শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বছরজুড়েই সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আর্থিক খাত। অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় আর্থিক খাত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এখাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ারও উপক্রম হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। এতো সবের পরও পুঁজিবাজারে আশা জাগাচ্ছে আর্থিক খাত। এখাতের কিছু কোম্পানি ডিভিডেন্ড ও মুনাফার ঝলক দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আশার আলো দেখাতে শুরু করেছে।

পুঁজিবাজারে আর্থিক খাতে কোম্পানির সংখ্যা ২৩টি। এরমধ্যে ৯টি কোম্পানি এ পর্যন্ত সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আশার কথা হলো, সবগুলো কোম্পানিই এবছর ডিভিডেন্ড দিয়েছে। গত কয়েক বছর ডিভিডেন্ড দেয়নি, এমন কোম্পানিও এবছর বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ডের মুখ দেখিয়েছে। খাতটিতে প্রথম আশা জাগিয়েছে বিডি ফাইন্যান্স।

এবছর কোম্পানিটি ৬ শতাংশ ক্যাশ ও ৬ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। আগের বছর দিয়েছিল ১০ শতাংশ ক্যাশ। ২০২০ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। আগের বছর ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ১ টাকা ১২ পয়সা। ডিভিডেন্ড এবং মুনাফায় প্রবৃদ্ধি এসেছে যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ৬০ শতাংশ।

সম্প্রতি বিডি ফাইন্যান্স যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এসআইজি নামক একটি গ্লোবাল অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে একটি বড় চুক্তি করেছে। চুক্তির আওতায় এসআইজি বিডি ফাইন্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এসআইজি বিডি ফাইন্যান্সের ৪ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত হবে। এ খবরে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। লেনদেনে দেখা যাচ্ছে ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি। এরফলে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর ভলিউড লিডারে কোম্পানিটির শেয়ার তৃতীয় স্থান করে নিয়েছে।

এরপর চমক দেখিয়েছে ফার্স্ট ফাইন্যান্স। কোম্পানিটি ২০১৫ সাল থেকে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ডের মুখ দেখায়নি। এবছর বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ২০২০ সালে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ১৬ পয়সা। আগের বছর ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৩ টাকা ৪৯ পয়সা। এরপর ঝলক দেখিয়েছে ন্যাশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্স।

এবছর কোম্পানিটি ১৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। আগের বছর দিয়েছিল ১০ শতাংশ ক্যাশ। ২০২০ সালে কোম্পানিটি ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৭৫ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ২ টাকা ২ পয়সা। ডিভিডেন্ড ও মুনাফায় ন্যাশনাল হাউজিং প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে যথাক্রমে ৫০ শতাংশ ও ৩৬ শতাংশ।

এবছর ৩টি কোম্পানি আগের বছরে সমপরিমাণ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো-লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, ইসলামিক ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স। লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স আগের বছরের মতো এবছরও ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। তবে কোম্পানিটির মুনাফায় বড় ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। ২০২০ সালে কোম্পানিটি ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৮১ পয়সা।

আগের বছর ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ৯৮ পয়সা। ২০২০ সালে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স মুনাফায় প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে ৮৪ শতাংশের বেশি। তেমনি ভাবে ইসলামিক ফাইন্যান্সও আগের বছরের ন্যায় এবছর ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। তবে কোম্পানিটির মুনাফা কিছুটা বেড়েছে। ২০২০ সালে কোম্পানিটি ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫৪ পয়সা। আগের বছর ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩৯ পয়সা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশের কিছুটা বেশি।

তবে ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ডিভিডেন্ড আগের বছরের সমপরিমাণ হলেও মুনাফায় অধোগতি হয়েছে। আগের বছর ২০১৯ সালে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩১ পয়সা। ২০২০ সালে ইপিএস নেমেছে ১ টাকা ১৩ পয়সায়। মুনাফা কমেছে ১৩ শতাংশ। এবছর ৩ কোম্পানির ডিভিডেন্ড কমেছে। কোম্পানিগুলো হলো-ডিবিএইচ, আইপিডিসি ও আইডিএলসি।

গত বছর আইডিএলসি ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ৩৫ শতাংশ ক্যাশ। এবছর দিয়েছে ১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস। তবে কোম্পানিটির মুনাফায় ঝলক রয়েছে। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৫১ পয়সা। ২০২০ সালে ইপিএস হয়েছে ৬ টাকা ৭৪ পয়সা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

আইপিডিসি গত বছর ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস। এবছর দিয়েছে ১২ শতাংশ ক্যাশ। তবে ডিভিডেন্ড কমলেও কোম্পানিটির মুনাফা কিছুটা বেড়েছে। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ইপিএস ছিল ১ টাকা ৮২ পয়সা। ২০২০ সালে ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৯০ পয়সা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশের বেশি।

এবছর ডিবিএইচের ডিভিডেন্ড ও মুনাফা উভয় কমেছে। কোম্পানিটি এবছর ডিভিডেন্ড দিয়েছে ১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১৫ শতাংশ বোনাস। আগের বছর ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ২০ শতাংশ ক্যাশ ও ১৫ শতাংশ বোনাস। ২০১৯ সালে শেয়ার কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৮ টাকা ৪ পয়সা। ২০২০ সালে মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৭৬ পয়সায়। মুনাফা কমেছে ২৮ শতাংশ।