শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচকের দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। মুলত গত সপ্তাহে টানা চার দিন দরপতনের পর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচক কিছুটা বেড়েছে। তবে সূচক বাড়লেও লেনদেনে মন্ধা পরিস্থিতি বিরাজ ছিলো। মুলত দুই মাস পর লেনদেন পাঁচশ কোটি টাকার নিচে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিতে চাইছেন। তবে কম দামেও ক্রেতার দেখা মিলছে না।

ঈদুল ফিতরের আগে থেকে একটু একটু করে গতি ফিরতে থাকা পুঁজিবাজার এই উল্টো যাত্রা বিনিয়োগকারীদের আবার হতাশ করছে। আলোচিত সপ্তাহে দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম। তাতে কমেছে লেনদেন ও সূচক। সপ্তাহজুড়ে সূচক কমায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন (পুঁজি) কমেছে ৪ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। সপ্তাহজুড়ে বাজার বিশ্লেষণে এ চিত্র দেখা গেছে। একই অবস্থা দেশের পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)।

ডিএসইর তথ্য মতে, ১১ জুন সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে লেনদেনের শুরুতে ডিএসইর মূলধন ছিল ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮৮ কোটি ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৮৯০ টাকা। আর শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) লেনদেন শেষে মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৯ কোটি ১৮ লাখ ৩৯ হাজার ৮৫৪ টাকা। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে পুঁজি কমেছে ৪ হাজার ১৫৯ কোটি ১০ লাখ ৩৬ টাকা। এর আগের সপ্তাহ মূলধন কমেছিল ৫৯২ কোটি ৯৮ লাখ ৪ হাজার ৫৯০ টাকা। এর ফলে টানা দুই সপ্তাহ মূলধন কমলো। তবে তার আগের টানা চার সপ্তাহ মূলধন বা পুঁজি বেড়েছিল।

এদিকে পুঁজিবাজারে দরপতনের কারণ কী গতি ফিরতে থাকা পুঁজিবাজারের উল্টোপথে যাত্রা নিয়ে জানতে চাইলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সংগঠন স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন ডিবিএর সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও দুটি কারণের কথা তুলে ধরেছেন। একটি হল মুদ্রানীতি, অপরটি অর্থবছর শেষের মাস জুনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর বিক্রয়চাপ।

তিনি বলেন, পত্রপত্রিকায় দেখলাম মূদ্রানীতি নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এগুলো অনেক হিসাব করে। এবার মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা। ব্যাংকের সুদহারের ৬ ও ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়া, রিজার্ভের নতুন ক্যালকুলেশন এবং ডলারের দাম বাজারের চাহিদার কাছে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে কথা চলছে। অনেকে হয়ত চিন্তা করছে কী হয় দেখি। আবার জুন মাসে কিছু সেল প্রেসারও থাকে।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে লভ্যাংশ তুলে নেয়। সেটা সাধারণত মাসের শেষ সপ্তাহে হয়। তবে এবার মানি ফ্লো বেশি থাকায় ইনস্টিটিউশন হয়ত ক্যাপিটাল গেইন নিয়ে নিয়েছে আগে। আমার ধারণা, সব শেষ করে বাজার খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ৩ হাজার ৮৬৯ কোটি ৬১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যার পরিমাণ আগের সপ্তাহে হয়েছিল ৫ হাজার ৪৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন ১ হাজার ৫৭৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা কমেছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৮০ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক .৯৬পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক .৪৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে এবং ২ হাজার ১৮২ পয়েন্টে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯১ টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৪২ টির , কমেছে ১৪১ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০৭ টির শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর। অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১০১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার। যার পরিমাণ আগের সপ্তাহে ছিল ৯৯ কোটি ২ লাখ টাকার।

অর্থাৎ লেনদেন বেড়েছে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৬০ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩১০ টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩৫টির দর বেড়েছে, ১২৬টির দর কমেছে এবং ১৪৯ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।