শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। তবে টানা দরপতন হলেও দুর্বল মৌল ভিত্তি কোম্পানির শেয়ারে হরিলুট চলছে। দেখে মনে হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা ভাল মৌল ভিত্তি শেয়ারে বিনিয়োগ করে অভিশাপের খপ্পরে পড়ছে। অথচ দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে দৌরাত্ন বাড়ছে না ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ার।

বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন যেখানে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দর বাড়ছে না সেখানে দুর্বল মৌল ভিত্তি শেয়ারের দর বাড়ার কারন কি? বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ফের কারসাজি চক্র মেতে উঠছে একটি চক্র। গত এক মাসে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম দ্বিগুন হয়েছে। তেমনি গত এক বছরের মধ্যে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম সবচেয়ে বাড়ছে।

তাই বর্তমান বাজার পরিস্থিতি কারসাজি বাজারের লক্ষন কিনা তা বুঝে উঠতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাজারের প্রতি আরো তদারকি দরকার। বাজার নিয়ে একটি মহল কারসাজিতে মেতে উঠলে তিনি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। যার ফলে বাজার বার বার স্থিতিশীলতার আভাস দিয়ে দরপতনের গহীনে চলে যায়।

গত তিন মাস ধরে টানা দুর্বল শেয়ারের দাম বাড়লেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন ভুমকা নিচ্ছে না। গত তিন মাসে মেঘনা পেট ও মেঘনা কনডেন্সমিল্কের মত শেয়ারের ৩ থেকে ৪ গুন দর বাড়ছে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা দর বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখছে না।

মেঘনা কনডেন্সড মিল্পের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত এই কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান ৫ টাকা ৩৪ পয়সা। শেয়ার প্রতি কোনো সম্পদ নেই, উল্টো দায় ৭৩ টাকা ১৫ পয়সা। এমন কোম্পানির দর দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা। এক দিনে বাড়ল ৯.৯১ শতাংশ।

মেঘনা পেটি ইন্ডাস্ট্রিজের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শেয়ার প্রতি লোকসান ১৮ পয়সা। আর শেয়ার প্রতি দায় ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। এমন কোম্পানির দর দাঁড়িয়েছে ৪২ টাকা ১০ পয়সা। এক দিনে বাড়ল ৯.৯২ শতাংশ।

উৎপাদনে নেই, দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে রয়েছে, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারে না মিথুন নিটিং শেয়ারের দর হু হু করে বাড়ছে। দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে আটটিই জেড ক্যাটাগরির শেয়ার। কয়েকটির লোকসান আকাশচুম্বি।

এক দশক ধরে লভ্যাংশ দিতে পারে না-এমন কোম্পানি বেশ কয়েকটি। সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া মিথুন নিটিং উৎপাদনে নেই ২০১৭ সাল থেকে। কোম্পানিটি সম্প্রতি নিলামে বিক্রি হয়ে গেছে।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, যেটি আগে ছিল ওরিয়েন্টাল ব্যাংক। ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া ব্যাংকটি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কখনও লভ্যাংশ দিতে পারেনি। বিপুল পরিমাণ পুঞ্জিভূত লোকসানের কারণে যদি কোনো বছর মুনাফাও করে, তারপরেও লভ্যাংশ দেয়া সম্ভব নয়। এমন দুটি কোম্পানির দর বেড়েছে ১০ শতাংশ করে।

গত দুই বছর শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা করে লভ্যাংশ দেয়া স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ২ টাকা ২০ পয়সা করে লোকসান দিয়েছে। এই কোম্পানির দর বেড়েছে ৯.৯৩ শতাংশ।

গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৬৮ পয়সা। গত তিন বছর কখনও শেয়ার প্রতি এক টাকাও আয় করতে পারেনি। এই কোম্পানির দর ৯.৫১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৮ টাকা।

২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ৯৪ টাকা ২৭ পয়সা লোকসান দেয়ার পর বিআইএফসি আর কখনও আর্থিক হিসাবও প্রকাশ করেনি। এই কোম্পানির শেয়ার দর এক দিনে বেড়েছে ৮.০৬ শতাংশ। শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৬.৭ টাকা।

২০২১ সালে শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়া মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ চলতি অর্থবছরে তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২১ পয়সা লোকসান দেয়ায় বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ৮ শতাংশ বেড়ে এই কোম্পানির শেয়ারদর ৩৫ টাকা থেকে হয়েছে ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা।

লোকসানে ডুবে যাওয়া তাল্লু স্পিনিং চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৪৭ পয়সা। ২০১৫ সালের পর থেকে লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৭.৯২ শতাংশ। ইনটেক অনলাইনের আর্থিক ভিত্তি ভালা নয় কোনোভাবেই। ২০১৯ সালে কোনো লভ্যাংশ না দেয়া কোম্পানিটি পরের বছর শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ফেরে।

চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ১৯ পয়সা আয় করা কোম্পানিটির দর সম্প্রতি বাড়ছে। ৭.৮৪ শতাংশ বেড়ে শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৩৪ টাকা ৪০ পয়সা। কেবল শীর্ষ ১০ নয়, শীর্ষ বিশেও একই প্রবণতা দেখা গেছে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জাঙ্ক শেয়ারের দাম বাড়ার কারণ বিনিয়োগকারীরা সেগুলোতে ঝুঁকেছেন। কোনো কিছু হিসাব না করেই তারা হুজুগে কিনছেন। যখন যেই হুজুগ চলে তখন সেই দিকে ছোটেন তারা। অন্য কোনো কারণ নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘নতুন অর্থবছরে এখন পর্যন্ত কোনো ফান্ডের ইনজেকশন দেখতে পাচ্ছি না। হয়তো অনেকেই গোছাচ্ছেন। অর্থবছর শুরু হয়েছে মাত্র, আরেকটু সময় গেলে হয়তো নতুন অর্থ ঢুকতে দেখা যাবে।’