শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বীমা আইন ২০১০ ও সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান অনুযায়ী ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স এর সার্বিক কার্যক্রম নিরীক্ষার লক্ষ্যে বীমা আইন ২০১০ মোতাবেক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কর্তৃক ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।

প্রশাসকের অধীনে নিয়োজিত প্রফেশনাল নিরীক্ষা ফার্মসমূহ কর্তৃক উদঘাটিত অডিট রিপোর্ট কোম্পানির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদ এর বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যার চিত্র নিম্নে দেয়া হলো:

(১) কোম্পানির Data Base থেকে বিপুল পরিমাণ Data মুছে ফেলা হয়েছে যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ধারা ১৯ (১) (গ) ৩৩,৩৪,৩৫ (১) এবং ৩৬ এর অধীন গুরুতর শান্তিযোগ্য অপরাধ (২) Bank Statement, Bank Book, Bank Reconciliatio না থাকার কারণে ২২০০ টি ব্যাংক হিসাবের Bank Balance Confirm করা যায়নি

(৩) ভূয়া এজেন্ট কমিশন এবং জাল ভাউচারের মাধ্যমে ৫,১৪,৬২,০৭৯/- টাকা অর্থ আত্মসাৎ (৪) ম্যানুপুলেশনের মাধ্যমে ২৫১৩,০০,৮৪,৩৫০/- টাকা দাবীর প্রভিশন কম দেখিয়ে অতিরিক্ত লভ্যাংশ নেয়ার মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ক্ষতিসাধন এবং সরকারি রাজস্ব ফাঁকি

(৫) ৮৯,৪৯,৭৮৫/- টাকা Retirement Benefit প্রভিশন না করে অতিরিক্ত লভ্যাংশ প্রদান করা হয়েছে (৬) জনাব মঞ্জুরুর রহমান এর ব্যক্তিগত ‘রেমা টি’ নামক কোম্পানিতে ডেল্টা লাইফের ১৪,২০,০০০/- টাকা মূল্যমানের গাড়ী ব্যবহার এবং উক্ত গাড়ীতে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হয়েছে ৯০,১৩,৩৬৯/- টাকা কতিপয় কর্মকর্তা মঞ্জুরুর রহমানের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে কাজ করেছেন অথচ বেতন নিয়েছেন ডেল্টা লাইফ থেকে যার পরিমাণ ৪,৪২,৭৮,০৭৮/- টাকা (৭) বীমা আইন পরিপন্থী ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে কোম্পানির ৭৮,০০,০০০/- টাকার ফান্ড স্থানান্তর (

৮) যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত বিদেশী নাগরিকের মাসিক বেতন ১০,০০,০০০/- টাকা শুরু করে হতে প্রতি মাসে ৩,০০,০০০/- টাকা থেকে ৪,০০,০০০/- টাকা কোন কারণ ব্যতিরেকে কোম্পানির কর্মকর্তা কর্তৃক পুনরায় নগদে গ্রহণ (৯) Cash Balance Fabrication এর মাধ্যমে ১,৪৮,৯৭,১৪৩/- টাকা

(১০) হিসাবভুক্ত না করে নগদে বিভিন্ন ব্যক্তিকে প্রদান এবং সন্দেহজনক ৮৮,০৪,৮২৪/- টাকা নগদ উত্তোলন (১১) পরিচালক কর্তৃক ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কোম্পানির সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তিসহ বিদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে কোম্পানির ১,১০,০৬,৫২২/- টাকার তহবিলের অপব্যবহার

(১২) কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করে Ex-CEO আদিবা রহমান কর্তৃক ১৫,৯৪,০৯৩/- টাকার বেতন গ্রহণ (১৩) ক্রয় নীতি বঙ্গ করে ভারত থেকে সফটওয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে পলিসি গ্রাহকের তহবিলের ৩,৭০,৮৩,১৬৯/- টাকা ক্ষতিসাধন  (১৪) আয়কর ফাঁকি দেয়ার জন্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়কে ভুল খাতে হিসাবভুক্তকরণ এবং আয়কর বাবদ ৩৮৫,৭২,৩৪১৮৪/- টাকা বকেয়া/ফাঁকি দেয়া

(১৫) BSEC কর্তৃক আরোপিত ব্যক্তিগত জরিমানা ৬,৮৬,২৫০/- টাকা কোম্পানি থেকে প্রদান (১৬) Delisted এবং OTC শেয়ার ক্রয় করে কোম্পানির আর্থিক ক্ষতিসাধন, শেয়ারের Closing Balance এ ১,৩৩,৪০,৯৪৬/- টাকার গড়মিল উদঘাটন (১৭) কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে কোম্পানির সম্পদ তথা গাড়ীর অপব্যবহারের মাধ্যমে পলিসি গ্রাহকের তহবিলের ৪,৮৩,১৩,৪৭৪/- টাকার ক্ষতিসাধন।

এছাড়াও বীমা পলিসি গ্রাহকগণের মেয়াদ উত্তীর্ণ বীমাদাবী এবং মৃত্যুদাবীর পাওনা বাবদ ১৩৮ কোটি টাকা দীর্ঘদিন যাবত বকেয়া রেখে বীমা পলিসি গ্রাহকগণের স্বার্থ ক্ষুন্ন করা হয়েছে। যা প্রশাসক নিয়োগের পর পরিশোধ করা হয়েছে। তাছাড়া Corporate Governance সংক্রান্ত গুরুতর বিভিন্ন অনিয়মসমূহের মধ্যে রয়েছে:

(১) একই পরিবার কর্তৃক কোম্পানির ২২.৭৮% শেয়ারধারণ; (২) একই পরিবার থেকে ২ জনের অধিক সদস্য নিয়ে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গঠন (৩) AGM এ কোম্পানির কর্মকর্তাগণের মাধ্যমে এজেন্ডা প্রস্তাব ও সমর্থন করানো; (৪) কারণ ছাড়া সময়ে সময়ে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের Size কমানো;

(৫) কোম্পানির প্রাক্তন চেয়ারম্যান জনাব মঞ্জুরুর রহমান নিয়ম বহির্ভুতভাবে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ এবং অডিট কমিটিতে উপস্থিত থাকা; (৬) বিকল্প পরিচালক নিয়োগ আইনের ব্যত্যয় (৭) Unclaimed Dividend ব্যাংক হিসাবে না থাকা; কোম্পানির পরিচালককে লভ্যাংশ প্রদানে অনিয়ম ইত্যাদি।

উক্ত কোম্পানির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদ এর বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ প্রায় ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা নিয়োগকৃত নিরীক্ষা ফার্ম এর অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, যা উক্ত বীমা প্রতিষ্ঠান ও এর বীমা গ্রাহকগণের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি ও অশনি সংকেত।

উক্ত বীমা কোম্পানির উপরোল্লিখিত বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট প্রমাণক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর হস্তগত হয়েছে বলে জানা যায় এবং এর প্রেক্ষিতে ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে অনুসন্ধানের নিমিত্ত সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র/তথ্যাদি সরবরাহকরণের জন্য দুদক থেকে ডেল্টা লাইফের প্রশাসককে পত্র দেয়া হয়েছে তবে ডেল্টা লাইফের প্রাক্তন পরিচালনা পর্ষদ বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে একনো তলব করা হয়নি।