বিশেষ প্রতিনিধি, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বীমা খাতের শেয়ারমূল্যেও পর এবার এসএমই মার্কেটের অস্বাভাবিক উত্থান জুয়াকেও হার মানিয়েছে। মাত্র আড়াই ব্যবধানে প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম। এর মধ্যে স্টার এ্যাডহেসিভের শেয়ারের দর মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে ৮ গুন বেড়েছে। এসএমই মার্কেটের শেয়ার বাজার দেখে মনে হচ্ছে যে ক্যাসিনো বাজার ফেল করছে।
এরকম কিন্তু বীমা খাতের শেয়ারের অস্বাভাবিক উত্থান হয়েছিল।

সেই বীমা খাতের শেয়ারে যে ভাবে উত্থান হয়েছে, সে ভাবে দরপতন হয়েছে। যেমন প্রভাতী ইন্সুরেন্সের ২০৫ টাকার শেয়ার এখন ৭২ টাকা। এর পর ১২৯ টাকার এশিয়ার ইন্সুরেন্স বর্তমানে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। ১৭১ টাকার বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স ৬৮ টাকা। ২৩৯ টাকার ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স বর্তমানে ১২২ টাকা। বীমা খাতের অধিকাংশ শেয়ারের ১০০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়েছে। এখন ঐ চক্রটি এসএমই মার্কেটে ঢুকে পড়ছে।

মুলত কোন কারণ ছাড়াই এসএমই মার্কেটের শেয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই রের্কড পরিমান দ্রুতগতিতে এ খাতের শেয়ারের দাম বেড়েছে। ফলে এসএমই মার্কেটের শেয়ার দর বাড়াকে পুঁজিবাজারের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। কারণ টানা এক বছরের বেশি সময় দর পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল থাকলেও এসএমই মার্কেটের শেয়ার দর হু হু করে বাড়ছে। এমএমই মার্কেটের শেয়ার দও বাড়লেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বিনিয়োগকারীরা।

মুলত সংঘবদ্ধভাবে কয়েকটি গ্রুপ মিলে শেয়ার কিনে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এমএমই মার্কেটের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। এখন বেশি দামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে কেটে পড়তে শুরু করেছে চক্রটি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চোখের সামনেই বীমা খাতের পর এবার এসএমই মার্কেটের শেয়ার দিয়েই পুঁজিবাজারকে গোরস্তানে পাঠানোর আয়োজন চলছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্টার এ্যাডহেসিভের শেয়ার দর গত ২০ এপ্রিল ছিল ১১ টাকা। বর্তমানে ৮০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। গত ২ মাসের মধ্যে সর্ব্বোচ ৮২ টাকায় লেনদেন হয়।

এরপর অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের এর শেয়ার দর গত ২৭ মার্চ ছিল ১৪.৬০ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪৫ টাকা। অথচ এপেক্স ওয়েভিংয়ের কারখানা বন্ধ। উৎপাদন বন্ধ, লাভের দেখা নেই বহু বছর ধরে। তবুও শেয়ার দর বাড়ছে এপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিমিটেডের।

তবে কোম্পানির উৎপাদন এখন বন্ধ, ধারাবাহিকভাবে লোকসান এবং দেশের শীর্ষ ঋণ খেলাপির তালিকায় নাম থাকা কোম্পানিটির শেয়ারদর এভাবে বাড়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। কয়েকজন ব্যক্তি কারসাজি করে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের কোম্পানি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত এক মাস আগে বকেয়া বিল না দেওয়ায় কারখানার গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আপাতত কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি লাইন সংযোগ পেতে। কিন্তু এটার সঙ্গে শেয়ার দরের কোন সম্পর্ক নেই। কি কারণে শেয়ার দর বাড়ছে তার নির্দিষ্ট কারণ জানা নেই।’

এদিকে অ্যাপেক্স ওয়েভিং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জানুয়ারি-মার্চ’২১ সময়ে কোম্পানিটির কর পরবর্তী লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির কর পরবর্তী লোকসান ছিল ৩ কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এসময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০ দশমিক ৪১ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ০ দশমিক ৮২ টাকা।

গত ২৭ মর্চ ওয়ারল্যান্ড টয়েসের শেয়ার দর ছিল ২৫ টাকা ২০ পয়সা। বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার দর ৬৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। গত ১২ এপ্রিল কৃষিবিদ সিডের শেয়ার দর ছিল ১১ টাকা। বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার দর লেনদেন হচ্ছে ২৮ টাকায়।

এর পর ২৮ মার্চ নিয়ালকো অ্যালয়স শেয়ার দর ছিল ১৮ টাকা ৫০ পয়সা, বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার দর ৫০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। ২৮ মার্চ বেঙ্গল বিস্কুটের শেয়ার দর ছিল ১০০ টাকা। বর্তমানে ১৫৯ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। তবে শেয়ারটির দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়।

শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠান সমবায় অধিদফতরকেন্দ্রিক একটি চক্র, কোম্পানির উদ্যোক্তা, এবং কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস এর সঙ্গে জড়িত। ফলে ভুয়া করোনা পরীক্ষার মতো পৃুঁজিবাজারে কয়েকজন শাহেদের উত্থান হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের-ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘জুনে বিভিন্ন কোম্পানির হিসাব-বছর শেষ হবে। আর কয়েক দিন পরই ঈদ। এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা নিজেদের কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছেন। প্রতি বছরই এমনটা দেখা গেছে। তবে ‘এসএমই মর্কেটে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম হুহু করে বাড়ছে। আর এই দর বেড়ে যাওয়া দেখে মানুষ ঢুকছে।

এগুলো কেন বাড়ছে, প্রশ্ন রয়েছে। এগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তো বাড়ে না।’ বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আড়াই মাসের ব্যবধানে ৮ গুন শেয়ারের দর বাড়া পুঁজিবাজারের জন্য ভাল লক্ষণ নয়।

বীমা পর এসমএমই মাকেটের শেয়ারের মূল্য নিয়ে কারসাজি সম্পর্কে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ২ মাসের ব্যবধানে ১১ টাকায় শেয়ার ৮০ টাকায় লেনদেন হওয়া অযোক্তিক। কোন সংঘবদ্ধভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে শেয়ারের দাম বাড়ানো হলে তা অস্বাভাবিক। আর কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়লে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ আছে কিনা, সেটি চিহ্নিত না হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। আশা করি নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন।

এসমএমই মাকেটের শেয়ারের মূল্য নিয়ে কারসাজি সম্পর্কে অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, আমি এর আগে বীমা শেয়ার দর অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলছি। তখন কিছু বিনিয়োগকারীরা আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়। আশা করি এসএমই মার্কেটের শেয়ার বুঝে শুনে বিনিয়োগ করবেন। তা না হলে বীমা শেয়ারের মত অবস্থা হবে।