারগুলোতে এখনো এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হয়নি।

গত ১১ অক্টোবর ২০২২-এ বিএসইসি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসই কর্তক সমস্ত ব্রোকারেজ হাউসে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল যে, চেক নগদ না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে না। এতে শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো এই নির্দেশনা বাতিলের জন্য বিএসইসির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। শেয়ারবাজারে দরপতন এবং বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউসের চাপে অবশেষে কিছু শর্ত সাপেক্ষে চেক জমা দিয়ে শেয়ার কেনার আগের সুবিধা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন এবং ভলিউম বাড়বে যদি টি+১ সেটেলমেন্ট সাইকেল বাস্তবায়িত হয় এবং সংশ্লিষ্ট সকলেই উপকৃত হবে।’

তবে বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘টি+১ সেটেলমেন্টে আমাদের দেশের শেয়ারবাজারে কোনো উন্নয়ন হবে না। যদিও এটা জুয়াড়িদের জন্য ভালো হবে। কিন্তু প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা এই প্রক্রিয়ার সুবিধা ভোগ করতে পারবে না।’ ১৯৯৮ সালে সকালে শেয়ার কিনে বিকালে বিক্রি করা যেত। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে তখন এই ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ বিষয়ে বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তারা যদি মনে করে যে দেশের শেয়ারবাজারে টি+১ বাস্তবায়ন সম্ভব, তাহলে বিএসইসি অবশ্যই সহযোগিতা করবে। দেশের শেয়ারবাজারে টি+১ কার্যকর হলে লেনদেন বাড়বে এবং ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।