শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্সের রেকর্ড সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৭১০টি। যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত দুই বছরের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার একদিন ছাড়া কখনো ৫০ হাজারের বেশি অতিক্রম করতে পারেনি।

ন্যাশনাল লাইফ শেয়ারের হঠাৎ এতো বড় লেনদেন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনার ঝড় বইছে। তারা কোম্পানিটির রেকর্ড লেনদেন নানাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করছেন। অনেকে বলছেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটির এতো বড় লেনদেন আগে কখনো হয়নি।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত দুই বছরের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন ৫০ হাজারের ঘর অতিক্রম করেনি। দুই বছরের মধ্যে মাত্র একদিন কোম্পানিটির শেয়ার বড় আকারে লেনদেন হয়েছে। তা ছিল চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি। সেদিন কোম্পানিটির শেয়ার ১০ লাখের ঘরে লেনদেন হয়েছে। ওইদিন কোম্পানিটির শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ২২৭ টাকায়। এরপর আজ লেনদেন হলো প্রায় ২২ লাখ। আজ শেয়ারটির ক্লোজিং দর হয়েছে ২১৮ টাকা ৪০ পয়সা।

ডিএসইর একটি সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের বিক্রেতা ছিল সাউথইস্ট ব্যাংক। আর আজও কোম্পানিটির শেয়ারের বিক্রেতা সাউথইস্ট ব্যাংক।

সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, দুই বছর আগে সাউথইস্ট ব্যাংক বিনিয়োগ সীমা অতিক্রম করে দফায় দফায় ন্যাশনাল লাইফের শেয়ার কিনেছিল। বিনিয়োগ সীমার বেশি একক কোম্পানির শেয়ার কেনায় ব্যাংকটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংকটিকে বিনিয়োগ সীমার মধ্যে নামিয়ে আনারও নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ব্যাংকটি গত বছর জুলাই মাসে প্রথম দফায় ২৩ লাখ ৪০ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছিল। তারপর গত ২৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় ১০ লাখ শেয়ার বিক্রি করে। তারপর আর আজ তৃতীয় দফায় ২০ লাখের বেশি শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংকটি। এর মাধ্যমে নির্ধারিত বিনিয়োগ সীমার মধ্যে ফিরে এসেছে ব্যাংকটি। যদিও এই বিনিয়োগ সীমায় ফিরতে ব্যাংকটিকে অনেক লোকসানে শেয়ার বিক্রি করতে হয়েছে।

বাজারের তথ্য বলছে, গত দুই বছরের মধ্যে ন্যাশনাল লাইফের সর্বনিম্ন শেয়ারদর ছিল ১৯০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা। সাউথইস্ট ২০১৯ সালের শেষদিকে কোম্পানিটির শেয়ার কিনেছিল। সেই সময়ে কোম্পানিটির শেয়া্র দর ২৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে উঠানামা করেছে।

জানা যায়, সাউথইস্ট ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান আলমগীর কবির ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের উপদেষ্টা। আবার সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা জাকির আহমেদ খানও ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের স্বতন্ত্র পরিচালক। যে কারণে বিনিয়োগ সীমা অতিক্রম করেও সাউথইস্ট ব্যাংক ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্সের শেয়ার ক্রয় করে। এখন বিনিয়োগ সীমা ঠিক রাখতে ব্যাংকটিতে লোকসান দিয়ে শেয়ার বিক্রি করতে হল।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক তার আদায় করা মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংয়ের ৫ শতাংশের বেশি অন্য কোম্পানির শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। আরও বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানির আদায় করা মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কোনো ব্যাংক ধারণ করতে পারবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে দেখা যায়, সাউথইস্ট ব্যাংক গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ন্যাশনাল লাইফের যে পরিমাণ শেয়ার কিনেছে, তা আদায় করা মূলধনের ২২.০৫ শতাংশ এবং সর্বমোট মূলধনের ৯.৮৩ শতাংশ।

এরপরও ব্যাংকটি গত বছরের ডিসেম্বরে দফায় দফায় ন্যাশনাল লাইফের শেয়ার কেনে। এর মধ্যে ২২ ডিসেম্বর ১ লাখ ৯৮ হাজার, ২৩ ডিসেম্বর ১ লাখ ৬৭ হাজার, ২৪ ডিসেম্বর ২ লাখ ৪০ হাজার, ২৭ ডিসেম্বর ৩ হাজার ও ২৮ ডিসেম্বর ১ লাখ ৪২ হাজার শেয়ার কেনে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক ও বিমা দুটিই পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। গত জুলাই পর্যন্ত সাউথইস্ট ব্যাংকের কাছে ন্যাশনাল লাইফের ১ কোটি ৪০ লাখ শেয়ার ছিল।

গত জুলাইয়ে ব্যাংকটিকে ন্যাশনাল লাইফের শেয়ার ধারণসীমার মধ্যে আনতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটি জানায়, ২৩ লাখ ৪০ হাজার শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে, সীমায় নামিয়ে আনতে আরও ছয় মাস সময় প্রয়োজন। একই সময়ে ব্যাংকটি সীমাতিরিক্ত শেয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কনসালট্যান্টের ০০০৫৩ নম্বর হিসাবে স্থানান্তর করে। যে হিসাবটি সাউথইস্ট ব্যাংকেরই। সেই হিসাব থেকে পরবর্তীতে দুই দফায় ৩০ লাখের বেশি শেয়ার বিক্রি করলো।