মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান : নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৫ কোম্পানি তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে না। এতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনার অমান্য করা হচ্ছে। অন্যদিকে সঠিক সময়ে কোম্পানির কাছ থেকে কোম্পানির আয়-ব্যয়, মুনাফা ইত্যাদি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের জানানো হচ্ছে না। এতে স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তির ফায়দা হাসিল হলেও অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিএসইসির জারি করা নোটিফিকেশনের অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ছাড়া অন্যান্য ইস্যুয়ার কোম্পানিকে তাদের প্রথম প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদন ৪৫ দিন এবং তৃতীয় প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন ও স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হবে। অন্যদিকে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রথম প্রান্তিক ৯০ দিন এবং তৃতীয় প্রান্তিক ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হবে।

জানা গেছে, ছয় মাস পেরুলেও এখনও ৫টি কোম্পানি তাদের সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরের বার্ষিক হিসাব ও ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারেনি। যে কারণে পিছিয়ে পড়েছে কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদনও। এ নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ছয় মাস পেরুলেও ঠিক কোন কারণে কোম্পানিগুলো এখনও আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে না জানতে চাইলে কোম্পানিগুলো বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র ওপর দায় চাপাচ্ছেন। কোম্পানিগুলো বলছে, সঠিক সময়ে আইডিআরএ’র কাছ থেকে ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট না পাওয়ায় সময়মতো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারছেন না তারা। আর আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কোম্পানিগুলো বেশিরভাগ সময় ত্রুটিপূর্ন আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে তা আবারও পূনর্মূল্যায়নের জন্য পাঠাতে হয়। মূলত কোম্পানিগুলোর ত্রুটিপূর্ন আর্থিক প্রতিবেদনের কারণেই ভ্যালুয়েশন কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

জানা গেছে, তালিকাভুক্ত ১২টি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মধ্যে ৫ কোম্পানি বার্ষিক হিসাব প্রকাশ ও বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারেনি। সেগুলো হলো- ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ও সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স।

জানতে চাইলে একাধিক কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, আমরা অনেক আগেই ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরের রিপোর্ট আইডিআরএ’তে জমা দিয়েছি। সেখান থেকে ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হবে। তারা আরও জানান, সাধারণত বেশির ভাগ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির হিসাব আইডিআরএ’র বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটির সদস্য ড. মুহাম্মদ সোহরাব হোসেইন দেখে থাকেন এবং তিনিই ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট দিয়ে থাকেন। কিন্তু তিনি কেন এই ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট সঠিক সময়ে দিতে পারছেন না তা বলতে পারবো না।

রুপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব আমিরুল ইসলাম মুকিত বলেন, আইডিআরএ কর্তৃক ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট কোম্পানি এখনও পায়নি। যে কারণে এখনও বার্ষিক হিসাব প্রকাশ ও ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, কোম্পানির বছরের হিসাব আইডিআরএ’র সোহরাব সাহেব দেখছেন। আমাদের হিসাবটা তার কাছে সিরিয়ালেই আছে। আশা করি শিগগিরই ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট পেয়ে যাবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর আরেক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, প্রায় এক মাস আগে কোম্পানির ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ বছরের হিসাব আইডিআরএতে জমা দিয়েছি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে এখনও ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট পাইনি। যে কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে আশা করি খুব শিগগিরই পেয়ে যাবো। তিনি আরও বলেন, আইডিআরএ’র সোহরাব সাহেব ছাড়াও আরও ৩/৪জন জীবন বিমা কোম্পানির হিসাব দেখে ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট দিয়ে থাকে। কিন্তু এতো সংখ্যক লোকবল থাকার কারণেও কেন ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট দিতে আইডিআরএ দেরি করে তা বলতে পারবো না।

তবে আইডিআরএ’র বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটির সদস্য ড. মুহাম্মদ সোহরাব হোসেইন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, কোম্পানিগুলোর বার্ষিক হিসাব অনেক সময় অসমাপ্ত থাকে। সেগুলো আবার জমা নিতে হয়। যে কারণে কিছুটা সময় লাগে। তবে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব কোম্পানিগুলোর ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট দিয়ে দিতে।

সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ