শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (আরএসআরএম) উদ্যোক্তা পরিচালকরা গোপনে কোম্পানিটির বিশাল শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। যার পরিমাণ ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ। শেয়ারগুলোর বাজারমূল্য ৩১ কোটি টাকারও বেশি। এর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিংবা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বা চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিইসি) জানানো হয়নি।

যদিও সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি করতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জকে অবহিত করতে হয়। এই বিষয়ে ডিএসইর এক কর্মকর্তার মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানিটি কোনো ক্ষেত্রেই কোনো নিয়ম প্রতিপালন করেনি। ডিএসই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩০ জুন তারিখে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিল ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ। গত ৩১ জুলাই ২০২২ তারিখে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে। এতে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমেছে ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ বা ১ কোটি ৭৩ লাখ ০৩ হাজার ৩৩৪টি। অথচ এর জন্য তারা ডিএসই বা সিইসিতে কোনো ধরনের তথ্য দেননি।

এদিকে, গত ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ১৭ টাকা থেকে সাড়ে ১৮ টাকা। সেই হিসাবে উল্লিখিত শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা ৩১ কোটি টাকার বেশি অর্থ বাজার থেকে তুলে নিয়েছেন। এদিকে, ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ও ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের অভাবে আরএসআরএমের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর ফলে ২০২১ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। সে বছর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ৭৫ পয়সা।

চট্টগ্রামের ইস্পাত খাতের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস আরএসআরএম নামেই বেশি পরিচিত। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক টার্নওভার ছিল প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। যেই কারখানাটিকে ঘিরে প্রায় ৮০০ কর্মী উৎপাদন কাজে নিয়োজিত ছিল। কিন্তু ৪০ কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের কারণে গ্রুপটির কারখানার উৎপাদন গত এক বছর ৯ মাসের বেশি বন্ধ রয়েছে। গ্রুপটির কাছে বর্তমানে ১০টি ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ আটকে আছে।

এই পাওনা আদায়ে প্রতিষ্ঠাটির কর্ণধারদের বিরুদ্ধে এই পর্যন্ত ২০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের দুটি এনআই অ্যাক্ট মামলায় গ্রুপটির কর্ণধারদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। রতনপুর গ্রুপের কাছে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে চট্টগ্রামস্থ জনতা ব্যাংক লালদীঘি শাখার। এর মধ্যে মেসার্স মডার্ন স্টিল মিলস লিমিটেডের কাছে ৪০৯ কোটি, মেসার্স রতনপুর শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে ৩১৩ কোটি ও এসএম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের কাছে ৪৮২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

জনতা ব্যাংকের লালদীঘি করপোরেট শাখা সূত্রে জানা যায়, রতনপুর গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে ঋণের টাকা শোধ করছে না। এই পাওনার বিপরীতে তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থঋণ ও এনআই অ্যাক্টে ছয়টি মামলা করেছে ব্যাংক। এর মধ্যে এনআই অ্যাক্টে দায়ের করা দুই মামলায় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

রতনপুর গ্রুপের কাছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থাৎ ৬৬৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে সোনালী ব্যাংকের। এর মধ্যে মেসার্স মডার্ন স্টিল মিলস লিমিটেডের কাছে ৪৬২ কোটি ও রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের কাছে ২০১ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ব্যাংকটির লালদীঘি শাখার।

এ ছাড়া রতনপুর শিপ রিসাইক্লিংয়ের কাছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১৫০ কোটি ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৫৬ কোটি, মেসার্স মডার্ন স্টিল রি-রোলিংয়ের কাছে ট্রাস্ট ব্যাংকের ৬০ কোটি, এসএম স্টিল রি-রোলিংয়ের কাছে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের ৫৫ কোটি এবং প্রাইম ফাইন্যান্সের ২৪ কোটি টাকা পাওনা আটকে আছে। ব্যাংকগুলোর দায়ের করা মামলায় রতনপুর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাকসুদুর রহমান,

চেয়ারম্যান শামসুন নাহার রহমান, এমডির সহোদর ইউনুস ভূঁইয়া, দুই ছেলে মিজানুর রহমান ও মারজানুর রহমান, মডার্ন স্টিল মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আলা উদ্দিনকে বিবাদী করা হয়েছে।এর মধ্যে কোম্পানিটির এমডি মাকসুদুর রহমান গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন এবং বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।