শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: নেতৃত্বের দুর্বলতায় একসময়কার ভালো মানের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন কাপিটাল লিমিটেড টানা লোকসানের মুখে। কোম্পানিটির ভবিষ্যত নিয়ে বিনিয়োগকারীরা রয়েছেন অন্ধকারে। টানা চার বছর ধরেই একটানা লোকসান দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ধারাবাহিকভাবে কমছে ঋণ, আমানত ও পরিচালন আয়। তবু ও বাড়ছে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের শেয়ারদর বেড়েছে। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। তবে লোকসানী কোম্পানির হু হু করে শেয়ার দর বাড়া নিয়ে সবার মাঝে সন্দেহ দেখা গেছে।

এমনকি দৈনন্দিন অর্থের জোগান দিতে হচ্ছে ঋণ কওে চলছে ইউনিয়ন ক্যাপটাল। এসব মুলে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে ডুবতে বসেছে আর্থিক খাতের কোম্পানি ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড। ঋণের নামে বের করে নেয়া অর্থ ফিরছে না কোম্পানিটিতে। এখন আমানতকারীদের অর্থও ফেরত দিতে পারছে না কোম্পানিটি।

নেতিবাচক দক্ষতায় আমানতকারীরাও মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। গত চার বছর ধরেই কমছে প্রতিষ্ঠানটির আমানতের পরিমাণ। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে বিনিয়োগ ও সুদ আয়। ফলে সার্বিকভাবে কমে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা পর্যন্ত।

এছাড়া ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড সর্বশেষ চার বছরেরও বেশি সময় ধরে লোকসানে রয়েছে। সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। এমনকি গত হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি লোকসান গুনতে হয়েছে কোম্পানিটিকে। মূলত কোম্পানির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিনদিন বড় হওয়ায় এ লোকসানের বোঝাও বাড়ছে। মৃুলত চৌধুরী মনজুর লিয়াকতের দায়িত্ব পালনকালে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের লোকসান হয়েছে ১৭৪ কোটি টাকার বেশি।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ২৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড় লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার। সপ্তাহ শেষে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৬ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এদিকে সর্বশেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বা ২০ পয়সা কমে প্রতিটি সর্বশেষ ১১ টাকা ৭০ পয়সায় হাতবদল হয়, যার সমাপনী দর ছিল ১১ টাকা ৭০ পয়সা। দিনজুড়ে ৯০ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯০টি শেয়ার মোট ২ হাজার ১৩২ বার হাতবদল হয়, যার বাজারদর ১০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। দিনভর শেয়ারদর ১১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়। এক বছরে শেয়ারদর সাত টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৩০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের পাঁচ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। আর ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের পাঁচ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়, যা তার আগের বছরে ছিল ১০ শতাংশ বোনাস।

আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৯৯ পয়সা এবং এনএভি দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৬১ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল যথাক্রমে এক টাকা ৪৪ পয়সা ও ১৭ টাকা ৮০ পয়সা। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার টাকা, যা তার আগের বছর একই সময় ছিল ২০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

কোম্পানিটি ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে। ২০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ১৭২ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ঘাটতির পরিমাণ ৪৪৬ কোটি ২১ লাখ টাকা।

ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, কোম্পানির মোট ১৭ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৩টি শেয়ার রয়েছে। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ৩৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক ২০ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে বাকি ৪৬ দশমিক ৭১ শতাংশ শেয়ার।