শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইটি খাতের কোম্পানি ইনটেক লিমিটেডের সর্বশেষ তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ জন্য চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোম্পানিকে নিয়োগ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মঙ্গলবার বিএসইসি থেকে জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোম্পানিকে দেওয়া একটি চিঠির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএসইসির ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে ইনটেক লিমিটেড ব্যালেন্স শীট, আর্থিক বিবরণী, কোম্পানির সম্পদ, দায় এবং ইক্যুইটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখবে কিবরিয়া অ্যান্ড কোম্পানি।

এছাড়াও কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম মাহবুবুল আলম, তার পরিবারের সদস্য বা নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানে ইনটেক লিমিটেডের কোন সম্পদ স্থানান্তর হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে অডিট প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশাসনিক খরচ, বর্তমান সম্পদের বিবরণসহ ইনটেক যেসব রিপোর্ট জমা দিয়েছে তার বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে।

কোম্পানির সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোম্পানি সচিব, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের আর্থিক লেনদেনের বিস্তারিত জানাতে এবং বেআইনি লেনদেনের প্রমাণ জমা দিতে চিঠিতে অডিট কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

কিছুদিন আগে ইনটেক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে নিরীক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই রকিব সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে ইনটেক লিমিটেডের সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, সাবেক চেয়ারম্যান পারিবারিক স্বার্থে কোম্পানির সম্পদ ব্যবহার করেছেন। তবে কত টাকা আত্মসাৎ করেছে তা উল্লেখ ছিল না।

২০০২ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানিটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি সফটওয়্যার ব্যবসাতেও বিনিয়োগ করেছে। মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার অতিমাত্রায় বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিটি ক্ষতির মুখে পড়ে। এরপর এর নীতিনির্ধারকরা কোম্পানিটির ব্যবসা মাছ চাষের দিকে স্থানান্তর করে।

ময়মনসিংহে কোম্পানিটির প্রায় ৪০ একর জমিতে মাছ চাষের প্রকল্প রয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানিটি একটি রিসোর্টও তৈরি করে। কিন্তু করোনার কারণে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান হয়ে মাছ ও রিসোর্ট ব্যবসা করার কারণে এর আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ২০২০ সালে জরিমানা করে ইনটেক লিমিটেডকে। দুর্বল কোম্পানিটিকে সবল করতে নতুন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এস আলম এবং কেডিএস গ্রুপ কোম্পানিটির ৩০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।

কোম্পানিটির রাজস্ব প্রতিবছর কমছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইনটেকের আয় ছিল ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ কম। এ ছাড়া গেল অর্থবছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা ছিল ৪৬ লাখ টাকা যা আগের বছরে ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়ায় ০.০১ পয়সা।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইনটেক লিমিটেড বিনিয়োগকারীদের মাত্র একবার নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০২০ সালে কোম্পানিটি নামমাত্র ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আর ২০২১ সালে বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৭ সালে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১ টাকা ০৫ পয়সা। পরের বছর আয় বাড়লেও ২০১৯ সালে ইপিএস ১টাকার নিচে নেমে আসে। আর ২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে মাত্র ১৫ পয়সা।