শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভ্যাট সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের তিনটি অঞ্চলের ভ্যাট সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড, যেটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি বিতর্কিত কোম্পানি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জেনেক্স ইনফোসিস ও এর উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে চিহ্নিত কারসাজিকারকদের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে কারসাজিতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুঁজিবাজারের আলোচিত কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরোর সঙ্গে জোট বেঁধে অন্তত তিন কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস ও এর চেয়ারম্যান চৌধুরী ফজলে ইমামের বিরুদ্ধে।

পুঁজিবাজার কারসাজিতে আলোচিত এই প্রতিষ্ঠানটিকেই আগামী তিন বছরে ঢাকার দুটি ও চট্টগ্রামের একটি অঞ্চলের সবধরনের খুচরা দোকানে তিনটি লটে তিন লাখ ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) স্থাপন করে বিক্রয় তথ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভ্যাট সংগ্রহ করার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডকে সরবরাহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি পর্যায়ে ভ্যাট সংগ্রহে সহায়তা করতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ভ্যাট আদায়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সরবরাহকারী হিসেবে কোম্পানিটির নাম নির্ধারণ করে প্রস্তাব দেয় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, যা পরবর্তিতে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত কমিটি অনুমোদন দেয়।

অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল বারিক সাংবাদিকদের জানান, জেনেক্স ইনফোসিস নিজেরা ভ্যাট সংগ্রহ করবে এবং ওই তথ্য সরকারকে দেবে। কোম্পানিটি আগামী তিন বছরে রাজধানী ঢাকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ও চট্টগ্রামের একটি এলাকায় খুচরা ব্যবসায়ী পর্যায়ে অন্তত এক লাখ করে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বসাবে। ভ্যাট আদায় থেকে প্রথম লটে দশমিক ৫২ শতাংশ, দ্বিতীয় লটে দশমিক ৫২৯ শতাংশ এবং তৃতীয় লটের জন্য দশমিক ৫৩৮ শতাংশ কমিশন পাবে জেনেক্স। ইএফডি মেশিন স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণও তারা করবে। এখানে সরকারের কোনো বিনিয়োগ করতে হবে না।

ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হিরো ও তার সহযোগীরা কারসাজির মাধ্যমে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দর প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়ায়। উল্লিখিত সময়ে ওয়ান ব্যাংকের ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার শেয়ার কেনে জেনেক্স ইনফোসিস। একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির সময়ে জেনেক্স ইনফোসিস দুটি বিও হিসাবের মাধ্যমে প্রায় ২৩ লাখ শেয়ার কেনার মাধ্যমে অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। একই কারসাজিকারকরা ২০২১ সালের ৫ মে থেকে ২৪ মে সময়ের মধ্যে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ারের দর ১৭২ শতাংশ বাড়ায়। ব্যাংকটির শেয়ারদর বৃদ্ধিকালে জেনেক্স ইনফোসিসের চেয়ারম্যান চৌধুরী ফজলে শামীম ব্যাংকটির ২৩ লাখ ৬৭ হাজার শেয়ার কেনেন।

কারসাজি চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ থাকা প্রতিষ্ঠানকে ইএফডি বসানো ও ভ্যাট আদায়ের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি এটা সমর্থন করি না। আমি মনে করি এটা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাজ। এনবিআর নিজেদের লোক দিয়ে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বসিয়ে ভ্যাট আদায় করবে। বেসরকারি খাতে দেওয়া ঠিক হবে না। অবশ্য বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসক নীতি) জাকিয়া সুলতানা। জেনেক্স ইনফোসিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।