up trendশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: পুঁজিবাজারে দীর্ঘ পতন প্রবণতা থেকে বেরিয়ে স্থিতিশীলতার পথে হাঁটছে শুরু করছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতার আভাস দিচ্ছে। প্রতি কার্যদিবসেই বাড়ছে মূল্য সূচক ও দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট কিছুটা দূর হওয়ায় এমন চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে।

পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা পেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ও যেভাবে শেয়ার কিনছেন তাতে ধীরে ধীরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ঈদের আগে প্রফিট বের করার প্রত্যাশাও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে। তাই ঈদের আগের এই সময়টা বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করছেন তারা।

এছাড়াও বাজার উন্নয়নে সরকার সহ নীতি নির্ধারকরা নানামুখী পদক্ষেপে বাজার ঘুরে দাঁড়াতো শুরু করছে। এ ধারা টানা অব্যাহত থাকলে পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা ফের পুঁজিবাজারমুখী হবে। এতে নতুন লেনদেনের পরিমান বাড়বে। আর সবদিক থেকে পুঁজিবাজারে সুখবর আসছে। এ সুখবরের ধারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ধরে রাখতে পারলে বাজার দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবো। তাই যে কোন মুল্য বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে লেনদেন বাড়ানো উচিত।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করলে বাজার কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। তবে বাজার ধীরে ধীরে বাড়ছে। এটা বাজারের জন্য ভাল দিক। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যদি এ সময়ে তাদের অংশগ্রহণ অধিকহারে বাড়ায় তাহলেই আগামী দিনগুলোতে বাজার ভালোর দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বুঝে শুনে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও লোকসান কাটাতো পারবো। তবে যারা কৌশলী তারা এ বাজার থেকেই মুনাফা করতে পারবেন। একইসঙ্গে তারা বিনিয়োগকারীদের সাবধানতার সঙ্গে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন।

বর্তমান দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনীতি স্বাভাবিক থাকার পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ নেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। এরই মধ্যে সরকার ব্যক্তিগত ও দলীয় বড় বিনিয়োগকারী এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী হয়ে বিনিয়োগের তাগাদা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

dse indexবাজারের চিত্র দেখলে বোঝা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় পুঁজির বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরে এসেছেন। তারা ধীরে ধীরে নতুন করে বিনিয়োগ করছেন। লেনদেনের পরিমান আস্থে আস্থে বাড়ায় বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারছেনা না। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কৌশলী ভাবে পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করছেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, পতনের পর একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে এটাই নিয়ম। ১৯৯৬ সালের পতনের পর বাজার স্বাভাবিক হতে প্রায় আড়াই বছর সময় লেগেছিল। ২০১০ সালের পতনের পর শেয়ারবাজারের অস্থিতিশীল আচরণ সাড়ে পাঁচ বছর পার করেছে। নিয়ম অনুযায়ী এখন বাজার এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। সরকার এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে ভেতরে ভেতরে পুঁজিবাজার নীতি নির্ধারকরা কাজ করছে বলে শোনা যাচ্ছে। বাজারে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় হয়েছেন। হয়তো সরকারের নির্দেশেই তারা সক্রিয় হয়েছেন।

dse-1তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজার একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ স্থান। বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নির্ভর করে বাজার চিত্রের উপর। বাজারে যখন টানা সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধি পায় তখন আপনা আপনি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়ে যায়। সম্প্রতি বাজারের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে সহজেই অনুমান করা যায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা হলেও বেড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিশ্চিুক ডিএসই এক পরিচালক বলেন, পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে সরকার বেশ আন্তরিক। রাজনৈতিক অবস্থাও বেশ স্থিতিশীল হয়েছে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরে আসছেন। বেশ কিছু দিন ধরে বাজারে অস্বাভাবিক উত্থান বা পতনের ঘটনা ঘটছে না। ফলে বাজারে ছোট বিনিয়োগকারীদেরও আস্থা বাড়ছে।

এদিকে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের মতে, পুঁজিবাজারে বর্তমানে যে অবস্থায় বিরাজ করছে এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির তথ্য পর্যালোচনা করে বিনিয়োগ করা উচিত। তথ্য পর্যালোচনা না করে দুর্বল মৌল ভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করলে লোকসানের পরিমাণ না কমে উল্টো বেড়ে যেতে পারে।

dse-2ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বর্তমানে বাজার যে আচরণ কারছে তাতে বিনিয়োগকারীরা বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করলে লোকসান কিছুটা কমিয়ে আনতে পারবেন। তবে ২০১০ সালের ধসে বিনিয়োগকারীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুরোপুরি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পুঁজিবাজার একটি ঝুকিপূর্ণ বিনিয়োগের স্থান। কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই কোম্পানির সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নিতে হবে। পুঁজিবাজার ঝুকিপূর্ণ বাজার হলেও সচেতনতার সঙ্গে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা লাভের মুখ দেখবেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সুত্রে জানা যায়, বাজারকে স্বাভাবিক করতে সম্প্রতি বিএসইসি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই লোকসান কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তা না হলে যেসব বিনিয়োগকারী না বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে।

একরাম হোসেন তুষার নামে এক বিনিয়োগকারী লিখেছেন, পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগমুখী শুরু করার কারনে বাজার চাঙ্গা হতে বাধ্য।  এছাড়া সরকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব মহল বাজার স্থিতিশীল করতে আন্তরিক। বাজার অব্যশই ভাল হবে। বর্তমান বাজার প্রেক্ষাপটে বস্ত্র খাত , জ্বালানী খাত, ওষুধ-রসায়ন খাতের কোম্পানির শেয়ার ভাল হবে। ধীরে ধীরে গড় লেনদেনের পরিমাণ বেশ ভালো হবে । এ অবস্থা চলতে থাকলে আশা করি শিগগিরই বাজার স্থিতিশীল হবে।

আসিফ হাসান নামের অন্য এক বিনিয়োগকারী বলেন, ২০১০ সালে আমি প্রায় ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। এক পর্যায়ে আমার মূলধনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এরপর ক্রমে শেয়ারের দাম কমে দুই লাখ টাকার নিচে চলে আসে। তবে গত কয়েক দিনের সূচকের উর্ধ্বমুখীর কারণে লোকসান কিছুটা কমে এসেছে। বাজার এমন আচরণ করলে আশা করছি লোকসান পুরোটা উঠে না আসলেও অনেকটা কমে আসবে।

শরিফুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী লিখেছেন, বর্তমান বাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে।  বাজার যাতে নিয়মিত এমন আচরণ করে সেজন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে লেনদেন বাড়াতো কার্যকরী ভুমিকা নিতে হবে।

মফিজুর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী লিখছেন, বাজার মনে হচ্ছে ভাল হবে। কারন সরকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব মহল বাজার স্থিতিশীল করতে আন্তরিক। এছাড়া জ্বালানী ও সিমেন্ট টেক্সটাইল খাত ভাল হবে। আমার মনে হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ শুরু করছে ধীর গতিতে। যা বাজারের জন্য ভার দিক।

Share Barta 24 | Latest Share News