শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দুই স্টক এক্সচেঞ্জে নেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। ছয় মাস হতে চললেও এমডি খুঁজে পায়নি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। সূত্র জানায়, ডিএসইর এমডি পদ শূন্য হয় চলতি বছরের ১১ জুলাই। আর সিএসইর পদশূন্য হয় ১ জুন। এই সময়ে পর দুই স্টক এক্সচেঞ্জ দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও নতুন এমডি খুঁজে পাচ্ছে না। গত আগস্টে পর্ষদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে এমডি পদ থেকে পদত্যাগ করেন তারিক আমিন ভূঁইয়া। এরপর থেকে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন আগ্রহী প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে ডিএসই। কিন্তু তাদের কাউকেই পদটির যোগ্য বলে মনে হয়নি নিয়োগ কমিটির। এমনটিই জানা গেছে ডিএসই সূত্রে।

বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে স্টক এক্সচেঞ্জের ভূমিকা অনেক বেশি। দীর্ঘদিন থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জে এমডি না থাকায় বাজার উন্নয়নের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যদিও স্টক এক্সচেঞ্জের অন্য দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের দিয়ে কোনোমতে স্টক এক্সচেঞ্জকে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ডিএসইর নমিনেশন অ্যান্ড রেমিউনেরেশন কমিটি (এনআরসি)-এর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে পরিচালনা করার মতো কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি, যার কারণে কাউকে নিয়োগ দিতে বোর্ডের কাছে সুপারিশও করা হয়নি। তবে ডিএসই একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি, যা একটি আইন দ্বারা পরিচালিত হয়।

এই প্রতিষ্ঠানকে ভালোভাবে পরিচালিত করার জন্য যেরকম দক্ষ ও গুণাবলি সম্পন্ন নেতৃত্ব প্রয়োজন, সেটি এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে গত ১৯ ডিসেম্বর ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত এমডিসহ যে আটজন ব্যক্তি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তাদের কাউকেই নিয়োগ দিতে সুপারিশ করা হয়নি বলে জানান তিনি। বর্তমানে ডিএসইর চিফ অপারেটিং অফিসার এম সাইফুর রহমান মজুমদার ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করছেন।

গত দুই বছরে ডিএসইর দুইজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেছেন। প্রায় এক বছর দায়িত্ব পালনের পর, সর্বশেষ এমডি তারিক আমিন ভূঁইয়া গত আগস্টে বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে পদত্যাগ করেন, যা ৮ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়। এর আগে, তিন বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়া কাজী সানাউল হক দায়িত্ব নেওয়ার ১০ মাসের মাথায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।

সাধারণত, পদত্যাগ কিংবা মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে এমডি নিয়োগ দিতে হয় পারে ডিএসই। এই সময়ে ডিএসই নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চাইলে প্রতিষ্ঠানটির এমডি নিয়োগ দিতে পারে।

গত সেপ্টেম্বরে তারিক আমিন ভূঁইয়ার পদত্যাগ কার্যকর হওয়ার পর, গত ৮ ডিসেম্বর তিন মাস শেষ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে এমডি নিয়োগ দিতে না পারায় বিএসইসির কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন করে ডিএসই। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এমডি নিয়োগের সময় আরও এক মাস বাড়ায়, যা শেষ হবে আগামী ৮ জানুয়ারি।

তবে গত ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত, আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্য থেকে এনআরসি কাউকে নিয়োগের সুপারিশ না করায় এই সময়ের মধ্যে এমডি নিয়োগ সম্ভব হবে না বলে জানা গেছে। আইন অনুযায়ী, এমডি নিয়োগের জন্য ডিএসই কমিশনের কাছে আবারও সময় চাইবে অথবা কমিশন প্রতিষ্ঠানটিতে এমডি নিয়োগ দেবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক কর্মকর্তা জানান, ডিএসই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কমিশনের কাছে আবারও সময় চাইবে কিনা, এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী বোর্ড সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। এমডি পদ শূন্য হওয়ায় গত ৬ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে যোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন চায় ডিএসই।

নির্ধারিত সময়ে ডিএসইর এমডি হতে ১৮ জন প্রার্থী আবেদন করেন। এরমধ্যে ৮ জন প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ডিএসই বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেগুলেশন-২০১৩ অনুসারে, এমডি নির্বাচিন করবে এনআরসি, সে সিদ্ধান্ত বোর্ডের দ্বারাও সুপারিশ করা হবে। বোর্ডের সুপারিশের পর বিএসইসি তিন বছরের জন্য একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেবে।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১২ জুলাই ডিএসইতে এমডি হিসাবে যোগ দেন কাজী আবু মোহাম্মদ মাজেদুর রহমান। তিন বছর দায়িত্ব পালনের পর চলতি বছরের ১১ জুলাই দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। মাজেদুর রহমানের দায়িত্ব পালন শেষ হলে ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আব্দুল মতিন পাটোয়ারী ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ জুন এম সাইফুর রহমান সিএসইর এমডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এমডি পদ শূন্য হলে ১ জুন থেকে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন গোলাম ফারুক। তিনি সিএসই জিএম হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।