শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: টালমাটাল পুঁজিবাজারে দেশি বিনিয়োগকারীদের মতোই বিদেশিদের মধ্যে রয়েছে পুঁজি হারানোর ভয়। এ ভয়ে প্রবাসী ও বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করছেন। তারা যে শুধু ঝুঁকি কমাতেই শেয়ার বিক্রি করছেন তা নয়; বরং টাকা নিয়ে পুঁজিবাজার ছেড়েই চলে যাচ্ছেন। এছাড়া দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ টানতে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে রোড শো করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আগামী নভেম্বরেও জাপানে রোড শো করার কথা রয়েছে। বাজারে ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতেও নিয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। এর পরও বাজার ছাড়ছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধান পুুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, গত আগস্ট মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১২ কোম্পানির প্রায় ৫০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন।

বিপরীতে ছয়টি কোম্পানিতে শেয়ার কিনেছেন ১৫ কোটি টাকার কম। হতাশার এই চিত্র শুধু আগস্ট মাসেই না। চলতি বছরে বিদেশিরা অন্তত ৭০ কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি তুলে নিয়ে গেছেন।

এর মধ্যে আমরা নেটওয়ার্ক, এমএল ডাইং, ভিএফএস থ্রেড, লিন্ডে বিডি ও অ্যাকমি পেস্টিসাইডস থেকে বিদেশিরা সম্পূর্ণ বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ থেকেও বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ তুলে নিয়ে গিয়েছেন। এ ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিসহ অনেক মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারও বিক্রি করে বিশাল অঙ্কের টাকা তুলে নিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

আগস্ট মাসে যে ১২ কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে সেগুলো হলো: বাটা সু, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বিবিএস কেবলস, ব্র্যাক ব্যাংক, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, বেক্সিমকো ফার্মা, ইন্ট্রাকো সিএনজি, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রিমিয়ার ব্যাংক, রিং শাইন টেক্সটাইল, স্কয়ার ফার্মা ও তিতাস গ্যাস। এর মধ্যে ইন্ট্রাকো সিএনজির সব শেয়ারই বিক্রি করে দিয়েছেন। বিপরীতে আগস্ট মাসে যে ৬ কোম্পানির অল্প পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন, সেগুলো হলে: ফু-ওয়াং ফুড, জেমিনি সি ফুড, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, ইফাদ অটো, মুন্নু ফেব্রিক্স ও প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল।

আগস্ট মাসে বিদেশিরা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি থেকে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি অর্থ তুলে নিয়েছেন। কোম্পানিটিতে গত ৩১ জুলাই বিদেশিদের শেয়ার ছিল ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। যা ৩১ আগস্ট এসে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশে। মাসের ব্যবধানে কোম্পনিটিতে বিদেশিদের শেয়ার ধারণ দশমিক ৬৬ শতাংশ বা ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার শেয়ার। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছিল। যা এখনো একই অবস্থানে অপরিবর্তিত রয়েছে। এসব শেয়ার বিক্রি করে তারা ১৮৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বেশি অর্থ তুলে নিয়েছেন।

এরপর বেশি অর্থ তুলেছেন অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে। কোম্পানিটিতে ৩১ জুলাই বিদেশিদের শেয়ার ছিল ২৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। যা ৩১ আগস্টে এসে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ০৫ শতাংশে। আগস্ট মাসে কোম্পনিটিতে বিদেশিদের শেয়ার ধারণ কমেছে ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বা এক কোটি দুই লাখ ৭৬ হাজার ৮৫৮টি শেয়ার। যা বিক্রি করে তুলে নিয়েছেন ১৩২ কোটি টাকার বেশি।

গ্রামীণফোন থেকে প্রত্যাহার করেছেন ৮৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। কোম্পানিটিতে ৩১ জুলাই বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। যা ৩১ আগস্টে এসে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ২৯ শতাংশে। আগস্ট মাসে কোম্পনিটিতে বিদেশিদের শেয়ার ধারণ কমেছে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ বা ২১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮০টি শেয়ার। আগস্ট মাসে এবং বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার একই দামে অর্থাৎ ফ্লোর প্রাইসে অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেক্সিমকো ফার্মা থেকে তুলেছেন প্রায় ২০ কোটি টাকা।

কোম্পানিটিতে ৩১ জুলাই বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল ২৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যা ৩১ আগস্টে এসে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৩১ শতাংশে। আগস্ট মাসে কোম্পনিটিতে বিদেশিদের শেয়ার ধারণ কমেছে শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ বা ১২ লাখ ৪৯ হাজার ১১৪টি শেয়ার। আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের গড় দাম ছিল ১৬০ টাকার ওপরে। এখন অবশ্য শেয়ারটি আরও বেশি দামে অর্থাৎ ১৭০ টাকার ঘরে লেনদেন হচ্ছে।ৎ

একইভাবে বাটা সু থেকে শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ বা ২৪ হাজার ৬২৪টি শেয়ার বিক্রি করে তুলে নিয়েছেন দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা, বিবিএস কেবলস থেকে শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ বা পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৯টি শেয়ার বিক্রি করে তুলেছেন দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকা, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং থেকে শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ বা সাত লাখ ২১ হাজার ৪৬৫টি শেয়ার বিক্রি করে তুলেছেন চার কোটি ১৮ লাখ টাকা, ইন্ট্রাকো সিএনজির শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ বা ২ লাখ ৬ হাজার ২৮০টি শেয়ার বিক্রি করে তুলেছেন ৮২ লাখ টাকা।

এ ছাড়া লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ বা ৭ লাখ ৪৯০টি শেয়ার বিক্রি করে তুলেছেন ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা, রিং শাইন টেক্সটাইলের ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ বা ১ কোটি ৮০ লাখ ১১ হাজার ২৬৯টি শেয়ার বিক্রি করে তুলেছেন ১৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মার শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ বা ১২ লাখ ৪১ হাজার ৩২টি শেয়ার বিক্রি করে তুলেছেন ২৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং তিতাস গ্যাসের শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ বা ২৩ লাখ ৭৪ হাজার ১৩৩টি শেয়ার বিক্রি করে তুলেছেন ৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

আগস্ট মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি টাকার শেয়ার কিনেছেন ইফাদ অটোর। কোম্পানিটির শেয়ার কিনেছেন প্রায় আট কোটি ৩৭ লাখ টাকার। গত ৩১ জুলাই কোম্পানিটিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। যা ৩১ আগস্টে এসে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশে।

আগস্ট মাসে কোম্পনিটিতে বিদেশিদের শেয়ার ধারণ বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ বা ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫৮টি শেয়ার। আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের গড় দাম ছিল ৪৮ টাকা। সেই হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ার বিদেশিরা বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৭ টাকা ৮০ পয়সায়।

আগস্ট মাসে বিদেশিদের বিনিয়োগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কোম্পানি হল প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল। ৩১ জুলাই কোম্পানিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। যা ৩১ আগস্টে এসে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশে। একই মাসে কোম্পনিটিতে বিদেশিদের শেয়ার ধারণ বেড়েছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ বা ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৬৭টি শেয়ার। আগস্ট মাসে শেয়ারটির গড় দাম ছিল ৭৭ টাকা। সেই হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ারে বিদেশিরা বিনিয়োগ করেছেন দুই কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে একই দামে অর্থাৎ ফ্লোর প্রাইস ৭৭ টাকায়।

একইভাবে আগস্ট মাসে ফু-ওয়াং ফুডের শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ বা ৬৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৩৯টি শেয়ার কিনে এক কোটি ৪৯ লাখ টাকা, জেমিনি সি ফুডের শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ বা আট হাজার ৪৫৪টি শেয়ার কিনে ২৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা,

গোল্ডেন হার্ভেস্টের শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ বা ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৬০৫টি শেয়ার কিনে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং মুন্নু ফেব্রিক্সের শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ বা এক লাখ ২৬ হাজার ৫০০ শেয়ার কিনে ৩১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।