শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই প্লাটফর্ম পুঁজিবাজার তথা অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে তা দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা। প্রায় দুই বছর আগে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্প প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তির জন্য একটি স্বতন্ত্র প্লাটফর্ম চালু করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে নানা কারণে লেনদেন চালু হয়নি। তবে নিয়ালকো অ্যালয়সের পর এসএমই প্লাটফম খাতে আগ্রহ বাড়ছে কোম্পানিগুলোর।

বুক বিল্ডিং ও ফিক্সড প্রাইস দুই পদ্ধতিতেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ইস্যুয়ার কোম্পানি ও কেবল ২০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে এমন ব্যক্তি কিনতে পারবেন এসব শেয়ার। এদিকে, স্বল্পমূলধনী কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করার উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বর্তমানে দেশে বীজ মার্কেটের আকার অনেক বড় হয়েছে।

মুলত কৃষিবিদ গ্রুপের দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে পরিচালিত একটি কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। ৫ জন কৃষিবিদ মিলে ২০০১ সালে এই গ্রুপের কার্যক্রম শুরু করে। মুলত কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য কৃষিবিদ গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। কৃষিবিদ সিড কৃষিবিদ গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের সুনামধন্য ছয় হাজার পাঁচশতজন কৃষিবিদ এবং কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কৃষিবিদ গ্রুপ।

কৃষিবিদ গ্রুপের অধীন মোট ২৯ টি কোম্পানি রয়েছে, যার মধ্যে কৃষিবিদ সিড একটি। বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ যার উন্নতি এবং অগ্রগতি অনেকটাই কৃষির উপর নির্ভরর্শীল। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশের অনেক খাতেরই উন্নয়ন হয়েছে যার মাঝে সবথেকে বেশি উন্নয়ন হয়েছে কৃষি খাতের।

কৃষিখাতের একটি উপখাত হচ্ছে শস্যখাত যার অন্যতম উপাদান হচ্ছে বীজ। আপনি ধান, পাট, সবজি কিংবা ফলমূল যাই চাষ করেন না কেন, বীজ যদি মানসম্মত না হয় তবে চাষি যতোই চেষ্টা করুক, ভালো ফলন কিন্তু আশা করা যায় না। তাই বীজ নিঃসন্দেহে কৃষিখাত এবং কৃষকের উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর কৃষিবিদ সিড সেই ব্যবসাটিই করে থাকে। বর্তমানে বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৩০ কোটি টাকার মতো। তবে আমরা আমাদের এই বীজের ব্যাবসা টিকে ধীরে ধীরে সম্প্রসারণের বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছি।

জানা গেছে, কৃষিবিদ সিড কোম্পানিটি কিউআইও’র মাধ্যমে অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দামে এক কোটি ১৬ লাখ শেয়ার ইস্যু করবে। বাজার থেকে কোম্পানিটি ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করবে। সফলভাবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এসএমই তথা ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলোর জন্য গঠিত স্মলক্যাপ বোর্ডে তালিকাভুক্ত হবে কোম্পানিটি। এটি হবে দেশের স্মলক্যাপ বোর্ডে তালিকাভুক্ত একটি শিল্প গ্রুপের দ্বিতীয় কোম্পানি।

কিউআইও’র মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকা কোল্ডস্টোরেজ, স্টোরেজ বিল্ডিং, বীজ গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করা হবে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬০ পয়সা। পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি ছাড়া ৩১ মার্চ, ২০২১ সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১২ টাকা ৬০ পয়সা।

সূত্র আরও জানায়, এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩ বছর ইস্যুয়ার কোম্পানিটি কোনো বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়োজিত রয়েছে এসবিএল ক্যাপিটাল লিমিটেড। মুলত ২০১৬ সাল থেকে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের বীজ উৎপাদন করে আসছে। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মো. আলি আফজাল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফ মোহাম্মদ তাসলিম রেজা । ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মুনাফা করেছে কৃষিবিদ সিড।

পরের অর্থবছরে মুনাফা করেছে ৫০ লাখ টাকা। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বাড়তে শুরু করে। কৃষিবিদ সিড লিমিটেডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ২০২০-২১ সালে ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। কিআইও’র মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের অনুমোদনে কৃষিবিদ সিডকে তালিকাভুক্তির পরের তিন বছর লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ার না দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, কৃষিবিদ সিডের উত্তোলিত অর্থ বিনিয়োগের তিনটি জায়গা হচ্ছে: আরএনডিতে বা গবেষণা, বীজ উৎপাদনেএবং সংরক্ষণ। সারাদেশে কোম্পানিটির মোট তিনটি ওয়্যারহাউজ করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হবে মাগুরায়, যা দক্ষিণাঞ্চলের বীজের যোগানে সহায়তা করবে, আরেকটি হবে দিনাজপুরে, যেটি উত্তরবঙ্গের এলাকাগুলোর জন্য বীজ উৎপাদন করবে এবং আরেকটি হবে সাভারে, যেখানে আমাদের মুল গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত কাজ আমরা সম্পাদন করবো।

পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে এই পুরো প্ল্যানটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আমরা ওই টাকার সাথে আরও টাকা যোগ করে আমাদের এঈ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। মুলত ভালো বীজ মানেই হচ্ছে ভালো ফসল। এই বীজের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি সেটি হচ্ছে উন্নত জাত। কৃষিবিদ সিডের নিজস্ব আরএনডি বা গবেষণাগার রয়েছে।

যে গবেষণার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন মাঠ-ফসলের প্রায় ৬৬ রকমের উন্নত জাতের বীজ উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছি। আর সে সকল উন্নত জাতের বীজই আমরা মাঠ পর্যায়ে দিয়ে থাকি, যা কৃষকরা পেয়ে থাকেন। উচ্চফলনশীল যাতের ফসলের বীজ পুরোটাই আমরা দেশে উৎপাদন করে থাকি। এছাড়াও হাইব্রিড জাতের বীজের একটা বড় অংশ বা ৮০ শতাংশ আমরা দেশে উৎপাদন করে থাকি। ২০ শতাংশ আমরা আমদানি করে থাকি।

কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কৃষিবিদ সিডের চেয়ারম্যান ড. আলী আফজাল সম্প্রতি বলেন, বাংলাদেশের বীজের বাজারে অনেকেই ব্যবসা করে থাকে। বড়-বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, দেশীয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অনেকেই সিডের ব্যবসা করছে। সিডের এই ব্যবসায় আজ থেকে ৪০ বছর আগে বড় কোনো কর্পোরেট হাউজ কিংবা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ছিল না।

দেশের চাষিরাই বীজ সংরক্ষণ করতো, আবার তারাই মাটির পাত্রে করে বীজ বিক্রয় করতো। সময়ের ব্যবধানে এ ব্যবসায় বড় বড় প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে এবং ব্যবসার উন্নতি হয়েছে। দেশে সিডের মার্কেট বা বীজের বাজারের আকার এখন অনেক বড়। এই বাজারের আমাদের অংশ ২ থেকে ৩ শতাংশের মতো। তবে আশা করছি খুব সহসাই আমরা এ ব্যবসার সম্প্রসারণ করে বাজারের ৫ থেকে ৬ শতাংশ চাহিদা পুরণে সফল হবো। তবে সময়ের ব্যবধানে এ ব্যবসায় বড় বড় প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে এবং ব্যবসার উন্নতি হয়েছে। দেশে বীজের বাজারের আকার এখন অনেক বড়। প্রতিবছরই এই বাজারের আকার বাড়ছে।

আমরা আমাদের এই বীজের ব্যাবসাটিকে ধীরে ধীরে সম্প্রসারণের বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছি। তবে সিড ব্যবসা এমন এক ব্যবসা যা চাইলে-ই রাতারাতি বড় করা সম্ভব নয়। আগে প্রযুক্তির উন্নয়ন করতে হবে, তারপর এই ইন্ডাস্ট্রি বড় করতে হবে। আর আমাদের ব্যবসাও খুব বেশি দিনের নয়, ২০১৬ সালে আমরা যাত্রা শুরু করেছি।

এখন আমরা যেহেতু ভ্যারাইটি হাতে পেয়েছি, এখন আশা করছি সহসাই খুব বড় করতে পারবো। এজন্যই আমরা পুঁজিবাজারের এসেছি, বাজার থেকে কিছু বিনিয়োগ পেলে আমরা এ ব্যবসার সম্প্রসারণ করবো। আশা করি দেশের বীজ বাজারের ৫ থেকে ৬ শতাংশের চাহিদা আমরা পুরণ করবো। বার্ষিক টার্নওভার ৩০ কোটি থেকে ১০০ কোটিতে চলে যাবে বলে আমরা মনে করি।

এছাড়া এসএমই প্ল্যাটফর্মকে পুঁজিবাজারে সংযুক্ত করার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্যারকে। এসএমই আসলেই বাজারের জন্য খুবই ভালো একটি উদ্যোগ।