শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: টানা দুই সপ্তাহ পতনের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। গত সপ্তাহে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা বেড়েছে। ফলে বাজারে সার্বিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে সব সূচকই পয়েন্ট যোগ হয়েছে। তবে সূচক বাড়লেও লেনদেন সামান্য কমেছে। এ সময়ে এক্সচেঞ্জটির অধিকাংশ শেয়ারের দাম বেড়েছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক ও লেনদেন দুটোই বেড়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের মন্দা ভাব কাটাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ারদর কমার সীমা নির্ধারণ বাজারের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে। পুঁজিবাজারের অস্থিরতা কমাতে গত ৮ মার্চ শেয়ারদর কমার সীমা ১০ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এতেও বাজার ঘুরে না দাঁড়ানোয় গত বুধবার এ সীমা ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করে কমিশন। এতে সেদিনই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্সে ৭৬ পয়েন্ট যোগ হয়। সব মিলিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর ভূমিকায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। বাজারে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭৭ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৬৬২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৬ হাজার ৫৮৫ পয়েন্টে। সূচকের উত্থানে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল বিকন ফার্মা, বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসসি, রবি আজিয়াটা, সিটি ব্যাংক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস শেয়ারের।

ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৭ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৪৭৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ৪৪০ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৬ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪৬৪ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৪৪৮ পয়েন্টে।

ডিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ২ হাজার ৭৪৪ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহের চার কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ২ হাজার ২৬৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। সেই হিসাবে সাপ্তাহিক লেনদেন বেড়েছে ৪৮০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা ২১ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক গড়ে ৫৪৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৫৬৫ কোটি ৯১ লাখ টাকার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দৈনিক লেনদেন কমেছে ১৭ কোটি টাকা বা ৩ শতাংশ।

গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির খাতভিত্তিক লেনদেনে শীর্ষে ছিল বিবিধ খাত। ডিএসইর মোট লেনদেনের ২১ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল খাতটির দখলে। ১০ দশমিক ৭ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ৯ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়ে লেনদেন তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। ৮ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। পরের অবস্থানে থাকা ব্যাংক খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের দখলে ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

ডিএসইতে গত সপ্তাহে বেশির ভাগ খাতেই ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে ৩ দশমিক ১ শতাংশ নিয়ে শীর্ষে রয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। পরের অবস্থানে রয়েছে সেবা ও আবাসন খাত। খাতটি থেকে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। ২ দশমিক ৭ শতাংশ নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিবিধ খাত। অন্যদিকে ঋণাত্মক রিটার্নে গত সপ্তাহে শীর্ষ ছিল পাট খাত। এ খাত থেকে রিটার্ন এসেছে ২ শতাংশ। ১ দশমিক ২ শতাংশ ঋণাত্মক রিটার্ন নিয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সাধারণ বীমা খাত।

গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকায়। যেখানে সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকায়। সপ্তাহ শেষে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন বেড়েছে ৬ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৯৩টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২০৪টির। কমেছে ১৪০টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৪২টির। লেনদেন হয়নি ৭টির।

অন্যদিকে সিএসইতে গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে ১৯ হাজার ৫৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৯ হাজার ৩৬৭ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ৭৫৭ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ৬১৯ পয়েন্টে।

সিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের চার কার্যদিবসে যেখানে লেনদেন হয়েছিল প্রায় ৭৩ কোটি টাকার। আলোচ্য সময়ে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৪টির, কমেছে ১৩৮টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির।