চট্টগ্রাম ব্যুরো, শেয়ারবার্তা ২৪ডটকম, ঢাকা: দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফের উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত গ্লাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি। গত বছরের জুন মাসে অগ্নি-দুর্ঘটনায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে লোকসানে পড়ে দেশের গ্লাস তৈরির সর্বপ্রথম সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে গ্লাস বিক্রি, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি আর উৎপাদিত গ্লাস অবিক্রীত পড়ে থাকায় দীর্ঘদিন ধরে লোকসান গুনে আসছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি।

তবে প্রতিষ্ঠানটির টানা লোকসানে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে একটি চিঠি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিএসইসির পাঠানো চিঠিতে কোম্পানির আর্থিক অবস্থার নানা সুচক সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে কোম্পানির চরম আর্থিক দুরবস্থা ফুটে উঠেছে।সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী মোট লোকসানের পরিমাণ ৫৯ কোটি ৬৩ লাখ ৩২ হাজার ৩০০ টাকা।

অন্যদিকে উসমানিয়া গ্লাস ফ্যাক্টরির কোম্পানি সচিব বিপুল কুমার মজুমদার বলেন, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া এই লোকসান কাটানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন বিক্রয়কৃতপণ্যেরচেয়েঅনেকবেশি উৎপাদন খরচ। যারকারণেমুনাফারমুখদেখছেনা কোম্পানিটি। ৬০ বছর পুরোনো প্রযুক্তি দিয়ে চলছে কোম্পানি।

জানা গেছে কোম্পানিটির দুটি ফার্নেসের ( এটা এমন যন্ত্র যা তাপ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় বা এটা এমন চুল্লি,যার তাপ দিয়ে কাঁচের কাচামাল গলিয়ে ফেলা হয়। ) মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২ কোটি ১ লাখ বর্গফুট। লোকসান গুনতে গুনতে ২০১৮ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে ফার্নেস-১। অন্যদিকে ২০২০ সালের ২৩ জুন এক ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় ফার্নেস ২।

তাতে কোম্পানিকে আরো বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে। প্রতিদিনের খরচ মেটাতে কোম্পানিটি বিশাল তারল্য সংকটে পড়ে। তারল্য সংকট থেকে রক্ষা পেতে কোম্পানির সকল স্থায়ী আমানত ভেঙ্গে ফেলে। কোম্পানি সচিব বিপুল কুমার মজুমদার বলেন ফার্নেস – ২ থেকে আবার উৎপাদন শুরু হয়েছে। বিক্রিও বেশ ভালো।

২০২০-২১সালের হিসাব মতে কোম্পানির চলতি অনুপাত দশমিক ৯৯:১। অর্থাৎ কোম্পানির ৯৯ টাকার চলতি সম্পদের বিপরীতে চলতি দেনা ১০০ টাকা। একটি ভালো কোম্পানির ক্ষেত্রে চলতি দায়ের দ্বিগুণ থাকা উচিত চলতি সম্পত্তি। তারল্য অনুপাত দেখানো হয়েছে দশমিক ৫১: ১। অর্থাৎ ৫১ টাকা সম্পদের বিপরীতে রয়েছে ১০০ টাকার ঋণ। এতে কোম্পানির তারল্য সংকট প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। কোম্পানির ঋণ ও ইক্যুইটি অনুপাত দশমিক ৫৮:১। অর্থাৎ কোম্পানির মালিকানা স্বত্ত্ব যদি ৫৮ টাকা হয় তবে এর বিপরীতে দেনা রয়েছে ১০০ টাকা।

আর্থিক প্রতিবেদন মতে কোম্পানির মজুদ আর্বতন ১.৫৩ বার মাত্র। মজুদ আর্বতন বলতে বুঝায় কোম্পানির পণ্য কতবার বছরে শেষ হয়ে নতুন পণ্য আসছে।একটি আদর্শ কোম্পানির ক্ষেত্রে এই আবর্তন ৬ বার হয়ে থাকে। উসমানিয়া গ্লাসের পণ্য মাত্র ১.৫৩ বার হাতবদল হয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানির পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি কম।

রিটার্ন অন ইক্যুইটিও দেখানো হয়েছে ঋণাত্মক ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। রিটার্ণ অনু ইক্যুইটি বলতে বোঝায় মালিকের বিনিয়োগকৃত অর্থ মুনাফা হিসেবে কতটা ফেরত আসছে। এই কোম্পানির ক্ষেত্রে ১০০ টাকা ইক্যুইটি বা মুলধনের বিপরীতে লোকসান হয়েছে ৭.৫৫ টাকা। যা কোম্পানির আয়ের দুর্বল অবস্থা প্রকাশ করে।

মুনাফার চেহারা দেখছে না কোম্পানিটি। চিঠিতে পরিস্কার ভাবে বলা হয় বিক্রিত পণ্যের ব্যয় বিক্রয়কৃত পণ্যের চেয়ে অনেক বেশি। যার কারণে মুনাফার মুখ দেখছে না কোম্পানিটি। আর্থিক অবস্থা এতোটা দুর্বল হওয়া স্বত্তেও ২০২০-২১সালে সম্পত্তি,প্লান্টএবংযন্ত্রপাতিসংযোজন করেছে১৬কোটি৯৮লাখ২৬৯টাকা।

সিকিউরিটিজ আন্ড একচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) অনুযায়ী চিঠিটির ইস্যুর ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির অবস্থান পরিস্কার করতে বলা হয় উল্লেখিত বিষয়ে। বিবিধ খাতের এই কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে আসে ১৭ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ।

৫১ শতাংশ সরকারি শেয়ার নিয়ে ১৯৮৭ সালে তালিকাভুক্ত হয়। এই কোম্পানিটির পরিচালকদের শেয়ার রয়েছে ২ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার রয়েছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। এছাড়া সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার রয়েছে ৩১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।