শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: গত সপ্তাহজুড়ে দেশের পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হলেও কেরামতি দেখিয়েছে ‘পচা’ বা জেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। তবে পচা শেয়ারের দাম বাড়লেও ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের ক্রেতা ছিল না। ফলে বাজারের আচরন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারী সহ বাজার সংশ্লিষটরা। পতনের বাজারে সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে জেড গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ ১০টি স্থানের পাঁচটিই দখল করেছে জেড গ্রুপ।

এর মধ্যে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দাপট দেখিয়েছে বছরের পর বছর ধরে লোকসান করা বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স। এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম গত সপ্তাজুড়েই বেড়েছে। ফলে দাম বাড়ার শীর্ষস্থানটি দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ৫১ দশমিক ৬১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে ৩ টাকা ২০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৪০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ টাকা ২০ পয়সা।

শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৩ সালে বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। এরপর আর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এমনকি কোম্পানিটি কয়েক বছর ধরে আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করছে না।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নানা সমস্যায় জর্জরিত এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান করে ১২ টাকা ২০ পয়সা।

এদিকে, শেয়ার দাম বাড়লেও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করতে চাননি। ফলে সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪২ লাখ ২১ হাজার টাকা।

গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নেওয়া জেড গ্রুপের আর এক প্রতিষ্ঠান মিথুন নিটিংয়ের শেয়ার দাম সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া সাভার রিফ্যাক্টরিজের ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১৪ শতাংশ এবং মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ দাম বেড়েছে। পচা জেড গ্রুপের এ প্রতিষ্ঠানগুলোও বছরের পর বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারছে না।

পচা জেড গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখালেও গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। এতে এক সপ্তাহেই প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। আর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ১৯৮ পয়েন্ট।

পচা কোম্পানির দাপটের মধ্যে গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় ‘এ’ গ্রুপের তিনটি এবং ‘বি’ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে। এর মধ্যে এইচ আর টেক্সটাইলের ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ, কেডিএস এক্সসরিজের ১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশনের ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ, প্রাইম টেক্সটাইলের ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং আরামিক সিমেন্টের ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ দাম বেড়েছে।

একাধিক পচা শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখালেও গত সপ্তাহজুড়ে পতন হয়েছে অধিকাংশ ভালো কোম্পানির। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩১টির। আর ১১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।