শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৩টি ব্যাংকের মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ১৩টি ব্যাংক। মহামারীর মধ্যে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগের ধীর গতি এবং প্রত্যাশিত ঋণ পুনরুদ্ধারের কম হওয়া সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ব্যাংক দেশের রপ্তানি ও আমদানিতে রেকর্ড বৃদ্ধির সাথে বেড়েছে শেয়ার প্রতি আয়।

ব্যাংকগুলির এই মুনাফা বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে, বেশিরভাগ ব্যাংক ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের বেশি ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৩৩টি ব্যাংকের মধ্যে ১৩টি ব্যাংকের প্রকাশিত নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে ব্যাংকগুলোর এমন অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, এই ১৩টি ব্যাংকের মধ্যে ১০টি ব্যাংকের ইপিএস বেড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আয় বেড়েছে আইএফআইসি ব্যাংকের ১২২ শতাংশ। সর্বশেষ ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ স্টক এবং ২০২০ সালেও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিলো। এর পরে মুনাফা বৃদ্ধিতে অবস্থান করছে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য সাড়ে ১৭ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আগের বছর ব্যাংকটি ১৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিলো।

মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য সাড়ে ১২ শতাংশ ক্যাশ এবং ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আগের বছর ব্যাংকটি ১০ শতাংশ ক্যাশ এবং ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিলো। প্রিমিয়ার ব্যাংক ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য সাড়ে ১২ শতাংশ ক্যাশ এবং ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আগের বছর ব্যাংকটি সাড়ে ১২ শতাংশ ক্যাশ এবং ৭.৫০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিলো।

অন্যদিকে, আয় কমেছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের। ২০২১ সালে লোকসান কমলেও আইসিবি ইসলামিক ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে রয়েছে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১০ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আগের বছর ব্যাংকটি ৫ শতাংশ ক্যাশ এবং ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিলো। যমুনা ব্যাংক ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য সাড়ে ১৭ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আগের বছর ব্যাংকটি সাড়ে ১৭ শতাংশ ক্যাশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিলো।

এদিকে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে শেয়ারহোল্ডারদের উত্তরা ব্যাংক সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। আগের বছর ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের জন্য সাড়ে ১২ শতাংশ ক্যাশ এবং সাড়ে ১২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিলো।

ডিভিডেন্ড কমেছে ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ডাচ বাংলা ব্যাংকের। ইস্টার্ন ব্যাংক ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য সাড়ে ১২ শতাংশ ক্যাশ এবং সাড়ে ১২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আগের বছর ব্যাংকটি সাড়ে ১৭ শতাংশ ক্যাশ এবং সাড়ে ১৭ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিলো।

ডাচ বাংলা ব্যাংক ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য সাড়ে ১৭ শতাংশ ক্যাশ এবং ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আগের বছর ব্যাংকটি ১৫ শতাংশ ক্যাশ এবং ১৫ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিলো।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিম এই বিষয়ে বলেন, ২০২১ সালে আমরা পোশাক খাত থেকে আরও বেশি সমর্থন পেয়েছি। কারণ এই সময়ে পোশাক খাতে রেকর্ড রপ্তানি হয়েছে। আমদানিও বেড়েছে। এতে আমাদের নন-ফান্ডেড আয় বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিফারাল সুবিধার কারণে খেলাপি ঋণ নিয়ে ব্যাংকটিকে তেমন জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। তবে সামনের দিনগুলিতে কী হবে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি এবং আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের খেলাপি ঋণ ২ শতাংশ কমেছে, যা আমাদের ব্যাংকের আর্থিক সামর্থ্য বাড়িয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মতে, দেশের পোশাক রপ্তানি ২০২১ সালে প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫.৩৭ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালেও বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের ২০২১ সালের প্রতিবেদন দেখায় ব্যাংকটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পথে পা বাড়িয়েছে।

আমাদের টেকসই ব্যাংকিং এবং গ্রাহক অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক ব্যবসায়িক কৌশলগুলি আমাদের ভালো কাজে দিচ্ছে। আমাদের ২০২১ সালের পারফরম্যান্স, অভূতপূর্ব পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, ইঙ্গিত দেয় মহামারী দুই বছরের তুলোনায় ব্যাংকটি এখন অনেক বেশি শক্তিশালী।

ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকি খাত পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ থেকে ২০২১ সালে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আয় করেছে। তারা বলছেন, ২০২২ সালে ব্যাংক খাত শেয়ারবাজারে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে এবং এবছরও পুঁজিবাজার থেকে ভালো মুনাফা তুলবে।

সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজার থেকে মুনাফার হার ভালো। যদি ১৯৯৬ বা ২০১০ সালের মতো কোনো অর্পিত চালিকা পুঁজিবাজারকে নিয়ন্ত্রণ না করে, তাহলে এবছ পুঁজিবাজার থেকে আরও বেশি ভালো মুনাফা তোলা সম্ভব হবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোর শেয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয়। কারণ ব্যাংকিং খাতে মূল্য-আয় অনুপাত ৮ এর নিচে এবং ডিভিডেন্ডের ফলনও ভালো অবস্থায় রয়েছে।

একটি ব্রোকারেজ হাউজের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, বিনিয়োগকারীরা কয়েক দিনের মধ্যে তাদের মুনাফা দ্বিগুণ, তিনগুণ বা চারগুণ করতে চায়। এতে করে বিনিয়োগকারীরা মূলধন লাভের পিছনে দৌঁড়ায়। ফলে বিনিয়োগকারীদের মূলধনও হারায়। পুঁজিবাজারে এটি একটি বড় সমস্যা। তবে ব্যাংকগুলো যে হারে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে তা সারা বছর অপেক্ষা করেও এফডিআর থেকে পাওয়া সম্ভব নয়।