শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের কিছু বিনিয়োগকারীর কাছে অনেকটাই রূপকথার ‘আলাদিনের চেরাগ’ হিসেবে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি জেমিনি ফুড লিমিটেড। ২০২১ সালের জুন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিলো ১৪৮ টাকা ২০ পয়সা। গত বছরের মে মাস যেখানে শেয়ারটির দর ছিল ৩০০ টাকা নিচে।

অথচ মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে বৃহস্পতিবার শেয়ারটির দাম লেনদেন হয়েছে ৮৭০ টাকা ৫০ পয়সা। ইপিএস বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। জেমিসি ফুডের অস্বাভাবিক ইপিএস বাড়া নিয়ে বিনিয়োগকারী সহ বাজার সংশ্লিষ্টদের মাঝে কৌতুহলের শেষ নেই।

কোম্পানিটি তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৮ টাকা ২০ পয়সা আয় হয়েছে। অথচ গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিলো ০৪ পয়সা। অন্যদিকে তিন প্রান্তিক মিলিয়ে ( জুলাই’২২-মার্চ’২৩) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১৫ টাকা ৩০ পয়সা। গতবছর একই সময়ে ৫ টাকা ১৬ পয়সা আয় হয়েছিল। গত ৩১ মার্চ ২০২৩ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২৫ টাকা ৩৮ পয়সা।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের ২৬ মে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ২৯৬ টাকা ৪০ পয়সা, যা টানা এক বছরের বেশি সময় বেড়ে ৩ মে লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৮৭০ টাকা ৫০ পয়সায়। প্রশ্ন হলো ডলার সংকট এছাড়া করোনা পরবর্তী কোম্পানিটির এত মুনাফার রহস্য কোথায়। এছাড়া টানা শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে কোম্পানিটির পরিচালক ও কারসাজি চক্রের উপর ইন্দন রয়েছে।

এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেখেও না দেখার ভান করছে। যেখানে স্কয়ার ফার্মার মতো ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে সেখানে দুর্বল জেমিনি ফুডের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি নিয়ে সাধারন বিনিয়াগকারীদের মাঝে মসকারার শেষ নেই।

এদিকে গত মাসের ৫ ও ৬ এপ্রিল দুই দফায় ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়। সতর্তবাতার পরও পাগলা ঘোড়ার মত ছুটছে জেমিনি সি ফুডের শেয়ার দর। সতর্কবার্তায় বলা হয়, জেমিনি সি ফুডের শেয়ারের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করা হয়।

জবাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে তার পেছনে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। অন্যদিকে, কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার চিত্র দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ ও ৩০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগে ২০২১ সালে বিনিয়োগকারীদের মাত্র ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।

মাত্র ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৬১ লাখ ৫ হাজার ২০৬টি। এর মধ্যে ৩০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৪০ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর ২৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ আছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। এছাড়া দশমিক ৩৩ শতাংশ আছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে।