শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সে নির্দেশনায় এখন পর্যন্ত ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি তহবিল গঠন করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। সব মিলিয়ে ৩৬টি ব্যাংক এ পরিমাণ তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্য থেকে ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে পুঁজিবাজারে।

দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বিনিয়োগ হওয়া ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে গ্রিন ইসলামিক বন্ড সুকুকে। সুকুক বন্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। বাকি ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে পুঁজিবাজারে।

৩৬টি ব্যাংকের তহবিল গঠন করার কথা ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার। কিন্তু সেখানে গঠন হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকার তহবিল। এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সবগুলো ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা জমা করেনি। ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে ১৭টি ব্যাংক পুরো তহবিল গঠন করেছে। বাকি ১৯ ব্যাংকের মধ্যে কোনোটি ১২০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত তহবিল গঠন করেছে।

৬ হাজার কোটি টাকা গঠন করলেও এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে এর অর্ধেকের কিছু বেশি। পুঁজিবাজারে তারল্য সঙ্কট কাটাতে ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এ তহবিল থেকে বিনিয়োগের নির্দেশনাও দেওয়া হয়। তবে সে নির্দেশনায় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় কোথায় এবং কোন শেয়ারে বিনিয়োগ করা যাবে।

অন্যদিকে নতুন কোনো ব্যাংক পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ এ তহবিলের ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে বলে নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। এই তহবিলের টাকা বিনিয়োগ না করলে নতুন করে আর কোনো ব্যাংককে তালিকাভুক্ত করা হবে না বলেও জানানো হয়। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে এ নির্দেশনা দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরই মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ব্যাংকগুলো কত টাকার তহবিল গঠন করেছে এবং সেখান থেকে কত টাকা বিনিয়োগ করেছে, সে তথ্য জানতে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

হালনাগাদকৃত তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে ৩৩টি ব্যাংক তালিকাভুক্ত হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক তালিকাভুক্ত হতে চেষ্টা করছে। এ ছাড়া তালিকাভুক্তির শর্তে অনুমোদন পাওয়া ৫টি ব্যাংক এখনও পুঁজিবাজারে না আসায় ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে এ তহবিল থেকে বিনিয়োগের বেশকিছু শর্ত দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘এই তহবিলের টাকায় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোরই শেয়ার কেনা যাবে, যারা পরপর ৩ বছর ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে।’

পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অনিয়ম উঠে আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া নির্দেশনা লঙ্ঘন করে সরকারি-বেসরকারি ৬টি ব্যাংক এমন সব কোম্পানির শেয়ার কেনে, যারা টানা ৩ বছর ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়নি। এর মধ্যে বারবার শর্ত লঙ্ঘন করায় দুটি ব্যাংককে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর প্রথমবার ভুলের কারণে সতর্ক করেছে চার ব্যাংককে। জরিমানার মুখে পড়া ব্যাংক দুটি হলো ইসলামী ধারার এক্সিম ও প্রচলিত ধারার প্রিমিয়ার ব্যাংক। যে চার ব্যাংককে সতর্ক করা হয় সেগুলো হচ্ছে- রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী এবং বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী একই গ্রুপের ব্যাংক।

গেল বছরে সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি বা বেক্সিমকো। প্রাথমিকভাবে ইসলামিক বন্ড হিসেবে পরিচিত এ পণ্যের বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহ নষ্ট হয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়ে এ বন্ড। শেষ পর্যন্ত বন্ডের শেয়ার কেনার বিষয়ে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে তফসিলি ব্যাংকের গঠন করা বিশেষ তহবিলের টাকা নবায়নযোগ্য শক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুকুকে বিনিয়োগ করার নির্দেশনা দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে নির্দেশনা অনুসারে, ২০২৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয় ব্যাংকগুলোকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়। এ বন্ডের মাধ্যমে বেক্সিমকো ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে বলে জানা যায়। বন্ড থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব শিল্পে বিনিয়োগ করা হবে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

সর্বশেষ তথ্য মতে, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে এবং বাকি ৫০ কোটি টাকার মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয় বলে জানায় বিএসইসির একটি সূত্র। ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) গঠন করার পর এটি পরিচালনায় জারি করা হয়েছে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস। নীতিমালা অনুযায়ী একটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছে বিএসইসি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে কমিটির সদস্য হিসেবে ১০ জন নিয়োগ দেওয়া হয়।সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ