শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দীর্ঘ পতনের পর বেশ কিছুদিন যাবত বাজার চাঙ্গা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এতে নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা আবারও বাজারে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুই ধরনের বিনিয়োগকারী আবারও বাজারমুখী হয়েছেন। এছাড়া দেশের পুঁজিবাজার টানা ১০ মাসের দরপতনের ধকল কাটিয়ে উঠেছে। মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত, আর্থিক লেনদেন, নতুন বিনিয়োগকারীর আগমনসহ বাজারের অন্যান্য সূচকের মাধ্যমে ধকল কাটিয়ে উঠার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এছাড়া পুঁজিবাজারে টানা সূচক ও লেনদেনের উর্দ্ধগতিতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা বাড়ছে। পুঁজি হারা বিনিয়াগকারীরা ফের বাজারমুখী হওয়ায় সরগরম হয়ে উঠছে মতিঝিলের ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে। মুলত চলতি বছরের জুন ও জুলাই মাসে পুঁজিবাজার কিছুটা টাল-মাটাল হওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়ার পর আগস্টের শুরু থেকে উত্থানের ধারায় ফিরে দেশের পুঁজিবাজার।

এতে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বড় উত্থান দেখা যায় পুঁজিবাজারে। পরের সপ্তাহে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে পতন হলেও, পরের সপ্তাহে আবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠনের বিনিয়োগ সীমা শেয়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে উত্থানে ফিরে পুঁজিবাজার।

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, টানা তিন সপ্তাহ ধরে চাঙ্গা রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। এই তিন সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছে ১৮ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসই ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এতে সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মূল্যসূচক। এতে গত এক সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে।

গেল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৮ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা।আগের দুই সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছিল ৯ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। এই নিয়ে তিন সপ্তাহের উত্থানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১৮ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পরিবর্তনের পর থেকে বাজারে চাঙ্গাভাব দেখতে পাচ্ছি আমরা। কিন্তু আমরা এটিও দেখছি ভাল কোম্পানির চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে খারাপ কোম্পানির দামও। এমনকি অস্তিত্বহীন কোম্পানির দামও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। খালি চোখেই বোঝা যাচ্ছে কারসাজির নানা ঘটনা। কারসাজি রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও কঠোর হতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ গুরু হিসেবে খ্যাত ওয়ারেন বাফেটের মতে, শেয়ারের লাভ করতে হবে কেনার সময়ই। তাই তিনি তেজি বাজারে শেয়ার কেনার পক্ষপাতি ছিলেন না। কিন্তু আমাদের বাজারে দেখা যায় ঠিক উল্টোটি। দাম কমতে শুরু করলে বাজার ছাড়েন বিনিয়োগকারীরা। আর দাম বাড়তে থাকলে বাজারমুখী হন।