শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে (লকডাউনে) দেশের পুঁজিবাজার চালু রয়েছে। চলছে শেয়ার কেনাবেচা ও লেনদেন। তবে এসব চলছে ডিজিটাল মাধ্যমে। স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিনিয়োগকারী এবং ব্রোকারহাউজ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে। ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

তারা এখন আর ব্রোকারহাউজে না এসে ঘরে বসেই মোবাইল অ্যাপস ও মোবাইল ফোনের (কল) পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থাৎ ডিজিটালভাবে লেনদেন করছেন। ব্রোকার হাউজগুলো ফোনের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের অর্ডার গ্রহণ করছে হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে। ঝামেলাহীন খুব সহজে লেনদেন করছেন তারা। তাতে একদিকে সময় বাঁচল, অন্যদিকে মুভমেন্ট পাস নিয়ে কিংবা দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ব্রোকারহাউজে গিয়ে লেনদেন করতে হলো না।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, লেনদেন যতই সহজ হবে, বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি তত আকৃষ্ট হবেন। তিনি বলেন, স্বাভাবিক বাজারেও এই চিত্র হওয়া উচিত। ব্রোকার হাউজে গিয়ে সময় নষ্ট না করে বিনিয়োগকারীরা যাতে নিজের ইচ্ছাধীন লেনদেন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। তাহলে ব্রোকারদের ক্ষমতাও কমবে। বাজারে কারসাজিও কমে আসবে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক স্টক এক্সচেঞ্জ গড়ে তুলতে ডিজিটালাইজেশনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আইটি বিভাগসহ বেশ কিছু জায়গায় সংস্কার করছি।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, এখন ঘরে বসে ডিএসইর মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে নিজেই শেয়ার বিক্রি করছেন এমন বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ডিএসইতে ১ এপ্রিল এ বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৩০০টি। সর্বশেষ দশ কার্যদিবসে এই সংখ্যা এক হাজার বেড়ে ৬৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে এখন প্রায় ৪৫ হাজার বিনিয়োগকারী সক্রিয়ভাবে লেনদেন করছেন। আর এটি হয়েছে কেবল করোনাকালের কারণে। দিনদিন মোবাইল অ্যাপসে লেনদেন বাড়বে বলেন মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

শুধু মোবাইল অ্যাপসে নয়, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি বিধিনিষেধের সময় মোবাইল ফোনে কল দিয়ে লেনদেন করার প্রবণতাও বেড়েছে। দেখা গেছে, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) পুঁজিবাজারে ৫৫৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৪৫ কোটি টাকা বেশি। এর আগে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) লেনদেন হয়েছিল ৫১১ কোটি টাকা।

এই দুদিনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মোট লেনদেনের তিনভাগের দুইভাগ লেনদেন করেছেন। ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সময় বাঁচছে এবং কষ্ট কমছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

আইপিডিসির একজন ট্রেডার বলেন, করোনায় মোবাইল ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেনদেনের ফলে তিনজনের কাজ একাই করছেন ট্রেডাররা। ফলে ব্রোকারহাউজগুলো বর্তমান লোকবল দিয়ে দ্বিগুণ কাজ করতে পারবে।

এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের একটা ট্রেন্ড হলো সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হলে তারা ব্রোকার হাউজে ঢুকবেন। আবার লেনদেন শেষ হলে বের হবেন। উন্নত বিশ্বে বিনিয়োগকারীরা এসব করেন না, তারা নিজের প্রফেশনের ফাঁকে ফাঁকে পুঁজিবাজারের অবস্থা দেখেন। নিজের কর্মস্থলে বসেই ডিজিটালি কেনাবেচা করেন।

তিনি বলেন, আমরাও ডিজিটাল কেনা-বেচায় বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছি। ডিজিটাল লেনদেন বাড়লে বিনিয়োগকারী, ব্রোকার হাউজ এবং স্টক এক্সচেঞ্জের খরচ অর্ধেক কমবে।

এ বিষয়ে ডিএসইর উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, করোনার মধ্যে বিনিয়োগকারীদের যাতে ব্রোকারেজ হাউজে না আসতে হয়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারা যাতে যেকোনো জায়গায় বসে সহজে লেনদেন করতে পারেন, সেজন্য মোবাইল অ্যাপ চালু রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, দিন দিন ডিএসইর মোবাইল অ্যাপ জনপ্রিয় হচ্ছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম করোনাভাইরাসের এই সময়ে ব্রোকারেজ হাউজে না এসে, ডিজিটালি শেয়ার কেনাবেচার বিষয়ে বিনিযোগকারীদের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ব্রোকারহাউজে না এসে মোবাইল ফোনে লেনদেন করুন। তাতে আপনি ও আপনার প্রতিবেশী সবাই করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকবেন।