শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: মাত্র ১৬ কার্যদিবসের ব্যবধানে লোকসানী লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের দাম ৩৯ টাকা থেকে ৮৯ টাকায়। তবে ১৬ কার্যদিবসে দ্বিগুনের বেশি বাড়লেও বিএসইসি চোখে পড়ছে না। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কী ভাবে বাজার স্থিতিশীল হবে। এ ভাবে চলতে থাকলে পুঁজিবাজারে কখনো আস্থা ফিরবে না। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটে রয়েছে।

এর মধ্যে দুর্বল মৌল ভিত্তি শেয়ারের দাম বাড়লেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় আরো আস্থা সংকটে ভুগছে বিনিয়োগকারীরা। বাজার বিশ্লেষকদের প্রশ্ন দুর্বল শেয়ার বাড়িয়ে কখনেই বাজার স্থিতিশীল হবে না, বাজার স্থিতিশীল আনতে হলে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দাম বাড়াতে হবে।

এদিকে বছরের পর বছর লভ্যাংশ বঞ্চিত লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের বিনিয়োগকারীরা। লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না কোম্পানিটি তবুও শেয়ার দরে আকাশ ছোয়া। এছাড়া সুশাসনের অভাব ছিল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতেই। বরং নতুন করে উঠেছে কারসাজির অভিযোগ। গত কয়েকদিন প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর বৃদ্ধির হার এমনই ইঙ্গিত করছে।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারণ ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর যেভাবে বাড়ছে তা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এখনো এমন কোনো চমক দেখাতে পারেনি কোম্পানিটি। বরং বড় ধরনের ঋণের বৃত্তে ঘুরছে কোম্পানিটির চাকা। সঙ্গত কারণেই শেয়ারদর নিয়ে কারসাজি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করা অর্থ মাত্র ১৬ কার্যদিবসে দ্বিগুনের বেশি বাড়ছে। আর্থিক ভিত্তি খুব একটা শক্ত না হলেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে কোম্পানিটির শেয়ার। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এই দামবৃদ্ধিকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এজন্য ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তাও প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু সেই সতর্কবার্তায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না।

কারসারিজ মাধ্যমে কোনো বিশেষ চক্র কোম্পানিটির শেয়ার দাম এভাবে বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের লভ্যাংশের ইতিহাস খুব একটা ভালো নয়। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এমনকি চলমান হিসাব বছরেও কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে।

তাদের অভিমত, এ ধরনের একটি কোম্পানির শেয়ার দাম হুট করে যেভাবে বেড়েছে, তা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। এর পেছনে কারসাজি চক্র জড়িত থাকতে পারে। ফলে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৯ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ৪২ টাকা ৩০ পয়সা।

সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে ৩ এপ্রিল লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৮৯ টাকা ৮০ পয়সায়। অর্থাৎ ১৬ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৯ টাকা ৪০ পয়সা বা ৯৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। এদিকে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার কোম্পানিটিতে ভূয়া নগদ অর্থ দেখানো, আয়কর অধ্যাদেশ ভঙ্গ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা পরিপালন না করা, শ্রম আইনের ব্যত্যয়সহ নানা কেলেঙ্কারি রয়েছে। এমন একটি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে গত কিছুদিন যাবত চলছে কারসাজি।

লিগ্যাসি ফুটওয়্যার নিরীক্ষায় নানা কেলেঙ্কারির বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে কোম্পানির প্রধান অফিস ও কারখানায় যথাক্রমে নগদ ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ও ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা উল্লেখ করেছে। তবে নিরীক্ষা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই অর্থের বিশ্বাসযোগ্য ও পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। যাতে কোম্পানি নগদ অর্থ বেশি দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

কোম্পানিটিতে গত অর্থবছরের শেষে গ্রাহকদের কাছে ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে আর্থিক হিসাবে দেখানো হয়েছে। যা কয়েক বছর ধরেই আদায় হচ্ছে না। এই অবস্থায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বিগত বছরে কিছু পরিমাণ ইমপেয়ারম্যান্ট লস দেখিয়েছে। কিন্তু নিরীক্ষকের মতে, প্রকৃতপক্ষে ওই পাওনা অর্থের মধ্যে একটি বড় অংশ আদায় হবে না। এতে করে কোম্পানির লোকসান হবে। যা ইমপেয়ারম্যান্ট লসের তুলনায় অনেক বেশি।

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কর্মীদের বেতন, ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট এবং পণ্য বিক্রি ও কাঁচামাল ক্রয়সহ সব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলের বাহিরে গিয়ে নগদে করেছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশ এর ৩০ ধারার (আই) এবং (এম) ভঙ্গ করা হয়েছে।

যা কোম্পানিটির ভবিষ্যতে অতিরিক্ত কর প্রদানের দায় সৃষ্টি করতে পারে। তবে কোম্পানির কয়েক বছর ধরে ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট ঝুঁলে থাকায় কি পরিমাণ দায় বাড়তে পারে, তা হিসাব করা যায়নি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।