শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: টানা দরপতন শেষে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা পুঁজিবাজার। সাম্প্রতিক গুজবে পুঁজিবাজারের যে পতন হয়েছিল, সে বিষয়টিও পরিষ্কার হয়েছে। এর জের ধরে পুঁজিবাজার আবার ঘুঁরে দাঁড়াবে, এমন প্রত্যাশা করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। একই সঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্টরাও মনে করছেন ইতিবাচক ধারায় ফিরবে পুঁজিবাজার।এছাড়া ঘুরে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার। ফলে দেশেও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাছাড়া চলমান দরপতনে আস্থা ও তারল্য সংকটে পুঁজিবাজারে এখন রক্তক্ষরণ চলছে বাজার সংশ্লিষ্টদের। সাম্প্রতিক দরপতন এখন ২০১০ সালের ধসের পর বাজারে আরেক দফা ধসের রূপ নিয়েছে। নতুন এ ধসে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি প্রায় ৪০ শতাংশ হারিয়েছে। ফলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর এখন একটাই প্রত্যাশা, ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার।

এদিকে বিশ্ব পুঁজিবাজারে দর পতন থেমেছে। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে তীব্র পতনের ঝাঁকুনি সামলে কিছুটা উঠে দাঁড়িয়েছে বাজার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপানসহ উন্নত দেশগুলোর বাজারে সূচক বেড়েছে। তাতে একটু স্বস্তির বাতাস বয়ে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রধান সব মূল্যসূচক বেড়েছে। এদিন ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ৪৬৬.৩৬ পয়েন্ট (১.৪৭%) বেড়ে ৩২ হাজার ১৯৬ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে উন্নীত হয়। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকটি ২.৩৯ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ২৩ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে উঠে আসে।

এদিন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সূচক নাসডাক। এই সূচকটি ৩.৮২ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ৮০৫ পয়েন্ট দাঁড়ায়। প্রযুক্তি খাতের শেয়ারের বড় দর পতনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বড় হোঁচট খেয়েছিল। আবার এই খাতের শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধিতেই বাজার উঠে দাঁড়িয়েছে। সাথে সঙ্গ দিয়েছে ভোগ্য পণ্য খাতের কোম্পানিগুলো।

সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, যুক্তরাজ্যের বাজারের অন্যতম প্রধান সূচক ফুটসে (ঋঞঝঊ) ২.৫৫ শতাংশ, জার্মানির ডিএএক্স সূচক ২.১০ শতাংশ, জাপানের টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক নিক্কি ২.৬৪ শতাংশ, হংকং স্টক এক্সচেঞ্জের হ্যাংসেং সূচক ২.৬৮ শতাংশ, চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ০.৯৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে প্রতিবেশী ভারতের বাজারে শুক্রবারও দরপতন হয়েছে। এ নিয়ে টানা ৬ষ্ঠ দিনের মতো পতন হয়েছে বাজারে।

অপরদিকে জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি সৌদি আরামকোর শেয়ারদর বাড়িয়ে তুলছে। এ অবস্থায় সম্প্রতি বাজারমূল্যের দিক থেকে অ্যাপলকে হটিয়ে বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে আরামকো। আর্থিক বাজারের তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রিফিনিটিভ অনুসারে, সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি সৌদি আরামকোর বাজারমূল্য বেড়ে ২ লাখ ৪২ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে অ্যাপলের বাজারমূল্য কমে ২ লাখ ৩৭ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। যদিও বাজারমূল্য প্রায়ই ওঠানামা করে।

এরই অংশ হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে দামি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বৃহত্তম জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী। সৌদি আরামকো এর আগে ২০১৯ সালেও একবার বাজারমূল্যের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিল। সেসময় সংস্থাটির বাজারমূল্য ২ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগকারীরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তারা এ সম্পর্কিত শেয়ারগুলো বিক্রি করে দ্রুত বর্ধনশীল খাতে বিনিয়োগ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিটকয়েন ও অন্যান্য প্রধান ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ডিজিটাল সম্পদগুলোর বাজারমূল্য উলম্বভাবে পতন অব্যাহত রয়েছে। বুধবার নিউইয়র্ক পুঁজিবাজারে অ্যাপলের শেয়ারদর ৫ শতাংশেরও বেশি কমেছে।

লেনদেন শেষে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য ২ লাখ ৩৭ হাজার কোটি ডলারে নেমে আসে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সংস্থাটির শেয়ারদর কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এমনকি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়ার পরও সংস্থাটির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী হয়নি।

প্রবল ভোক্তা চাহিদায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শক্তিশালী মুনাফা পেয়েছে সংস্থাটি। তবে অ্যাপল সতর্ক করেছে, চীনে কভিডজনিত লকডাউন ও চলমান সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এতে বেড়ে গেছে সৌদি আরামকোর শেয়ারদরও। চলতি বছর সংস্থাটির শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। সবমিলিয়ে দুই বছর পর পুনরায় শীর্ষস্থান ফিরে পেয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে মহামারীর বিপর্যয় কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের এ সময়ে জ্বালানির চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। আবার ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন জ্বালানি বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে বেড়ে গেছে দামও। এ কারণে গত বছর আরামকোর মুনাফা ১২৪ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছিল। যেখানে ২০২০ সালে সংস্থাটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।