শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: গত বছর শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এক শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। আগের বছরও এক শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছিল। তারও আগের বছর ২০১৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বছরে কোনো রকমে পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তাও ছিল বোনাস লভ্যাংশ। সেই কোম্পানির শেয়ার দর দুই মাসের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে ৪৫ টাকা থেকে ফুলেফেঁপে এখন ১৩৭ টাকার উপরে উঠেছে। শেয়ারটির নাম সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের কোম্পানি সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার দর সম্প্রতি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। দুই মাসের কিছু সময় আগে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে শেয়ারটি ৪৫ টাকার নিচে লেনদেন হয়েছে। এখন ১২৫ টাকার ওপরে লেনদেন হচ্ছে।

আজ ১৫ কার্যদিবসে শেয়ারটির দাম বেড়েছে ১২৯ শতাংশের বেশি। আর গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শীর্ষ দরবৃদ্ধির ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় কোম্পানিটি দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। শেয়ারটির দাম এভাবে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারটিতে বিনিয়োগের বিষয়ে সতর্কবার্তাও জারি করেছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। শেয়ারটির অদম্য গতি কোনোভাবেই রোধ হয়নি।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারটির অস্বাভাবিক চোটপাটেও নির্বিকার। শেয়ারবাজারে কারসাজি ঠেকাতে প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিদের মাঝেমধ্যে হাঁকডাক শোনা গেলেও বাস্তবে যার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না বিনিয়োগকারীরা হরহামেশাই অভিযোগ করছেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা যদিও অবস্থা বুঝেশুনে কিছুটা নড়েচড়ে বসেন, তাও কারসাজিকারীরা যখন রণে ভঙ্গ দেয় তখন এবং যখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চড়া দামে শেয়ারটি নিয়ে প্যারার মধ্যে থাকে।

বাজার তথ্য বলছে, গত ৪ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ার দর ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। শেয়ারটির দাম লাগামহীন হওয়ায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির কাছে এর কারণ জানতে চাইলে ৭ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানায়, সম্প্রতি শেয়ারটির দাম বৃদ্ধি ও অস্বাভাবিক লেনদেনের পেছনে তাদের কাছে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

এরপরও কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধির গতি কমেনি। ৪ সেপ্টেম্বর ৫৭ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ার বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ১২৫ টাকা ২০ পয়সায়। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৬৮ টাকা ১০ পয়সা বা ১১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর আগে জুলাই মাসের শেষ দিকে শেয়ারটির দাম ৪৫ টাকার নিচে লেনদেন হয়েছে। সে হিসাবে তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে শেয়ারটির দাম ৪৫ টাকার নিচ থেকে ১২৫ টাকার ওপরে উঠেছে। বেড়েছে ৮০ টাকার বেশি বা প্রায় দ্বিগুণ।

শেয়ারটির সর্বশেষ লেনদেন অনুযায়ী মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) অবস্থান করছে ৮৭ দশমিক ৭৬ পয়েন্টে। যা মৌলভিত্তির বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৭ পয়সা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ১ টাকা ২০ পয়সা। অন্যদিকে তৃতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩৫ পয়সা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬০ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৫৪ পয়সা।

আগের বছর ২০২১ সালে কেবল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। ২০২০ সালে দিয়েছিল ১ শতাংশ নগদ। আর ২০১৯ সালে তালিকাভুক্তির বছরে লভ্যাংশ দিয়েছিল ৫ শতাংশ বোনাস। শেয়ারটির সর্বশেষ লেনদেন অনুযায়ী মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) অবস্থান করছে ৮৭ দশমিক ৭৬ পয়েন্টে। যা মৌলভিত্তির বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি, পরিশোধিত মূলধন ১২০ কোটি ৭৫ লাখ ও রিজার্ভে রয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৪৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৭ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ শেয়ার।