স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে হঠাৎ সূচক ও লেনদেনের ইউটার্নেও মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে লেনদেনর ভাটা থাকায় বিনিয়োগকারীরা দু:শ্চিন্তায় ছিলেন। পাশাপাশি দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির টানা বৃদ্ধির পর সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে ঝোঁক ছিলো বিনিয়োগকারীদের।

তবে গত সপ্তাহে টানা চার দিন সূচকে অল্প অল্প করে মোট ৭৫ পয়েন্ট যোগ হয়। সর্বশেষ কর্মদিবসে লেনদেন ৯০০ কোটির ঘর অতিক্রম করেছিল। তবে চলতি সপ্তাহের শুরুতে বড় ব্যবধানে লেনদেন হ্রাস পায়, কমে সূচকও। দ্বিতীয় দিনেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। প্রথম দিনে ১৭ ও দ্বিতীয় দিনে ১২ অর্থাৎ দুই কর্মদিবসে ২৯ পয়েন্ট সূচক হ্রাস পায়। তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার কিছুটা পুষিয়ে দিল ২৫ পয়েন্ট বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।

নতুন বছর শুরু হতে না হতেই আন্তর্জাতিক নানা ঘটনাপ্রবাহ, ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন- ইত্যাদি কারণে মন্দা যেন কাটছিল না। এমতাবস্থায় নতুন অর্থবছরে নতুন বিনিয়োগে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমন আশার বাণী শোনান পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।

তাদের ভাষ্যমতে, অর্থবছরের শেষে বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা দেখে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের ছক আঁকেন। বাজারে নতুন ফান্ড ইনজেক্ট হয়। যার কারণে ইতিবাচক চাঞ্চল্য দেখা যায়। কিন্তু অর্থবছরের শুরু দুই দিনে লেনদেন হাজার কোটির কাছাকাছি থেকে ৬০০ কোটির ঘরে নেমে আসে। এতে শঙ্কা তৈরি হয় কোন দিকে যাচ্ছে পুঁজিবাজার।

তবে ভাটা পড়া লেনদেনে কিছুটা জোয়ার এলো। দিনভর হাতবদল হয়েছে ৯৬০ কোটি ৭৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা, যা ১৩ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ১৬ জুন। ওই দিন ডিএসইতে হাতবদল হয় ১ হাজার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার টাকার।
আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৫.২৫ পয়েন্ট বা ০.৩৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৭২.১৩ পয়েন্টে।

ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৪.০৮ পয়েন্ট বা ০.২৯ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৭.৯৬ পয়েন্ট বা ০.৭৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৮৯.২৫ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩০১.৯১ পয়েন্টে। ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৯৬০ কোটি ৭৯ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৯৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৬৬২ কোটি ৬১ লাখ টাকার।

ডিএসইতে আজ ৩৮২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬০টির বা ৪১.৮৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ১৫৯টির বা ৪১.৬২ শতাংশের এবং ৬৩টির বা ১৬.৪৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৮৩.৫০ পয়েন্ট বা ০.৪৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৭৬.৮৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ৩০১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১২৯টির, কমেছে ১৩১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১টির দর। আজ সিএসইতে ৪০ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাশ বলেন, সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করলে আজকের বাজারের লক্ষণটি ভালো লাগছে। বিশেষ করে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দর বাড়ায় বাজার স্বাভাবিক গতির দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি

তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার ফলে লেনদেন ও সূচক উভয়ই বেড়েছে। ঈদের আগে মানুষের টাকার প্রয়োজন পড়ে, সেটা বিগত কয়েক দিনে তুলে ফেলেছে। এখন আর টাকার প্রয়োজন নেই। ফলে যে টাকা ছিল তাতে কিছু কেনাবেচা করেছেন বিনিয়োগকারীরা।’