শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর সেই ৯৫ কর্মকর্তাকে আগের পদ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে ইমেইল করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বুঝতে পারছেন না, তারা এখন কোন পদে। এর কারণ, নতুন পদ ব্যবহার করতে নিষেধ করা হলেও নতুন পদের যে সুযোগ সুবিধা, সেগুলো বহাল আছে। স্টক এক্সচেঞ্জটির পক্ষে থেকে বলা হচ্ছে কিছু কিছু কর্মকর্তার পদোন্নতির সিদ্ধান্ত সংশোধন হবে।

তবে কর্মকর্তারা বলছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে পদোন্নতি দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর এখন এসব কর্মকাণ্ডে তারা মানসিক চাপে আছেন। আর এমন সিদ্ধান্তের আভাসে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের মাঝে। অবশ্য স্টক এক্সচেঞ্জটির পক্ষে থেকে বলা হচ্ছে বাতিল নয়, সংশোধন হচ্ছে কিছু কিছু কর্মকর্তার পদোন্নতির সিদ্ধান্ত।

কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজের উদ্দীপনা ফেরাতে গত ২৩ আগস্ট ৯৫ জনকে পদোন্নতি দেন ডিএসইর সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া। কিন্তু নিজেদের মনমতো না হওয়ায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিল পরিচালনা পর্ষদ। এ টানাপোড়েনের সমাপ্তি ঘটে এমডির পদত্যাগের মধ্য দিয়ে। এরপরই পদোন্নতি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়, যা বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে এবার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদোন্নতি পাওয়া ডিএসইর একজন জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা আমাদের পদোন্নতি দেয়া হয় গত আগস্টে। আগের এমডি তারিক আমিন ভূইয়া এ পদোন্নতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পরদিন থেকেই আমরা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল অফিশিয়ালি। কিন্তু আগের এমডি পদত্যাগ করার পর, আমাদের মেইল করে আগের পদবি ব্যবহার করেই কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা কীভাবে হতে পারে! যেখানে অফিশিয়ালি আমাদের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে, সেখানে মেইল করে পদ বাতিল করে আগের পদেই কাজ করার কথা বলাটা কতটুকু যৌক্তিক।’

পদোন্নতি পাওয়ার পর তা আবার বাতিল হওয়ায় মানসিক, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন বলে জানান ডিএসইর একজন সিনিয়র ম্যানেজার। তিনি বলেন, ‘আমাকে যখন পদোন্নতি দেয়া হলো, তখন আমি সব মহল থেকে অনেক শুভেচ্ছা পেয়েছি। এখন পদোন্নতি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। ঠিকমতো কাজে মনোযোগ দিতে পারছি না। সব জায়গায় হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। এটা রীতিমতো একটা মানসিক টর্চার।’

তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘এখন আমার পদ কী, সেটাই নিশ্চিত নই। অফিশিয়ালি জানানো হয়েছে আমি সিনিয়র ম্যানেজার হয়েছি। অথচ মেইল করে বলা হচ্ছে আমি ম্যানেজারই আছি। এখন আমি কোনটা লিখব? কোনটা ঠিক? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পাই না।’

জিএম পদবির আরেকজন বলেন, ‘ভুল করলে কর্তৃপক্ষ করেছে। সে জন্য এমপ্লয়িরা কেন শাস্তি পাবেন, অপমানিত হবেন, এটা কী আইন।’
ডিএসইর পদোন্নতি পাওয়া অনেকেই বলেন, আগের এমডির নির্দেশনা মেনে যারা কাজ করেছেন, তারা এখন পদে পদে নিঃগ্রহের শিকার হচ্ছেন। সুষ্ঠু কাজের পরিবেশটায় ভেঙে পড়েছে।

জিএম পদোন্নতি পাওয়া একজন বলেন, এক মাসের বেশি হয়েছে আমি পদোন্নতি পেয়েছি। কিন্তু এইচআর থেকে বলা হয়েছে আমি নাকি সেই ডিজিএমই আছি। আবার আমাকে জিএম হিসেবে গাড়ি দেয়া হচ্ছে, মোবাইল অ্যালাউন্সসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও দেয়া হচ্ছে জিএম হিসেবেই। তাহলে আমার পদ কোনটা?’

পদোন্নতি পাওয়া কেউ তাদের টাইটেল লিখতে পারছে না উল্লেখ করে একজন এজিএম বলেন, ‘আমাদের পদোন্নতি দেয়া হলেও, আমরা সে অনুযায়ী টাইটেল লিখতে পারছি না। আমাদের টাইটেল লিখতে বাধা দেয়া হচ্ছে।’ কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের পদোন্নতি আটকে ছিল। আগের এমডি তাদের সেই প্রাপ্য পদোন্নতিই দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘খুব শিগগিরই বোর্ড মিটিং করে এসব কর্মকর্তার পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বেশ কিছু পদ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা বাতিল হবে। আর কিছু সংশোধন করা হবে।’

তিনি বলেন, যেখানে আইন আছে, কর্তৃপক্ষ আছে, সেখানে তো কেউ চাইলেই তা লঙ্ঘন করতে পারে না। আইন যেখানে লঙ্ঘন করা হয়েছে, তা ঠিক করতে হবে। যেসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল তা সম্পূর্ণ আইন লঙ্ঘিত করে দেয়া হয়েছিল। সেটাই ঠিক করা হবে।’ কবে এটা কার্যকর হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব শিগগিরই এটা হচ্ছে।

যেগুলো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তা থেকে কিছু বাদ যাবে আর কিছু সংশোধন হবে।’ পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের ইমেইলে আগের পদেই বহাল থেকে কাজ করতে নির্দেশনা প্রসঙ্গে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত এমডি বলেন, ‘বোর্ড থেকে সিদ্ধান্ত আসার পরপরই, সবাইকে আবারও অফিশিয়ালি জানিয়ে দেয়া হবে তাদের পদের ব্যাপারে। এতে তাদের কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না বলেও দাবি তার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের এখনো কিছু জানায়নি ডিএসই। আমরা রোববার খবর নেব। বিষয়টা এমন হতে পারে, ওদের অর্গানোগ্রামের বাইরে বোধ হয় কয়েকটা পদোন্নতি হয়ে গেছে, তাই হয়তো অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী সংশোধন হতে পারে।’

যদি ডিএসই অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী সংশোধন বা পদোন্নতি বাতিল করে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। যদি এর বাইরে করে তাহলে আমাদের জানাবে যোগ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। এর আগে জিএম থেকে সিনিয়র জিএম তিনজন, ডিজিএম থেকে জিএম তিনজন, এজিএম থেকে ডিজিএম তিনজন, সিনিয়র ম্যানেজার থেকে এজিএম ১৯ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়।

এ ছাড়া ম্যানেজার থেকে সিনিয়র ম্যানেজার ১৫ জন, ডেপুটি ম্যানেজার থেকে ম্যানেজার ২৯ জন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ থেকে ডেপুটি ম্যানেজার ২৯ জন, এক্সিকিউটিভ থেকে ডেপুটি ম্যানেজার ১০ জন, জুনিয়র এক্সিকিউটিভ থেকে এক্সিকিউটিভ ছয়জন, সিনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ একজন, অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে সিনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট দুজন, জুনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট একজন, জিএসএস থেকে জুনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট ছয়জন পদোন্নতি পান।