শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের কারসাজির তালিকায় নাম আসা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও আলোচিত আবুল খায়ের হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস এবার পুঁজিবাজারের ‘মার্কেট মেকার’ (বাজার সৃষ্টিকারী) ভূমিকায় কাজ করতে চায়। পুঁজিবাজারকে সার্পোট দিতে মার্কেট মেকার হিসেবে নিবন্ধন সনদ পেতে ডিএসইর কাছে আবেদন জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মোনার্ক হোল্ডিংসের মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করার সক্ষমতা যাচাই করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে নিবন্ধনের সুপারিশও করেছে ডিএসই। যদিও দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই এর আগে আবুল খায়ের হিরুর নেতৃত্বে তালিকাভুক্ত সাত কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে মোনার্ক হোল্ডিংসকে অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে প্রেরিত গোপনীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সেই ডিএসই-ই শেয়ার কারসাজির ওই প্রতিষ্ঠানকে ‘মার্কেট মেকার’ হিসাবে পুঁজিবাজারে কাজ করার সুপারিশ করেছে।

ডিএসই ওই প্রতিবেদনে আবুল খায়ের হিরু ও সাকিব আল হাসানকে শেয়ার কারসাজিতে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছিল। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, সাত কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার দায়ে আবুল খায়ের হীরু এবং তার সহযোগীদের ১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। প্রতিবেদনে বলা হয়, হিরু ও তার সহযোগীরা মিলে সাতটি কোম্পানির শেয়ারদর কারসাজির মাধ্যমে ৪৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার মূলধনি মুনাফা অর্জন করেছেন।

ডিএসইর তথ্যানুসারে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ঢাকা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ফরচুন সুজ লিমিটেড, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড ও বিডিকম অনলাইন লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়।

এসব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ানোর ক্ষেত্রে মো. আবুল খায়ের হীরু, তার পিতা আবুল কালাম মাতবর, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, তার বোন কনিকা আফরোজ, তার শ্যালক কাজী ফরিদ হাসান, তার ব্যবসায়িক অংশীদার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেড ও দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভ লিমিটেড, ফরচুন সুজ লিমিটেড এবং হীরু ও সাকিবের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড জড়িত ছিল।

যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আবুল খায়ের হিরু ও মোনার্ক হোল্ডিংসকে জরিমানা করলেও অজানা কারণে বিএসইসির শুভেচ্ছ দূত সাকিব আল হাসানকে কারসাজির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এখন শেয়ার কারসাজির তালিকায় অন্যতম প্রভাবক হিসেবে উঠে আসা মোনার্ক হোল্ডিংস শেয়ারবাজারের সাপোর্ট প্রতিষ্ঠানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। ডিএসই নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে প্রেরিত চিঠিতে জানিয়েছে, মোনার্ক হোল্ডিংস ডিএসইর সদস্যভুক্ত ট্রেকহোল্ডার (ট্রেক নম্বর-২৫২)। গত ৮ মে প্রতিষ্ঠানটি ডিএসইতে মার্কেট মেকারের নিবন্ধনের জন্য আবেদন জানিয়েছে।

ওই আবেদনের ভিত্তিতে ডিএসই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্কেট মেকার) বিধিমালা, ২০১৭-এর প্রয়োজনীয় কল শর্ত পূরণ করেছে কিনা তা যাচাই করে দেখেছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটি ‘মার্কেট মেকার’ হিসেবে কাজ করার জন্য সক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করে ডিএসই। তাই প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট মেকারের আবেদন বিবেচনা করা যেতে পারে।

এদিকে মোনার্ক হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেয়ারবাজারের আলোচিত জুয়াড়ি আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান স্বাক্ষরিত আবেদনে জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্ব সম্মতিতে মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্কেট মেকার) বিধিমালা, ২০১৭-এর সকল শর্ত পরিচালন করে নিবন্ধন সনদ নেওয়ার জন্য একটি রেজুলেশন তৈরি করা হয়েছে।

এর ধারাবাহিকতায় মার্কেট মেকারের নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত ফরম্যাটে (শিডিউল-ফর্ম-ক) অনুযায়ী মোনার্ক হোল্ডিংসের পক্ষ থেকে ডিএসইর কাছে আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএসইর সুপারিশ প্রার্থনা করছি। এজন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাঠানো হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে মোনার্ক হোল্ডিংসকে মার্কেট মেকারের নিবন্ধন সনদ প্রদান করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

ডিএসইর তথ্যমতে, পুঁজিবাজারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মার্কেট মেকার হিসেবে নিবন্ধন সনদ পেয়েছে ডিএসই ও সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ বি রিচ লিমিটেড। এরপর দ্বিতীয় মার্কেট মেকার হিসেবে নিবন্ধন সনদ পায় ডিএসই ও সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ গ্রিন ডেল্টা সিকিউরিটিজ। বর্তমানে বিএসইসিতে মোনার্ক হোল্ডিংস ছাড়াও আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড (আইএসটিসিএল) ও সোহেল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মার্কেট মেকারের আবেদন জমা রয়েছে। বিএসইসি প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন যাচাইবাছাই করে দেখছে বলে জানা গেছে।

বাজার সৃষ্টিকারী বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকার বিএসইসি থেকে এ সনদ পাওয়ার যোগ্য হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বাজার সৃষ্টিকারী) বিধিমালা, ২০১৭ অনুযায়ী, মার্কেট মেকার হওয়ার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদন সাপেক্ষে বিএসইসির কাছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আবেদন করবে।

বাজার সৃষ্টিকারী বিধিমালায় বলা হয়, একই সঙ্গে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা থাকতে হবে। আর উল্লিখিত পরিমাণ টাকা পরিশোধিত মূলধন হিসেবে থাকলে যে কোনো মার্কেট মেকার একটি অনুমোদিত সিকিউরিটিজ পরিচালনার জন্য নিয়োজিত থাকতে পারবে।

নিবন্ধন পাওয়া বাজার সৃষ্টিকারীরা সর্বোচ্চ সততা, বিশ্বস্ততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বাজার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রত্যেকে এক বছরের জন্য সনদ পাবে এবং তাদের সব হিসাব ১০ বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। অনুমোদিত বাজার সৃষ্টিকারী সিকিউরিটির বা শেয়ারের তারল্য ও উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এবং বাজারের আচরণের ওপর তাদের ভূমিকা নির্ধারণ করবে। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটের চেয়ে বাইরের ঘটনায় বেশি বিতর্কিত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সর্বশেষ বিতর্ক উঠেছে শেয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংসের শেয়ার বরাদ্দ বিবরণীর সার্টিফাইড কপি নিয়ে।

সার্টিফাইড কপিতে তার বাবার নাম মাসরুর রেজার পরিবর্তে অন্য জনের নাম এসেছে। মোনার্ক হোল্ডিংসের শেয়ার বরাদ্দ বিবরণীর সার্টিফাইড কপিতে তার বাবার নাম মাসরুর রেজার পরিবর্তে কাজী আব্দুল লতিফ ছাপা হয়েছে। কিন্তু যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর (আরজেএসসি) বলছে, কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাদিয়া হাসানের অনুমোদিত অথরাইজড পারসন নাজমুল হোসেনের পক্ষ থেকে ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে এমনটি ঘটেছে।

তারও আগে অনলাইন জুয়ার সাইট বেটউইনারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের দূত হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বিতর্কে জড়ান সাকিব আল হাসান। পরবর্তীতে বিসিবির শর্ত আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করেন।

এই বিষয়ে বিশিষ্ট আইনবিদ ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘সাকিব জুয়া ও টাকা ছাড়া কিছুই বুঝে না।’ সাকিব সম্পর্কে সুমনের এমন বিস্ফোরক মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়।