শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: প্রাথমিক পাবলিক অফারের (আইপিও) বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারের কাট অব প্রাইসের নতুন পদ্ধতিতে হতাশ কোম্পানির উদ্যোক্তারা। কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তারা মনে করছেন, এই পদ্ধতিতে তারা শেয়ারের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্টরা মনে করছে, বুক বিল্ডিং নতুন পদ্ধতির কারণে দেশের নামীদামী কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারমুখী হতে আগ্রহী হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বুক-বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিও শেয়ারের কাট-অব প্রাইস নির্ধারণ পদ্ধতি চালু করে। যাতে করে প্রাথমিক শেয়ারের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ রোধ করা যায়। বিএসইসির এই পদ্ধতি বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করছে বলেও মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

২০২০ সালের আগস্ট মাসে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১০ সালের ৯১টি আইপিও বিনিয়োগকারীদের অর্ধেকেরও কম গড় রিটার্ন দিয়েছে। ২০টির প্রাথমিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছেন এবং ২৭টির বিনিয়োগকারীরা সামান্য ইতিবাচক রিটার্ন পেয়ে কোন রকমে পিঠ বাঁচিয়েছে।

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিএসইসির বর্তমান রক্ষণশীল মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি দুর্বল আইপিও’র কর্মক্ষমতা বা শেয়ারের অতিরিক্ত মূল্যের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছে।

কিন্তু এই পদ্ধতি ভালো মানের কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার পথকে কঠিন করে তুলেছে এবং অনেক ভালো কোম্পানি আইপিওতে শেয়ারের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার শঙ্কায় জনসাধারণের কাছে যেতে নারাজ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) এই ভাইস প্রেসিডেন্ট।

পুঁজিবাজারের তথ্য বলছে, বাজারে ভাল আইপিও আসা ক্রমাগতভাবেই কমছে। কারণ কোম্পানিগুলোকে কম দামের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। গত এক দশকে বুক-বিল্ডিং আইপিওর বার্ষিক গড় সংখ্যা ছিলো ৪.৩। অথচ গত ১৪ মাসে বুক-বিল্ডিং আইপিওর সংখ্যা কমে তিনে নেমে ঠেকেছে।

সর্বশেষ ১০টি বুক-বিল্ডিং আইপিওর বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোম্পানিগুলিকে তাদের প্রাথমিক শেয়ারের জন্য ২০%-৭০% কম দাম দেওয়া হয়েছে। যা কোম্পানিগুলোর বাজারদরও সেই রকম নির্দেশনাই বহন করছে।

বাংলাদেশের এলপিজি বাজারের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি ওমেরা পেট্রোলিয়াম ২০১২ সালে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার প্রতি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের উপরে ৮ টাকা প্রিমিয়াম পেয়েছে। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি রাইট শেয়ারের জন্য ১৫ টাকা প্রিমিয়াম দিয়েছিল। বুক-বিল্ডিং মূল্যায়নের পূর্ববর্তী পদ্ধতিতে কোম্পানিটির শেয়ার মূল্যে বেশি প্রস্তাব ছিল। কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বেশ কয়েক বছর আগে যে মূল্য দিয়েছিল তার থেকেও কম মূল্য প্রস্তাব করছে।

ওমেরা পেট্রোলিয়ামের কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, এটি (অনুমোদিত কাট-অফ মূল্য) একটি ভাল কোম্পানির প্রাপ্য মূল্য নয় এবং যার কারণে আমাদের স্পনসর এবং প্রাক-আইপিও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা খুবই হতাশ।

চলতি বছর ঢাকঢোল পিটিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) দেশের প্রধান নন-লিস্টেড কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা সভা করেছে। কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তারা তালিকাভুক্তির জন্য আইপিও’র বিধিনিষেধ ব্যবস্থা শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিএমবিএ সভাপতি মোঃ ছায়দুর রহমান বলেন, “সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়ে আমরা স্টেকহোল্ডাররা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং তারা আমাদের কাছে প্রস্তাবও চেয়েছে। আমরা আশা করি কিছু দিনের মধ্যে সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। তিনি বলেন, আইপিও বিধিনিষেধগুলো সমাধান করে আমাদের বাজারে নামীদামী বড় কোম্পানিগুলিকে আমরা নিয়ে আসতে সক্ষম হবো।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, দেশের নামীদামী কোম্পানিগুলিকে ছাড় দেওয়ার জন্য বিএসইসি উদার মনোভাব পোষণ করছে। এই লক্ষ্যে কমিশন কাজও করছে।

পাবলিক ইস্যু বিধি অনুসারে, যেসব কোম্পানি তাদের প্রাথমিক শেয়ারের জন্য অভিহিত মূল্যের বেশি প্রিমিয়াম চায় না, তারা স্থির-মূল্যের আইপিও-এর অধীনে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। যখন প্রিমিয়াম চাওয়া হয়, তখন কোম্পানিগুলোকে বুক-বিল্ডিং পদ্ধতির মাধ্যমে যেতে হয়। তখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা রেফারেন্স মূল্য নির্ধারণ করার জন্য বিড করে। যাকে বলা হয় কাট-অফ প্রাইস।

আইপিও’র আগের বুক বিডিং পদ্ধতি দীর্ঘকাল ধরে কোম্পানির শেয়ারে অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করে আসছিল, এমন অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে ফিরছিল। এর প্রেক্ষিতে আইপিও শেয়ারদর যৌক্তিক করার জন্য বিএসইসি বুক বিল্ডিং পদ্ধতির নতুন নিয়ম চালু করে।

কিন্তু আইপিও বিডকারীরা আগে যেমন পদ্ধতির অপব্যবহার করেছিল, এখন এই পদ্ধতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করে নিজেদের স্বার্থে এটিকে আবারও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে-এমনটাই দাবি করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তবে তাঁরাও নতুন বুক বিল্ডিং পদ্ধতির কিছু সংশোধন দাবি করছেন।