শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে আসছে ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ ফান্ড যারা এখনো গঠন করেনি বা গঠন করেও বিনিয়োগে আসেনি তাদেরকে বিনিয়োগের আসার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে আজ ২৩ মার্চ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া আইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু অনেক ব্যাংক বিনিয়োগ সীমার অনেক নিচে অবস্থান করছে। তাদেরকে নতুন করে বিনিয়োগ করার জন্যও কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিমের স্বাক্ষরে এ সংক্রান্ত চিঠি মোট ৬১ ব্যাংককে পাঠানো হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএসইসির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ২০০ কোটি টাকার বিশেষ ফান্ড গঠন করার নির্দেশনা দেয় যা ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোজারের বাইরে থাকবে। সে মোতাবেক যেসব ব্যাংক এখনো বিশেষ ফান্ড গঠন করেনি কিংবা গঠিত ফান্ড থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেনি তাদেরকে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে ব্যাংকগুলো তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারলেও অনেক ব্যাংক বিনিয়োগ সীমার নিচে অবস্থান করছে। তাদেরকে নতুন করে বিনিয়োগ করার জন্যও কমিশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৪২টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক ও ৯টি বিদেশি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে মোট তালিকাভুক্ত ৬১ ব্যাংককে উল্লেখিত নির্দেশনা জানানো হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বছরে পর বছর ধরে আপনার আন্তরিক সহযোগিতা এবং অবিরাম সমর্থনের জন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আপনার ব্যাংকের এমন ব্যতিক্রমী অবদানকে অত্যন্ত মূল্যায়ন করে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ব্যাংকের তালিকাভুক্তি এবং রাইট শেয়ার প্রদানের মাধ্যমে প্রাথমিক মূলধন সহজতর করতে এবং বন্ডের জন্য আবেদন অনুমোদনের মাধ্যমে ব্যাংকের অতিরিক্ত টায়ার-ও এবং টায়ার-ওও মূলধনের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে অত্যন্ত আন্তরিক।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বেশিরভাগই সাধারণ বিনিয়োগকারী। এদের দ্বারাই বাজার প্রভাবিত হয়, পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীর হার মোট বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৮০ শতাংশ। দেশের পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বাড়াতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

এরই প্রেক্ষিতে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে ব্যাংকগুলিকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ ফান্ড গঠনের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যা শেয়ারবাজারের এক্সপোজার সীমার হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না। ব্যাংকগুলি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসাবে কাজ করবে এবং উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে আসবে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে।

এছাড়াও, ব্যাংকিং কোম্পানি আইন ১৯৯১, ২০১৩ সালে সংশোধিত, একটি ব্যাংকের স্টক মার্কেট এক্সপোজারের অনুমতি দেয় তার মূলধনের ২৫% পর্যন্ত। যার মধ্যে পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ রিজার্ভ এবং ধরে রাখা আয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু দেখা যায় যে অনেক ব্যাংকের এক্সপোজার সীমা সাধারণত সীমার নিচে থাকে।

চিঠিতে ব্যাংকগুলোর ম্যানেজিং ডিরেক্টরদের প্রতি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি। ব্যাংকগুলো নিয়ম সামর্থ অনুযায়ী পুঁজিবাজারকে সহায়তা করবে, একে অপরের অনুপ্রেরণা হিসেবেও কাজ করবে বলেও প্রত্যাশা করেন বিএসইসি।

বিএসইসির চিঠি অনুযায়ি, ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে পুঁজিবাজারে মাত্র ২৮টি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এখনো ৩৩টি ব্যাংক এই তহবিল গঠন করেনি। এছাড়া অধিকাংশ ব্যাংক বিনিয়োগ সীমার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করেনি।

সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর এখনো সবমিলিয়ে ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এরমধ্যে বিনিয়োগ সীমা অনুযায়ি ব্যাংকগুলো প্রায় ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। আর ৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বিশেষ তহবিল থেকে। কারন ৬১টি ব্যাংকের প্রতিটির ২০০ কোটির বিশেষ তহবিল বিবেচনায় ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও করা হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ১শ কোটি টাকার।

সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এই বিনিয়োগ না করা ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। দেশের বৃহৎ স্বার্থে ব্যাংকগুলোর কাছে এই বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা হয়েছে। নিম্নের ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য এখনো ২০০ কোটির বিশেষ তহবিলই গঠন করেনি। বিনিয়োগতো দূরের কথা। এই ব্যাংকগুলোকে তহবিল গঠন করে বিনিয়োগের জন্য বলা হয়েছে।