শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বাড়ানোর অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শেয়ার কারসাজির বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। তাই প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ওই তিন ব্যক্তিকে মোট ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সম্প্রতি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

অভিযুক্তরা হলেন সিটি ব্রোকারেজের বিনিয়োগকারী মো. এজি মাহমুদ ও তার ভাই একই ব্রোকারেজ হাউসের বিনিয়োগকারী মো. সাইফ উল্লাহ এবং এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের বিনিয়োগকারী ও শিক্ষিত বেকার কেন্দ্রীয় সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন শেখ।

তারা একে অপরের সহযোগিতায় কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগের কারণে মো. এজি মাহমুদকে ১০ লাখ টাকা, মো. সাইফ উল্লাহকে ১৫ লাখ টাকা ও মো. জসিম উদ্দিন শেখকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে মো. জসিম উদ্দিন শেখ ও তার সহযোগীরা মোট চার কোটি ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৭২৫ টাকা রিয়েলাইজড গেইন করেছেন।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর সেকশন ২২ ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর ধারা ১৮-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এ আদেশ জারি করার ৩০ দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের বিএসইসির অনুকূলে দণ্ডিত অর্থ ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মধ্যে বিএসইসিতে জমা দিতে বলা হয়েছে।

অন্যথায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর সেকশন ১৭(ই)(৫) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৪(১) লঙ্ঘন করেছে।

তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন-সংক্রান্ত তদন্ত করে ডিএসই। তদন্তে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার ২৯ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কারসাজি করে বাড়িয়ে ৬৭ টাকা ৪০ পয়সায় বা ১২৯ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়। অধিক পরিমাণ শেয়ার কেনাবেচার মাধ্যমে মো. জসিম উদ্দিন শেখ এবং তার দুই সহযোগী এজি মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহ একে অপরের সহযোগিতায় কৃত্রিমভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়িয়েছেন।

আলোচ্য সময় মো. এজি মাহমুদ প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কেনেন ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭১১টি। ওই সময় তিনি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করেন তিন লাখ ৬৭ হাজার ৩০৬টি। একইভাবে মো. সাইফ উল্লাহ কোম্পানিটির শেয়ার কেনেন ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৮৯টি। ওই সময় তিনি কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করেন চার লাখ ৬০ হাজার ৮৯১টি।

এছাড়া শিক্ষিত বেকার কেন্দ্রীয় সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির নামে কোম্পানিটির শেয়ার কেনা হয় ১২ লাখ ৭১ হাজার ১১৮টি। ওই সময় প্রতিষ্ঠানিটির পক্ষ থেকে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের ১৩ লাখ ২৬ হাজার ১১৮টি শেয়ার বিক্রি করা হয়।

এ বিষয়ে ও রিয়েলাইজড গেইনের বিপরীতে জরিমানার পরিমাণ কম কেন জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, যখন কোনো শেয়ার কারসাজি নিয়ে তদন্ত করা হয়, তখন যেসব অভিযোগ থাকে এবং কারসাজির ধারণা করা হয় তার সব প্রমাণিত হয় না। এরপর শুনানিতে অভিযুক্তদের বক্তব্য ও আপিলের ভিত্তিতে এবং তারা কত টাকা মুনাফা করেছে সেই ধারণার ওপর নির্ভর করে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ থেকে কমিশনকে পরামর্শ দেয়া হয়।

তখন কমিশন সর্বনি¤œ এক লাখ টাকা ও সর্বোচ্চ আনলিমিটেড জরিমানা করার আইনের ভিত্তিতে প্রমাণ হওয়া অপরাধ, বক্তব্য ও এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরামর্শ এবং কাগজপত্রের ওপর নির্ভর করে জরিমানা করে। তাই আনরিয়েলাইজড বা রিয়েলাইজড গেইন বেশি হলেও জরিমানা কম হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৪(১)-এ উল্লেখ রয়েছে, কোনো কোম্পানির ধারণকৃত শেয়ারের পরিমাণ যদি ১০ শতাংশ বা তার অধিক পর্যায়ে উন্নীত হয়, অথবা ১০ শতাংশ বা তার অধিক কোনো শেয়ার ধারণ বা ধারকগণ ওই কোম্পানিটির আরও শেয়ার অর্জন বা অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে,

তফসিল-১-এ বর্ণিত পদ্ধতিতে কোম্পানিটি যে এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত, সেই এক্সচেঞ্জের সংশ্লিষ্ট অধিগ্রহণকারী স্টক ব্রোকার বা মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে একটি ঘোষণা দাখিল করবে। কিন্তু জসিম উদ্দিন শেখ এবং তার দুই সহযোগী এজি মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহর সহযোগীরা প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ধারণের সময় তা পরিপালন করেননি।