শেয়ারবার্তা ২৪ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড প্রতিষ্ঠাকালীন বিদেশি উদ্যোক্তা মালিকানা ছেড়ে দিচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি, এফএমওর হাতে থাকা ব্যাংকটির সব শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে, যা স্থানীয় উদোক্তারা কিনে নিচ্ছেন। গত ৩১ অক্টোবর নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির এ ঘোষণা দেয়।

১৯৯৬ সালে স্থানীয় উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ডাচ-বাংলা ব্যাংক। যদিও ব্যাংকটিতে ডাচ কোম্পানির শেয়ার রয়েছে এক শতাংশেরও কম। ডাচ-বাংলা ব্যাংকে বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার রয়েছে হংকংয়ের কোম্পানি ইকোট্রিম হংকং লিমিটেডের হাতে।

যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ডাচবাংলা ব্যাংক থেকে ২৩ বছর পর বিনিয়োগ পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি, যা নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ডাচ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের একটি প্রতিষ্ঠান। গত ৩১ অক্টোবর এ ডাচ প্রতিষ্ঠানটি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ৪২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়, যার বাজার মূল্য হচ্ছে ৩০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ব্যাংকটির মোট শেয়ারের শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ রয়েছে ডাচ কোম্পানিটির হাতে।

ডাচবাংলা ব্যাংকের মোট শেয়ারের মধ্যে প্রধান উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আহমেদের হাতে রয়েছে ২২ দশমিক ২১ শতাংশ শেয়ার। অপর উদ্যোক্তা আবেদুর রশিদ খানের কাছে ডাচবাংলা ব্যাংকের ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ব্যাংকটির উদ্যোক্তা মো. আবদুস সালামের কাছে ছিল ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ শেয়ার, যার শেয়ারের দাবিদার ছিলেন উদ্যোক্তা আবেদুর রশিদ খান। আবদুস সালামের মালিকানাধীন শেয়ারের দাবির বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হয়। পরবর্তী সময়ে আবদুস সালামের শেয়ার আদালতের নির্দেশে হরাইজন অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের অধীনে স্থানান্তর হয়।

হরাইজন অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান অংশীদার হচ্ছেন আবেদুর রশিদ খান। গত ২৮ জুলাই আবেদুর রশিদ খানের নামে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের যত শেয়ার ছিল, তা হরাইজন অ্যাসোসিয়েটসে স্থানান্তর করা হয়। এখন এই প্রতিষ্ঠানটি নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির সব শেয়ার কিনে নিচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বøক মার্কেটের মাধ্যমে দুই উদ্যোক্তার মধ্যে শেয়ার কেনাবেচার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।

নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানিটি বিভিন্ন দেশের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করে থাকে। দেশে স্থানীয় ব্যক্তিশ্রেণির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি যৌথভাবে বেসরকারি ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। এটি বাংলাদেশে প্রথম যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক। ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করা এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় প্রধান ভূমিকা রাখেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আহমেদ, যিনি ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বিদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার রয়েছে হংকংয়ের কোম্পানি মেসার্স ইকোট্রিম হংকং লিমিটেডের হাতে। এ প্রতিষ্ঠানটির কাছে বাংকটির ২৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। আর নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির হাতে ছিল শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার। দেশের শীর্ষস্থানীয় এ ব্যাংকটি সামাজিক দায়বদ্ধতায় ভূমিকা রাখার জন্য খ্যাতি লাভ করেছে। শিক্ষা খাতে মেধাবীদের প্রতি বছর বড় অংকের বৃত্তি দিয়ে আসছে ব্যাংকটি।

২০১১ সালে বাংলাদেশে প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হারও তুলনামূলক অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে কম। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশে। ২০১৮ সালে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নিট মুনাফা হয় ৪২০ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের নয় মাসে ব্যাংকটির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩৩৬ কোটি টাকা। ডিএসইতে ডাচবাংলা ব্যাংকের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতি শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে ৭১ টাকা ৯০ পয়সায়। ২০০১ সালে ডাচবাংলা ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, যার বর্তমান বাজার মূলধনের পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা।